২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:০৩:৫৯ অপরাহ্ন


ঈদ মাঠ নয়, সংঘর্ষের নেপথ্যে নারীর ফাঁদে আদায়কৃত অর্থের ভাগবাটোয়ারা!
পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
ঈদ মাঠ নয়, সংঘর্ষের নেপথ্যে নারীর ফাঁদে আদায়কৃত অর্থের ভাগবাটোয়ারা! ফাইল ফটো


ঈদ মাঠ সংস্কারের টাকা নয়, পুঠিয়ায় স্থানীয় আ'লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের নেপথ্যে নারীর ফাঁদ দিয়ে জরিমানার নামে আদায়কৃত অর্থ ভাগ বাটোয়ারা। সংঘর্ষের পর থানায় পৃর্থক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ওই ঘটনার পর থেকে গ্রামের বেশীর ভাগ পুরুষরা গ্রেফতার আতঙ্কে আত্নগোপনে রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম ঘুরে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সাথে।

সাদেক আলী নামের একজন গ্রামবাসী বলেন, সাবেক জিউপাড়া ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি ফজলুল হক মেম্বার ও ওয়ার্ড আ'লীগের যুগ্মসম্পাদক ডাক্তার ফজলুর রহমান আগে থেকেই দলীয় ভাবে বিভক্ত। গত ২৯ মার্চ এই গ্রামের এক স্বামী পরিত্যক্তা নারী কৌশলে বিয়ের দাবি নিয়ে প্রতিবেশী আফসার সরদারের ছেলে কাঠ ব্যবসায়ি জমশেদ আলীর বাড়িতে গিয়ে উঠে। আর ওই নারীর পক্ষে সকল তদারিক করেন সাবেক ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি ফজলুল হক মেম্বার। আর জমশেদ আলীর পক্ষ নেয় ডাক্তার ফজলুর রহমান। বিষয়টি থানা গড়িয়ে গত সপ্তাহে সাবেক সাংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দারার বাড়িতে পোপনে সালিশ বসানো হয়। সেখানে ওই মেয়ের নামে সাড়ে তিন লাখ ও আনিষাঙ্গিক খরচ বাবদ আরো দেড় লাখ টাকা জমশেদ আলীর নিকট থেকে আদায় করা হয়।

ওই নারীর মা বলেন, গত সপ্তাহে সাবেক সাংসদ ও জেলা আ'লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা'র বিড়ালদহ গ্রামের বাড়িতে দুই পরিবার নিয়ে সালিশে বসে। সালিশে আমার মেয়েকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আপোষ করিয়ে দেয়। এ সময় কিছু কাগজপত্রে মেয়ে ও পরিবারের দুইজনের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আর সালিশের পরেরদিন মেয়ে তার নানীর বাড়ি বেড়াতে চলে গেছে। তিনি বলেন, জরিমানায় আদায়কৃত প্রায় অধেক অর্থ পুলিশ, সাংবাদিক ও এলাকার নেতাদের দিতে হয়েছে। তবে কাকে কত দেয়া হয়েছে সেটা তিনি জানেন না বলে জানান।

এবাদুল হক নামে সৈয়দপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ি বলেন, শুধু ঈদ মাঠ সংস্কার বিষয়ে ওইদিন দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এর আগে এক নারী ঘটিত বিষয়ের জের রয়েছে। আর সে কারণে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে এই সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। তবে ওই নারীর সালিশে আদায়কৃত অর্থ লেনদেন বা ভাগ-বাটোয়ারার বিষয় আছে কিনা তা তিনি নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, এই সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় উভয়পক্ষ তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। আর মামলায় প্রায় ৫০ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা আরো শতাধিক অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার পর গ্রেফতার এড়াতে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ মানুষ আত্নগোপনে রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর বাজারের একজন ব্যবসায়ি বলেন, ঈদ মাঠ সংস্কারের অর্থ আদায় মূলত এটা একটা অযুহাত। প্রকৃতপক্ষে ফজলুল হক মেম্বারের নেতৃত্বে এই গ্রামে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রটি অর্থ আছে এমন ব্যক্তিদের কাছে ওই নারীকে ফাঁদ হিসাবে ব্যবহার করেন। এরপর মোটা অংকের অর্থ আদায় করেন। এর আগেও এভাবে একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এবার আদায়কৃত অর্থ অপর পক্ষকে না দেয়ায় সংঘর্ষ হয়েছে।

এ বিষয়ে নারী কেলেঙ্কারিতে অর্থ জরিমানা প্রদানকারী জমসেদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাবেক এমপির বাড়িতে টাকা দিয়েই মিমাংসা করা হয়েছে। এর বেশী কিছু বলতে চাচ্ছি না।

অপরদিকে ওয়ার্ড আ'লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডাক্তার ফজলুল রহমান পলাতক ও ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তার যোগাযোগ করা যায়নি।

তবে সাবেক ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি ফজলুল হক মেম্বার বলেন, এলাকার লোকজন ধারনা করছেন ওই নারীর পেছনে আমার হাত রয়েছে। আর এই কারণে তারা হামলা চালিয়েছে। তবে শুনেছি সালিশে উভয়পক্ষ মোটা অংকের অর্থে সমঝোতা হয়েছে। কোথায় আর কত টাকায় সেটা হয়েছে তা তিনি জানেন না।

এদিকে নারী ঘটিত সালিশের বিষয়ে জানতে সাবেক সাংসদ ও জেলা আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, ঈদ মাঠ সংস্কার নিয়ে দুই গ্রুপের সংর্ঘষের ঘটনায় থানায় পৃর্থক মামলা হয়েছে। তবে এই সংঘর্ষের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন উপজেলার সৈয়দপুর ঈদগাঁ মাঠ সংস্কারের অর্থ আদায়ের নামে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর ৪ জনকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পর ওই গ্রামজুড়ে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।