১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০১:০১:৪০ অপরাহ্ন


আরএমপি’র পুলিশের সেই আলোচিত এসআই আলী ফেনসিডিলসহ আটক
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৪-২০২৩
আরএমপি’র পুলিশের সেই আলোচিত এসআই আলী ফেনসিডিলসহ আটক আরএমপি’র পুলিশের সেই আলোচিত এসআই আলী ফেনসিডিলসহ আটক


রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সেই আলোচিত এসআই মোহাম্মদ আলীসহ দুইজন মাদক মাদক কারবারি ফেনসিডিলসহ আটক হয়েছেন।

গত ১৮ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে সিরাজগঞ্জ থানার মাসুমপুরস্থ মৌসুমি সিনেমা হলের সামনে থেকে তাদের আটক করে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি অভিযানিক দল। এসময় ২০০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক বহন কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। ১৮ এপ্রিল তারা আটক হলেও বিষয়টি  জানাজানি হয় ২৪ এপ্রিল দুপুরে।

গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আলী মোল্লা (৩৭) নাটোর জেলার কানাইখালী এলাকার সৈয়দ আলী মোল্লার ছেলে। অপরজনের নাম ইসমাইল হোসেন সুমন (৩২)। তিনি রাজশাহী কাশিয়াডাংগা থানার হড়গ্রাম নতুন পাড়া এলাকার আকতার হোসেনের ছেলে।

মোহাম্মদ আলী আরএমপি’র সর্বশেষ কাশিয়াডাংগা থানার সেকেন্ড অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক বিভাগীয় মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী তার দায়ীত্ব পালনের সময় ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন। সেসময় দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর অন্তত দুই কোটি টাকার আটক বাণিজ্যের অভিযোগ ছিলো তাঁর বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে অভিযোগ পড়ে আলীর বিরুদ্ধে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বদলি করে রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশে ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু বদলির আদেশ পেয়েও এসআই মোহাম্মদ আলী সেসময় নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে সমানে আটক বাণিজ্য করে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সর্বশেষ রোজি খাতুন নামের এক মাদক কারবারিকে আটকের পর ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আরএমপি সূত্র মতে, নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার জ্যেষ্ঠ এসআই হিসেবে মোহাম্মদ আলী সেকেন্ড অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় চার বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। দিনের পর দিন আটক বাণিজ্যের নামে আঙুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হয়েছেন এসআই আলী।

দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পরে মাদকের এলাকা বলে পরিচিত কাশিয়াডাঙ্গাজুড়ে ব্যাপক আটক বাণিজ্যে নামেন ওই কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে, এই অভিযান শুরুর পর থেকেই তিনি আটক বাণিজ্যের নামে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই টাকা দিয়ে তিনি কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় জমি কেনাসহ আরো কিছু সম্পদ গড়েছেন, বিষয়টি রাজশাহী মহানগর পুলিশের সব মহল জানে। কিন্তু তাঁকে দিয়ে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করতে দীর্ঘদিন ধরে ওই থানাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর বছরখানেক আগে নগরীর কাটাখালী থানায় বদলি করা হয় মোহাম্মদ আলীকে। কিন্তু সেখানে না গিয়ে কাশিয়াডাঙ্গাতেই থেকে যান তিনি। এরপর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয় করতে থাকেন আটক বাণিজ্যের নামে। রাজশাহীর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসে এমন চিত্র। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নগর পুলিশ থেকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয় মোহাম্মদ আলীকে। কিন্তু আদেশের পরে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এই কর্মকর্তা।

স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানায়, গত চার-পাঁচ দিনে এসআই মোহাম্মদ আলী আটক বাণিজ্য করে অন্তত ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গুড়িপাড়ার মনিরুল ইসলাম নামের এক মাদক কারবারিকে আটক করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন তিনি। আবার বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক করেও মাত্র ১০ পিস ইয়াবা জব্দসহ গ্রেফতার দেখানো হয় আশরাফুল ইসলাম নামের আরেক শীর্ষ মাদক কারবারিকে। তিনিও নগরীর গুড়িপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

সূত্র মতে, রাজশাহীর এই গুড়িপাড়া হলো মাদকের অভয়ারণ্য। এলাকাটি কাশিয়াডাঙ্গা থানার মধ্যে পড়েছে। আর এখান থেকেই প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদাও আদায় করতেন এসআই মোহাম্মদ আলী। ওই এলাকার অন্তত শতাধিক কারবারির তালিকা রয়েছে পুলিশের কাছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো অভিযান না করে দিনের পর দিন মাসোয়ারা আদায় করে পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছেন এসআই মোহাম্মদ আলী এমন অভিযোগও করেছে স্থানীয়রা।

ওই সময় এসব নিয়ে জানতে চাইলে এসআই মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তৎকালিন’কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি মনসুর আলী আরিফ বলেন, ‘তাঁকে সব অভিযান থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, (১৭ জুন ২০১৯) কাশিয়াডাঙ্গা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মোহাম্মদ আলী একটি পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে হয়রানীকরাসহ কয়েক দফায় হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। এ নিয়ে ভূক্তভোগীরা রাজশাহীর একটি  প্রেসক্লাবে এসআই আলির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেন।