২৯ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৪৪:২৯ অপরাহ্ন


নিউ ইয়র্কে 'উলুধ্বনি'তে শুরু হওয়া বর্ষবরণ-মঙ্গল শোভাযাত্রা বৃষ্টিতেই শেষ
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৩
নিউ ইয়র্কে 'উলুধ্বনি'তে শুরু হওয়া বর্ষবরণ-মঙ্গল শোভাযাত্রা বৃষ্টিতেই শেষ নিউ ইয়র্কে 'উলুধ্বনি'তে শুরু হওয়া বর্ষবরণ-মঙ্গল শোভাযাত্রা বৃষ্টিতেই শেষ


যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টাইম স্কয়ারে 'উলুধ্বনি'তে শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী সার্বজনীন বাংলা বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হয়েছে বৃষ্টিতে। গত শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকালে প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী ও দোয়ার্কি (সহশিল্পী) মহিলাদের মুখে শোনা যায় উলুধ্বনি'র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুসলমান সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দরা। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি আয়োজকরা। 

নিউ ইয়র্কে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নামক একটি সংগঠনের আয়োজনে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকালে টাইমস স্কয়ারে (৪৬ স্ট্রিট এন্ড ব্রডওয়ে)    শতকন্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে শিল্পী ও দোয়ার্কি (সহশিল্পী) ছাড়া অনুষ্ঠানস্থল ছিল দর্শক-অতিথিশূন্য। টাইমস স্কয়ার থেকে এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড কর্তৃপক্ষের সরাসরি ফেসবুক লাইভেই দেখা গেছে দর্শকশূন্য গ্যালারি। অনুষ্ঠান উপভোগের ইচ্ছে থাকলেও ক্ষুব্ধ প্রবাসীদের রমজানের পবিত্রতা নষ্টে সেখানে উপস্থিত হয়নি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাননি কোন আমন্ত্রিত অতিথিও। টাইমস স্কয়ারের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত বরেণ্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান উপস্থিত ছিলেন। টাইমস স্কয়ারের অনুষ্ঠানে মহীতোষ তালুকদার তাপসের পরিচালনায় সেখানে উপস্থিত দোয়ার্কিরা পহেলা বৈশাখ আর দেশের গান পরিবেশন অংশ নেন। উপস্থিত নারীরা একই রংয়ের শাড়ি আর পুরুষরা একই রকমের পাঞ্জাবী পরে অংশ নেন অনুষ্ঠানে। নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অনুষ্ঠানে শিল্পী ও দোয়ার্কি (সহশিল্পী) মহিলাদের মুখে শোনা যায় 'উলুলুলুলু' ধ্বনি। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সনাতন ধর্মালম্বী সচেতন নিউ ইয়র্ক প্রবাসীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, সনাতন বাঙালি সমাজে সন্ধ্যাপুজা থেকে শুরু করে যে কোন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান বা পুজা পার্বন, উলুধ্বনি ছাড়া কোন কিছুই সম্পন্ন হয় না। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের প্রায় সব স্থানেই এই সনাতন সংস্কৃতির দর্শন মেলে যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের মতে উ হলো রাধা এবং লু হলো কৃষ্ণ, তাই উলুধ্বনির দ্বারা এই দুই যুগলকেই স্মরণ করা হয়। এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নামক একটি সংগঠনের আয়োজনে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টাইম স্কয়ারে শতকন্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণ দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে শিল্পী ও দোয়ার্কি (সহশিল্পী) মহিলাদের মুখে শোনা যায় 'উলুলুলুলু' ধ্বনি। একটি সনাতনী সুবিধাবাদী গোষ্ঠি বাংলা বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় নামে কৌশলে সূর্যদেব ও গণেশপুজার করে অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন বাংলা বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিতর্কিত করেছেন যা এর আগে পৃথিবীতে কোথাও ঘটেনি। এ ঘটনায় নিউ ইয়র্কসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বইছে নিন্দার ঝড়। তবে চমৎকার বিষয় হলো এই যে, সনাতনী সুবিধাবাদী ওই গোষ্ঠিটি দুই তৃতীয়াংশ মুসলমান যুবক-যুবতীকে কায়দা করে বাংলা বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত করেছে যাদের কোন সনাতনী কান্ড-জ্ঞান নেই। এদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী যারা অতিথি, পদ-পদবী আর আত্মপ্রচারের পাগল।  

শুক্রবার সঙ্গীতানুষ্ঠানে একুশের পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় প্রবাসের শিল্পীরা অংশ নেন। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নানা ধরনের মুখোশের প্রতিচ্ছবি হাতে অংশগ্রহনকারীরা স্বল্প জায়গায় ‘তথা কথিত মঙ্গল শোভাযাত্রা’ প্রদর্শণ করেন। তবে অনুষ্ঠানস্থলে এবং শোভাযাত্রায় একজন পুরুষ আর একজন নারীর প্রতিকৃতির মুখোশ (কার, কেনো, কোন অর্থে ব্যবহৃত) স্থান পাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রবাসীদের মাঝে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে অংশগ্রহণকারীরা নির্দিষ্ট জায়গায় ঘেরাও করে বসে অংশ নেয়ায় টাইমস স্কয়ারের দেশি-বিদেশি পর্যটকরা অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেননি।

শনিবার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস, নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক ড. নুরুন নবীসহ অন্যান্য অতিথিরা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বরেণ্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কমলিনী মুখোপাধ্যায়সহ স্থানীয় শিল্পীরা। মুসলমান সম্পাদায়ের চাপের মুখে পড়ে আয়োজকরা ইফতারের জন্য ৪০ মিনিট অনুষ্ঠান বন্ধ রাখেন। কিন্ত তাদের অনুষ্ঠানসুচিতে কোন ইফতার বিরতি উল্লেখ ছিল না। তবে পার্শ্ববর্তী মসজিদে তারাবীর নামাজ শুরু হলেও অনুষ্ঠান অব্যাহত ছিল। পরে বৃষ্টি পড়া শুরু হলে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানেও উলুধ্বনি দেওয়া হয়েছে বলে শোনা গেছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলার আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের বিশ্বজিত সাহা, তোফাজ্জল লিটন ও সঙ্গীতশিল্পী মহিতোষ তালুকদার তাপসের কাছে পৃথক পৃথকভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা রমজানের পবিত্রতা বিনষ্ট করবে বলে প্রবাসীদের অনেকেই ধারণা করছেন। রোজার শেষ ১০ দিনের যে কোন বেজোড় দিনকে শবে কদরের দিন/রাত ধরা হয়ে থাকে। সেই মোতাবেক ১৪ ও ১৫ এপ্রিল ২৩ ও ২৪ রোজা। এ দু'দিনে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য কি? তারা কেউই এর সঠিক জবাব দিতে পারেননি।