তাইওয়ানকে ঘিরে চলতি সপ্তাহে তিনদিনব্যাপী বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছে চীন। এই বিষয়ে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বেইজিংয়ের এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, আগ্রাসী আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে প্রস্তুত হচ্ছে বেইজিং।
সিএনএনকে সাক্ষাৎকারে জোসেফ উ বলেন, আপনি সামরিক মহড়ার দিকে লক্ষ্য করুন, এমনকি তাদের বক্তব্যও আগ্রাসী। তারা তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে প্রস্তুত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। চীনা সামরিক মহড়াকে হুমকি হিসেবে দেখছে তাইওয়ান। এসব মেনে নেয়া যায় না। আমরা এর নিন্দা জানাই।
পর্যালোচনা করে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ ধারণা করছে, ২০২৭ সালে স্বায়ত্ত্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানে হামলা চালাতে পারে চীনা সামরিক বাহিনী। সামরিক বাহিনী প্রস্তুতি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
তাইওয়ানে বেইজিংয়ের সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে কোনও ধারণা আছে কিনা, এমন প্রশ্নে জোসেফ উ. সিএনএনকে জানান, তাইওয়ানের প্রস্তুতির প্রতি আস্থা আছে আমার। চীনা নেতারা তাইওয়ানের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দুই বার হলেও ভাববেন। ২০২৫ বা ২০২৭ সালের আগে পরে যাই হোক না কেন, তাইওয়ানকে প্রকৃত অর্থেই প্রস্তুত হতে হবে।
চীনা নৌবাহিনী প্রথমবার তাইওয়ানে কৃত্রিমভাবে তৈরি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে। গত শনিবার ঘোষণা দিয়েই তাইওয়ান প্রণালীর চারপাশে মহড়া শুরু হয়। বেইজিংয়ের হুমকি সত্ত্বেও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন স্পিকারের কেভিন ম্যাকার্থিসহ অন্যান্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর জেরে সামরিক মহড়া চালায় বেইজিং।
গত বছরের আগস্টে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইপে সফরের জেরে ঠিক একইভাবে মহড়া চালায় চীন। সে বার অঞ্চলটিতে সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছায়।
এদিকে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নীতির বাইরে গিয়ে ইউরোপকে স্বাধীন অবস্থান নিতে বলায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, তাইওয়ান নিয়ে সংকটের তীব্রতা বাড়াতে আগ্রহ নেই ইউরোপের। ব্লকটির উচিত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নীতির বাইরে গিয়ে তাইওয়ান ইস্যুতে স্বাধীন অবস্থান গ্রহণ করা।
এ প্রসঙ্গে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফরাসি সরকার আসলে কী বোঝাতে চেয়েছে, ম্যাক্রোঁ কী বলেছেন এবং এর অর্থ কী, তা বোঝার চেষ্টা করছি।
চীন-তাইওয়ান বিরোধের সূত্রপাত ১৯২৭ সালে। ওই সময়ে চীনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ। ১৯৪৯ সালে মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায়। জাতীয়তাবাদী নেতারা পালিয়ে তাইওয়ান যান। এখনও তারাই তাইওয়ান নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাথমিকভাবে ওই সময় যুদ্ধ বন্ধ হয়ে পড়লেও উভয় দেশই নিজেদের চীনের দাবিদার হিসেবে উত্থাপন শুরু করে।
তাইওয়ানভিত্তিক সরকার দাবি করে, চীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের দ্বারা অবৈধভাবে দখল হয়েছে। আর বেইজিংভিত্তিক চীন সরকার তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে।