১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১০:১৭:৫৩ পূর্বাহ্ন


ইফতারে দেরি না করার পুরস্কার ও ফজিলত
ধর্ম ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৩-২০২৩
ইফতারে দেরি না করার পুরস্কার ও ফজিলত ফাইল ফটো


সারা দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখার পর সময়মতো ইফতার করা উচিত। ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করায় রয়েছে বিশেষ মর্যাদা ও পুরস্কার। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করার প্রসঙ্গে রাসূল (সা.)-এর ঘোষণা এমন যে, ‘যতদিন মানুষ দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপরে থাকবে।’

তাড়াতাড়ি ইফতার করার সঙ্গে ইসলামের বিজয়ের সম্পর্কও জড়িত। ইফতারে দেরি করা হলো ইহুদি ও নাসারাদের স্বভাব। ফেরেশতারা রোজাদারদের ইফতারের অপেক্ষায় থাকেন। কেননা, ইফতারের সময় ফেরেশতারা রোজাদারের জন্য আল্লাহর দরবারে রহমতের জন্য দোয়া করতে থাকেন।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘রোজাদারের সামনে আহার করা হলে ফেরেশতারা তার জন্য (আল্লাহর) অনুগ্রহ কামনা করেন।’ (ইবনে মাজাহ)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইহুদি ও নাসারাদের অভ্যাস হলো দেরিতে ইফতার করা।’ (আবু দাউদ)

তাড়াতাড়ি ইফতার করার জন্য নবী করিম (সা.) তাগিদ দিয়েছেন। কারণ, এতে রোজাদারের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ততক্ষণ মানুষ কল্যাণের ওপর থাকবে যতক্ষণ তারা দ্রুত ইফতার করবে।’ সহিহ বুখারি: ১৯৫৭

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদ বিন মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহুর এখানে ইফতার করেন, অতঃপর বলেন, ‘তোমাদের এখানে রোজাদারগণ ইফতার করেছেন, নেককারগণ তোমাদের খাদ্যদ্রব্য আহার করেছেন এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের জন্য রহমত কামনা করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ)

রোজাদারদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব। রোজার বিনিময় স্বয়ং আল্লাহ দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ২৭৬০)।

রোজাদারের জন্য সবচেয়ে বড় সুসংবাদ বা আনন্দের মুহূর্ত হলো ইফতারের সময়। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে এ কথা বর্ণনা করেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে:

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, বনি আদমের প্রতিটি আমল বৃদ্ধি করা হয়। আর প্রতিটি নেকি দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, সিয়াম (রোজা) ব্যতীত। কেননা, সিয়াম শুধু আমার জন্যই; এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। বান্দা আমার জন্যই তার কামনা-বাসনা ও পানাহার ত্যাগ করে। রোজাদারের দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময় আর অপরটি কেয়ামতে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন তার কসম! রোজাদারের মুখের গন্ধ কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মেস্‌ক-আম্বরের চেয়েও বেশি খোশবুদার। (বুখারি ও মুসলিম)

শুধু না খেয়ে থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়; বরং যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে মুখ ও জিবকে সংযত রাখতে হবে। সংযমের পরিচয়ে দিতে হবে সবক্ষেত্রে।

সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিসমিল্লাহ বলে ইফতার করতে হয়। কিছু ইফতারি খাওয়ার পর বলতে হয়:

اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোজা রেখেছি আবার তোমার দেয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করেছি। সুনানে আবু দাউদ: ২৩৬০

ইফতারি শেষ করার পর বলতে হয়:

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

উচ্চারণ: জাহাবায যামাউ, ওয়াব-তাল্লাতিল উরূকু, ওয়া সাবাতাল আজরু-ইনশাআল্লাহ।

অর্থ: ‘পিপাসা নিবারিত হয়েছে, শিরা-উপশিরাগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহ চাহেন তো রোজার সওয়াবও লেখা হয়েছে।’ সুনানে আবু দাউদ: ২৩৫৯।