২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১০:০৯:৩৪ অপরাহ্ন


জলবায়ু ও নদীর ভালোবাসায় শুরু হচ্ছে ‘‘নদী রক্স’’
তামান্না হাবিব নিশু
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০২-২০২২
জলবায়ু ও নদীর ভালোবাসায় শুরু হচ্ছে ‘‘নদী রক্স’’ জলবায়ু ও নদীর ভালোবাসার টানে জনপ্রিয় ৭টি ব্যান্ড নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ‘‘নদী রক্স’’।


জলবায়ু ও নদীর ভালোবাসার টানে জনপ্রিয় ৭টি ব্যান্ড নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ‘‘নদী রক্স’’।

মঙ্গলবার (২২ ফ্রেব্রুয়ারি)  ভার্চুয়্যালি এক জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে এই ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।

শারমিন সুলতানা সুমি’র ভাবনায় ‘‘নদী রক্স- জলবায়ু বাঁচাতে চলো নদীর কাছে যাই’’- এই স্লোগানে দেশে প্রথমবারের মতো নদী আর সঙ্গীতকে এক করে এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সল্ট ক্রিয়েটিভস। আর এই উদ্যোগটিকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে সুইজারল্যান্ড দূতাবাস এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। জলবায়ু ও নদী রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করতে এবং তরুণ প্রজন্মকে নদী সম্পর্কে সচেতন করতে দেশের সকল নদীর নামে একদিন, একটি করে গান থাকবে- এমন লক্ষ্য নিয়েই উদ্যোগটি হাতে নিয়েছে সল্ট ক্রিয়েটিভস।

‘‘নদী রক্স’’ এর ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জী, স্কয়ার গ্রুপের ডিরেক্টর অঞ্জন চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ফ্রেন্ডশিপ এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান, ‘নদী রক্স’ উদ্যোগের ইনিশিয়েটর ও সল্ট ক্রিয়েটিভস এন্ড ইভেন্টস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর শারমিন সুলতানা সুমি এবং দেশের ৭টি জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্ক, ক্রিপটিক ফেইট, আরবোভাইরাস, চিরকুট, বাংলা ফাইভ, এফ মাইনর ও স্মুচেস।

‘‘নদী রক্স’’-এর সার্বিক বিষয় নিয়ে শারমিন সুলতানা সুমি বলেন, “জলবায়ু আর নদী বাঁচাতে, দেশের তরুণ সমাজকে নদীর প্রতি আকৃষ্ট করতে নদী রক্স নামে একটি উদ্যোগ শুরু হতে যাচ্ছে। যার প্রথম সিজনে দেশের ৭টি জনপ্রিয় ব্যান্ড দেশের ৭টি নদী পদ্মা, কুশিয়ারা, সাঙ্গু, চিত্রা, পশুর, ডাহুক ও বুড়িগঙ্গা নিয়ে তৈরি করবে ৭টি গান এবং সেই নদীগুলোতেই চিত্রায়ণ হবে গানগুলোর। পরবর্তী সময়ে এই ব্যান্ডগুলো নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে নদী রক্স মেগা কনসার্টসহ নদীগুলোকে ঘিরে বিভিন্ন রকম ক্রিয়েটিভ পরিকল্পনা রয়েছে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বিনিময় কালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন (এম.পি.) বলেন, আগের তুলনায় মানুষের মাঝে নদীর প্রতি ভালোবাসা অনেকটাই কমে গেছে। অথচ এই নদীকে ঘিরে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান; ও সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধি করে এবং নদী আমাদের দেশের পরিচয়ও বহন করে থাকে। দেশের মধ্যে ১৩২০টি নদী থাকলেও বর্তমানে হারাতে হারাতে ৭২০টিতে পৌঁছেছে। আমাদের এই অমূল্য সম্পদ নদী সম্পর্কে তরুণ ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে জাগ্রত করতে হবে। তার জন্য সঙ্গীত একটি বড় মাধ্যম হতে পারে। তাই নদী বাঁচাতে নদী রক্স-এর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যমনিও হতে পারে এই “নদী রক্স”।

বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন (এম.পি.) বলেন, আগের মতো নদীর বর্তমান অবস্থা নেই। অনেক নদীই আজ হারাতে বসেছে। তাছাড়া প্রতিনিয়তই আমাদের অসচেতনতার কারণে বর্জ্য ও কল-কারখানার পানি দিয়ে নদীকে দূষণ করছি। সেই দূষণকে রক্ষা করতে নদী রক্স উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে আগে নদীকে রক্ষা করতে হবে। তার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একই সাথে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। নদী রক্ষায় নদী রক্সের সার্বিক সহযোগিতায় পাশে থাকবে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সুইজারল্যান্ড দূতাবাস বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও বাংলাদেশের সাথে সুইজারল্যান্ডের কুটনৈতিক সম্পর্ক খুবই ভালো। বাংলাদেশর ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের নদীকে বাঁচাতে এবং তরুণ প্রজন্মকে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে উৎসাহী করতে নদী রক্সের সাথে কাজ করছি। নদী রক্স সত্যিই একটি ব্যতিক্রমধর্মী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে এই উদ্যোগটি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (এম.পি.) বলেন, জলবায়ু ও নদী আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এই নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সভ্যতা ও জীবনের পথ চলা। কিন্তু আমাদের এই নদী ও জলবায়ুকে যদি আমরা রক্ষা করতে না পারি, তাহলে আজ ও আগামীর প্রজন্ম কিভাবে একটি বসবাসযোগ্য পৃথিবী পাবে। তাই সঙ্গীতের শক্তিতে জলবায়ু ও নদী বাঁচাতে আসুন নদী রক্সের মাধ্যমে আমরা এক সাথে কাজ করি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। কিন্তু শহরের যান্ত্রিক বর্জ্য বুকে ধারণ করে সেই নদীগুলোরই আজ বেহাল দশা। শুধু কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকরাই নয়, নদী ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বস্তরের মানুষ, প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীকে একসাথে মিলে কাজ করতে হবে। আমি আশা করি, সঙ্গীতের শক্তিকে ব্যবহার করে নদী ও জলবায়ু বাঁচাতে তরুণদেরকে সচেতন করে তোলার এই উদ্যোগ সফল হবে এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সাফল্য অর্জন করবে।

ইউএনডিপি এর রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, বাংলাদেশে কত নদী রয়েছে তা নতুন প্রজন্ম কিছু্ই জানে না। আর যতটুকুই জানে তা নদীর ছবি দেখে। তারা হয়তো নদীর কাছেও যায় না। আমরা যারা গ্রাম-বাংলায় বড় হয়েছি তারাই জানি নদীর গুরুত্ব ও সৌন্দর্য্য কতখানি। তাই নদীকে বাঁচাতে এই উদ্যোগ অসাধারণ। আশা করি, এই কাজ শুধু দেশেই নয় আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিতি লাভ পাবে। নদীর সাথে জলবায়ুর একটা যোগসূত্র রয়েছে সেটাও প্রশংসার বিষয়।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নদীর উপরে নির্ভর করছে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা, আমাদের পুষ্টি, খাদ্য ও কৃষি। তাই নদী বাঁচানো আমাদের দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাছাড়া নদী রক্স-এর এই উদ্যোগটি আমাদের তরুণদের মাঝে নদী সম্পর্কে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করতে সহায়তা করবে।

ফ্রেন্ডশিপ (এনজিও)-র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান, দেশে প্রথমবারের মতো সঙ্গীতের মাধ্যমে নদীকে বাঁচাতে নদী রক্সের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের রক্তের সাথে মিশে আছে নদী। নদীকে একটি শিল্পও বলা যেতে পারে। দেশের প্রতিটি মানুষই কোন না কোন ভাবে নদীর সাথে জড়িত। শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয় নদী দূষণ মুক্ত রাখতেও ভূমিকা পালন করবে নদী রক্স-এর উদ্যোগ।

উল্লেখ্য, গতবছর ডিসেম্বর মাস থেকে নদী রক্স-এর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে এবং পরবর্তী ৮ মাস ধরে এর কাজ চলবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। তাছাড়া জলবায়ু, নদী আর সঙ্গীতকে এক করে এমন সময়োপযোগী উদ্যোগ দেশে এই প্রথম।

রাজশাহীর সময় /এএইচ