২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৬:৩২:০৪ অপরাহ্ন


ট্রেনের বগি রেখেই ইঞ্জিন ছুটলো রাজশাহী, যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০২-২০২২
ট্রেনের বগি রেখেই ইঞ্জিন ছুটলো রাজশাহী, যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ট্রেনের বগি রেখেই ইঞ্জিন ছুটলো রাজশাহী, যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ


একবার নয়, চার চারটি বার খুলনা থেকে রাজশাহী গামী 'কপোতাক্ষ' ট্রেনের বগি রেখে শুধু ইঞ্জিন নিয়েই রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ইঞ্জিন ছুটিয়েছেন লোকো মাস্টার। এতে ৩ ঘন্টার ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

কপোতাক্ষ ট্রেনের যাত্রী ও রেল সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীবাহী কপোতাক্ষ ট্রেনটি শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ৬টায় খুলনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি রাজশাহীতে প্রবেশ করার সময় সূচী দুপুর ১২ টায়। কিন্তু পথিমধ্যে চার চারটি স্হানে ট্রেনটির ইঞ্জিন বগি রেখেই চলে যায়।

জানা গেছে, প্রথমে যশোর স্টেশনে ট্রেনের কাপলিং (জ) এর সমস্যার কারণে বগিটি রেখেই ট্রেনের ইঞ্জিনটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পরে আবার ট্রেনটির ইঞ্জিনটি ফিরিয়ে আনার জন্য বগির গার্ড (ট্রেন পরিচালক) ইঞ্জিনের এলএম (লোকো মাস্টার) কে মুঠোফোনে কল করে পুনরায় ফেরত আসতে বলেন। এরপর ইঞ্জিনটি বগির সাথে যুক্ত হয়ে আবার যশোর ত্যাগ করে। এরপর আবারো নোয়াপাড়া স্টেশনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়।

দ্বিতীয় বার কোট চাঁদপুর স্টেশনে পর পর দুইবার  বগি রেখে ইঞ্জিনটি সফদারপুর স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় চলে যায়। যার দূরত্ব প্রায় প্রায় ৮ থেকে ১০  কিলোমিটার। ট্রেনচালক বা লোকো মাস্টার ঘটনাটি বুঝতে পেরে আবারো পেছনে ফেরে। এভাবে প্রায় তিন ঘন্টা ট্রেনটি বিলম্বে বিকেল ৩ টায় রাজশাহী এসে পৌছায়।

অতপর ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ছেড়ে যায় ৪ টা ৫ মিনিটে। ট্রেনটিতে অবস্থানরত যাত্রী ফায়সাল বলেন, পরপর চার বার ট্রেনটি বগি রেখেই ইঞ্জিনটি ছেড়ে যায়। এতে অতিরিক্ত তিন ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। এতে আমি সহ অনেকেই সময় মতো রাজশাহী পৌঁছাতে না পেরে বড় বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

ওই ট্রেনের অপর এক যাত্রী শিল্পী অসীম সরকার জানান, আমি আমার কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য আসছি। কিন্তু ট্রেনটি তিন ঘন্টা লেট হওয়ার কারণে ডাক্তারের চেম্বারে সময় মতো পৌছাতে পারি নাই। দুপুর বেলা চিকিৎসক দেখানোর কথা। কিন্তু ট্রেন বিলম্ব হওয়ায় আর তা হলো না। এতে বাধ্য হয়েই আজ রাতে আমাদের রাজশাহীতে অবস্থান করতে হবে।

অপর এক যাত্রী বলেন, খুব জরুরী কাজের জন্য আমাকে রূপপুরে যেতে হতো। সেখানে ছিল জরুরী একটি ব্যবসায়ীক মিটিং। কিন্তু ট্রেনের এমন বিলম্ব হওয়ায় আমার সমস্ত কার্যক্রম জলে ভেস্তে যায়। কর্তৃপক্ষ যদি এবিষয়টি মাইকিং করে জানাতেন তবে আমাকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না।

ট্রেন পরিচালক তাপস কুমার দে বলেন, ট্রেনের বগির সাথে ইঞ্জিনের জোড়া লাগানোর জন্য যে কাপলিং বা 'জ' ব্যবহৃত হয় সেটি বার বার ছুটে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়া অন্যান্য ট্রেন আমাদেরকে ক্রস করার কারণেও আমরা সময় মতো স্টেশনে পৌঁছাতে পারিনি।

এবিষয়ে লোকো মাস্টার কুতুব উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, আমি ঈশ্বরদী থেকে উঠেছি। ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনের লোকো মাস্টার পরিবর্তন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পূর্বের স্টেশনে কি ঘটেছে তা আমার জানা নেই।

জানতে চাইলে ডিভিশনাল ট্রাফিক অফিসার (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বলেন, কাপলিং এর সমস্যার কারণে ট্রেনটি খুব ধীর গতিতে রাজশাহী এসে পৌছেছে। যার কারণে ট্রেনটি তিন ঘন্টা বিলম্বে এসে পৌঁছেছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সুরাইয়া পারভীন বলেন, কাপলিং এর সমস্যার কারণে এঘটনাটি ঘটেছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেল কর্মকর্তার জানান, স্টেশনের প্লাটফম থেকে একটি নির্দিষ্ট সিগনাল পর্যন্ত গার্ড ও সহকারী গার্ড এবং লোকো মাস্টার ও সহকারী লোকো মাস্টার একে অপরের সাথে যোগাযোগ রেখে ট্রেনের দরজায় দাড়িয়ে সিগনাল অতিক্রম করবেন। এর পূর্বে তারা স্টেশন ত্যাগ করতে পারবেন না। এতে ইঞ্জিন ও বগির সমন্বয় সাধন হয় এবং দুর্ঘটনা বা আনুষাঙ্গিক বিষয়দি থেকে সতর্ক থাকা যায়। হয়তোবা তারা এমনটা না করেই স্টেশন ত্যাগ করেছেন। যার কারণে এমন ঘটনাটি ঘটেছে।

এবিষয়টি ডিটিও আনোয়ারকে জানালে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার দেখার মধ্যে পড়ে না। যেহেতু কাপলিং বা যান্ত্রিকজনিত ত্রুটির কারণে সমস্যাটি হয়েছে সেহেতু বিষয়টি চিফ মেকানিক্যাল  ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ ভালো বলতে পারবেন।

এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল অফিসার কুদরত-ই-খোদা বলছেন, নতুন কাপলিং লাগানোর কারণে এমন ঘটনাটি ঘটতে পারে। তবে বিষয়টি তদন্তের জন্যও বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, নতুন কোচ ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত করার আগে ট্রায়ালে রাখার কথা। হয়তোবা জনবল সংকটের কারণে এই ট্রায়ালটি দেওয়া হয়নি। যার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজশাহীর সময় /এএইচ