২৯ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:৪৯:২৮ অপরাহ্ন


হাইব্রিড সূর্যগ্রহণ এপ্রিলেই, পরপর তিন বার ঢাকা পড়বে সূর্য, বিরলতম মহাজাগতিক ঘটনা
সুমাইয়া তাবাস্সুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৪-২০২৩
হাইব্রিড সূর্যগ্রহণ এপ্রিলেই, পরপর তিন বার ঢাকা পড়বে সূর্য, বিরলতম মহাজাগতিক ঘটনা হাইব্রিড সূর্যগ্রহণ এপ্রিলেই, পরপর তিন বার ঢাকা পড়বে সূর্য, বিরলতম মহাজাগতিক ঘটনা


একশো বছরে হয়ত একবার ঘটে। বিরলের মধ্যে বিরলতম মহাজাগতিক ঘটনা ঘটতে চলেছে এ মাসেই। আগামী ২০ এপ্রিল হবে হাইব্রিড সূর্যগ্রহণ। পরপর তিন বার ঢাকা পড়বে সূর্য।

সূর্যের পূর্ণগ্রাস দেখতে পাওয়াটা তো চাট্টিখানি কথা নয়। ১৮ মাস পর পর একটি করে পূর্ণগ্রাস হয় সূর্যের। সেটাই যে প্রকৃতির নিয়ম। যখন সূর্যের মুখ পুরোপুরি ঢেকে দেয় চাঁদ। তার ফলে, দৃশ্যমান হয়ে ওঠে সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা করোনা। যা এক বিরল দৃশ্য। সূর্যের কখনও আংশিক গ্রাস হয়, কখনও পূর্ণগ্রাস, আবার কখনও বলয়গ্রাস বা ‘রিং অফ ফায়ার’। আর যদি তিনটেই পরপর ঘটতে থাকে তাহলে তাকে বলে হাইব্রিড বা শংকর সূর্যগ্রহণ। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই শতাব্দীতে ২২৪টির বেশি সূর্যগ্রহণ হওয়া সম্ভব নয়। সূর্যের মাত্র ৫৫টি পূর্ণগ্রাস বাকি আছে এখনও অবধি। একুশ শতকে হবে ৭২টি বলয়গ্রাস আর ৭৭টি খণ্ডগ্রাস। আর পূর্ণগ্রাস ও বলয়গ্রাস মিলিয়ে সূর্যের মিশ্র (হাইব্রিড) গ্রহণ হবে ৭টি।

হাইব্রিড সূর্যগ্রহণ কী?

হাইব্রিড গ্রহণ হল একই সঙ্গে আংশিক, পূর্ণগ্রাস ও বলয়গ্রাস গ্রহণ। যদি তিন রকম গ্রহণ পরপর একই সঙ্গে ঘটে তাহলে তা হল হাইব্রিড বা মিশ্র। এটিকে বিরলতম মহাজাগতিক ঘটনা বলেন বিজ্ঞানীরা।

যখন সূর্য পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যায় চাঁদের ছায়ায়, আমরা বলি পূর্ণগ্রাস। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, ‘টোটাল সোলার একলিপ্স’। সূর্যের পূর্ণগ্রাস মেরেকেটে হতে পারে ৬ কি সাড়ে ৬ মিনিটের জন্য। খুব বেশি হলে যা হতেও পারে বড়জোর সাড়ে ৭ মিনিট। 

কোথাও যদি সেটা পুরোপুরি হয়, তা হলে অন্য কোথাও হবে সূর্যের আংশিক গ্রহণ। যেখানে পৃথিবীর সামনে এসে চাঁদ পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারে না সূর্যকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘পার্শিয়াল সোলার একলিপ্স’।(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

চাঁদের ছায়ার দু’টি অংশ থাকে। একটি ঘন কালো। তাকে বলা হয়, ‘আমব্রা’। সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর যে যে এলাকা ‘আমব্রা’র মধ্যে পড়ে, সেখান থেকে সূর্যের পূর্ণগ্রাস দেখা যায়। ছায়ার আর একটি অংশের নাম ‘পেনাম্ব্রা’। ঘন কালো ‘আমব্রা’র পাশেই। সেই অংশটি ততটা কালো নয়। সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর যে যে এলাকা ‘পেনাম্ব্রা’র মধ্যে পড়ে, সেখান থেকে সূর্যের আংশিক গ্রহণ দেখা যায়। 

আরও এক ধরনের সূর্যগ্রহণ হয় যাকে বলে বলয়গ্রাস গ্রহণ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘অ্যানুলার সোলার একলিপ্স’। কক্ষপথে প্রদক্ষিণের সময় চাঁদ যখন এমন একটা দূরত্বে চলে যায়, যাতে তার ছায়া সূর্যকে ঢেকে দিতে পারে না পুরোপুরি, তখনই হয় সূর্যের বলয়গ্রাস। যখন চাঁদ সূর্যের মাঝখানটাকে চাকতির মতো ঢেকে দেয় বটে। কিন্তু তার পরেও সেই চাকতির চার পাশ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সূর্যের আলো। অনেকটা আংটির মতো। ‘অ্যানুলার’ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘অ্যানুলাস’ থেকে। যার অর্থ ‘আংটি’। বলয়গ্রাসের স্থায়িত্ব হয় বড়জোর ১২ মিনিট।

চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে। পৃথিবীর দিকে ৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থেকে। তাই পূর্ণগ্রাস, আংশিক গ্রাস ও বলয়গ্রাস মিলিয়ে বছরে ৫টির বেশি সূর্যগ্রহণ হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এ বছর এপ্রিলে তিনরকম গ্রহণ একসঙ্গে ঘটবে। 

 ভারতীয় সময় অনুসারে সকাল ৭টা ৪ মিনিটে গ্রহণ লাগবে এবং গ্রহণ ছেড়ে যাবে বেলা ১২টা ২৯ মিনিটে। মোট ৫ ঘণ্টা ২৪ মিনিট ধরে চলবে সূর্যগ্রহণ। তবে ভারত থেকে এই গ্রহণ দেখা যাবে না। অ্যান্টার্কটিকা, থাইল্যান্ড, চিন, ব্রুনেই, সলোমন, ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, পাপুয়া নিউ গিনি, ইন্দোনেশি, অস্ট্রেলিয়া থেকে গ্রহণ দেখা যাবে।