২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:৪৩:৩৬ পূর্বাহ্ন


ফেনী বজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী দুই ভাই গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৫-২০২৩
ফেনী বজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী দুই ভাই গ্রেফতার ফেনী বজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী দুই ভাই গ্রেফতার


ফেনী সদর থানা এলাকায় নিজ স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য নির্মম ও নৃশংসভাবে গুরুতর আঘাতের মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী স্বামী লিটন অরফে বাবুল এবং তার আপন ভাই মোঃ সুমন’কে দীর্ঘ ১৮ বছর পর কুমিল্লা হতে আটক করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাত ২টায়  কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতারকৃতরা হলো: লিটন বাবুল (৩৭) ও মোঃ সুমন (৩২), (আপন দুই ভাই), তারা ফেনী জেলার থানা ফেনী সদর থানার নোয়াবাদ এলাকার মৃত আতু মিয়ার ছেলে।

র‌্যাব জানায়, গত ২০০০ সালে ভিকটিম ফাতেমা আক্তার ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক আসামী লিটন অরফে বাবুল এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের ঘরে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। বিবাহের পর থেকে স্বামী লিটন অরফে বাবুল ভিকটিমকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। গত (২০ মে ২০০৪) গৃহবধূর স্বামী লিটন বাবুল ও তার ভাই সুমন এবং অন্যান্য সহযোগী আত্মীয়স্বজনরা তার পিতার নিকট হতে ১০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করলে, টাকা প্রদানে তার গরিব পিতার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান। ওই সময় স্বামী লিটন বাবুল ও তার ভাই সুমন এবং অন্যান্য সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গৃহবধূকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাথি ও কিলঘুষি দিয়ে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করে। পরবর্তীতে তার দুই কন্যা সন্তানকে রেখে গৃহবধূ মৃত ভেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় লোকজন মহাসড়কের পাশ থেকে গৃহবধীকে উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ভিকটিম শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও দীর্ঘ ১৮ বছর এই অমানবিক নির্যাতনের যন্ত্রনায় ভুগছেন।

এ ঘটনায় গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফেনী সদর থানায় স্বামী লিটন অরফে বাবুল ও তার আপন ভাই সুমন অর্থাৎ দেবর কে প্রধান আসামী করে এজাহার নামীয় সর্বমোট ৫ জনকে এবং আরো অজ্ঞাতনামা ৭/৮  জনকে আসামী করে ফেনী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-২১, তারিখ-১২/০৬/২০০৪। মামলাটি অমানবিক ও পাশবিক চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সে সময় সারাদেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

মামলার এজারহার নামীয় আসামী লিটন বাবুল এবং সুমনেরবিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে গৃহবধূর দেবর সুমন জামিনে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং মূল আসামী স্বামী লিটন কখনোই গ্রেপ্তার হন নাই। আসামীরা দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ বিচারিক আদালত আসামীদের অনুপস্থিতিতে ভিকটিম ফাতেমা আক্তারকে যৌতুকের জন্য হত্যার উদ্দেশ্যে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করার অপরাধে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ফেনী ২২ মার্চ ২০১১ গৃহবধূর স্বামী আসামী লিটন অরফে বাবুল এবং মোঃ সুমন’কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমান প্রদান করেন।

র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত নারী নির্যাতন মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত নারী নির্যাতন মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে ছদ্মনাম ধারণ করে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানা এলাকায় অবস্থান করছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামীরা জানায়, তারা বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ১০ হাজার অর্থদন্ড অনাদায়ে ৬মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় , তারা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে ধারণ করে প্রায় দীর্ঘ ১৮ বছর নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে প্রথমে চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পেশায় আত্মগোপন করে থাকলে সর্বশেষ কুমিল্লা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কুমিল্লায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন এবং অটোরিকশা চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করছেন। এছাড়াও গোয়ান্দা তথ্যের ভিত্তিতে আরো জানা যায় যে, ওই এলাকায় তারা মাদকের খুচরা ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ পরিচিত।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।