বিজেপি-র শাসনকালে বিভিন্ন এলাকা, স্টেশনের পুরনো নাম বদলে নতুন করে রাখার ঘটনা বারবারই সামনে এসেছে। এলাহাবাদ হয়েছে প্রয়াগরাজ, মোঘলসরাই হয়েছে দীনদয়াল। সেই ধারা অব্যাহক রেখেই এবার মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের বিধানসভা কেন্দ্র বুধনির সেহোর জেলার অন্তর্গত নাসরুল্লাহ খানের নামাঙ্কিত নাসরুল্লাহগঞ্জ মহকুমার নাম পাল্টে ‘ভাইনরুন্দা’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের কাছে পেশ করা প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত। এই প্রথম নয়। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ সরকার হোসাঙ্গাবাদের নাম পাল্টে নর্মদাপুরম, ভোপালের হাবিবগঞ্জ রেলস্টেশন, মিন্টো হল ও হালালপুর বাস স্ট্যান্ডের নাম পাল্টে যথাক্রমে রানি কমলাপতি রেলস্টেশন, কুশাবাউ ঠাকরে কনভেনশন সেন্টার ও হনুমানগার্হি বাসস্ট্যান্ড নাম দিয়েছে।
এই বিষয়ে সরকারের দাবি, নামবদলের সিদ্ধান্ত মানুষের আবেগের ভিত্তিতে গৃহীত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বেছে বেছে বিভিন্ন এলাকা, শহর, জেলা, মহকুমা, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডের ইসলামি নাম মুছে ফেলে হিন্দু নাম দেওয়াটাই তলে তলে আসল উদ্দেশ্য শাসকদলের। এবং এই নামবদল বহুক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ সহজে গ্রহণ করেননি।
কিন্তু সদ্য এই নাসরুল্লাহগঞ্জ মহকুমার নামবদলের সঙ্গে সঙ্গেই সামনে এসেছে, নাসরুল্লাহ খানের নাম। তাঁর নামেই নাম ছিল এই জায়গার। কী বা তাঁর পরিচয়?
ইতিহাস বলছেস নাসরুল্লাহ খান (১৮৭৬-১৯২৪) তৎকালীন ভোপাল করদরাজ্যের চতুর্থ মহিলা শাসক বেগম সুলতান জেহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। মায়ের শাসনকালেই ডায়াবেটিসে ভুগতে থাকা বছর চল্লিশের নাসরুল্লাহের মৃত্যু হয়। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী তাঁর তিন পুত্রেরই রাজা হওয়ার যোগ্যতা থাকলেও, রাজ্যাভিষেক হয়নি কারও। বরং ভোপালের মসনদে অভিষিক্ত হন নাসরুল্লাহের কাকা হামিদুল্লাহ খান।
জীবিত কালে নাসরুল্লাহ খানের ছিল শিকারের নেশা। তাঁর সংগ্রহে ছিল প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, যা তিনি সুদূর ব্রিটেন থেকে অর্ডার দিয়েও আনাতেন বা বিদেশ থেকে নিলামে চড়া দামে কিনতেন। কিন্তু নিজের সংগ্রহে অস্ত্রশস্ত্র থাকা সত্ত্বেও নাসরুল্লাহ খান কখনই সেগুলিকে কাজে লাগিয়ে তাঁর প্রজাদের উপর নিপীড়ন করেননি। অন্যান্য মুঘল রাজাদের মতো অত্যাচারী নন, বরং তিনি ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের মতো উদারমনা, পরমত ও পরধর্মসহিষ্ণু।
ভোপালের ঐতিহাসিক সিকন্দর মির্জা জানান, “বেগম সুলতান ভবিষ্যতের সম্রাট হিসেবে বাল্যবয়েস থেকেই রাজধর্মের শিক্ষা দিয়েছিলেন নাসরুল্লাহকে। ১৯০৩ সালে ভোপালে প্লেগ মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়লে হজযাত্রী বেগম জ্যেষ্ঠপুত্রকে চিঠি লিখে ধর্ম-নির্বিশেষে যথাযথভাবে মৃতদের দেহ সৎকার করার এবং সমস্ত কাজটি যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে, প্লেগের সংক্রমণ এড়িয়ে পালন করারও নির্দেশ দেন।”
সব মিলিয়ে, রাজার আসনে না বসেও প্রজাবৎসল সুশাসক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন নাসরুল্লাহ। তাঁর সহিষ্ণু ও উপকারী মনোভাবই তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল স্বল্প আয়ুকালেও। তাই পরবর্তীকালে তাঁরই নামে নাম রাখা হয় ওই এলাকার, নাসরুল্লাহগঞ্জ। অভিযোগ উঠেছে, সেই ইতিহাসকেই মুছে ফেলতে চাইছে বিজেপি। নাসরুল্লাহর স্মৃতি ধ্বংস করতে চাইছে, কেবল ইসলাম বিদ্বেষের কারণে।