২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:০৫:৪৩ অপরাহ্ন


রাজশাহীতে এমপিও বিধি লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ শিক্ষকরা নিকাহ রেজিস্ট্রার!
নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৩-২০২৩
রাজশাহীতে এমপিও বিধি লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ শিক্ষকরা নিকাহ রেজিস্ট্রার! ফাইল ফটো


রাজশাহীতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ বেশ কিছু এমপিওভুক্ত শিক্ষক একইসঙ্গে নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা একইসঙ্গে আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জেলায় এমন  এমন ২৭ জন নিকাহ রেজিস্ট্রারের তথ্য পাওয়া গেছে যারা একইসঙ্গে এমপিওভুক্ত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষক। রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার এবং জেলা রেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করেই তারা একইসঙ্গে দুটি চাকরি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালা ও এমপিও কাঠামো ২০২০ সালের সংশোধিত বিধিতে বলা আছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা একইসঙ্গে একাধিক পদে চাকরিতে কিংবা কোনো আর্থিক লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে এমপিও বাতিল ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮(২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) এর অনুচ্ছেদ ১১.১০(ক) মোতাবেক এমপিওভূক্ত কোন শিক্ষক কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোন পদে/ চাকুরীতে বা অর্থিক লাভজনক কোন পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। একইসঙ্গে একাধিক পদে চাকরিতে কিংবা কোনো আর্থিক লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে এমপিও বাতিল ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষকতার পাশাপাশি নিকাহ্ রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করছেন শুধু তাই নয়। তারা বিধি উপেক্ষা করে একাধিক সহকারী রেখে বিবাহ্ ও তালাকের কাজ করছেন। এ নিয়ে নিকাহ্ রেজিস্ট্রারদের মধ্যে বিভক্তি, অসন্তোষ, দ্বন্দ, দীর্ঘদিনের। কিন্তু অজ্ঞাত করানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এটেছেন। এ নিয়ে একাধিক প্রায় শতাধিক গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশিত হলেও তার কোন সুরাহা হচ্ছে না। এ নিয়ে হতাশা আর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে নিকাহ রেজিষ্ট্রারদের মাঝে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধীক নিকাহ রেজিস্ট্রার জানান, আমাদের সমস্যা জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই দায়ি। যাকে বলে শরিষার মধ্যে ভূত।

নিকাহ রেজিষ্ট্রারদের নিকট খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিয়ে নিবন্ধনের জন্য সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ‘নিকাহ রেজিস্ট্রার’ নামে অভিহিত করা হয়। প্রতিটি বিয়ের কাবিনের প্রতি হাজারে ১৪টাকা হারে তারা ফি নিয়ে থাকেন। তারা জানান, বিয়ে নিবন্ধনের মাধ্যমে তারা মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। তবে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন অজুহাতে সরকার নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে বেশি আদায় করে অনেকে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকাও আয় করেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি নিকাহ রেজিস্ট্রার’রা হলেন, ১।রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডের কাজী মোঃ দূরুল হুদা, তিনি চারঘাট এমএ হাদী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ২। রাসিক ১০ নং ওয়ার্ডের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কাজী মোঃ নূরুল ইসলাম, তিনি পবা উপজেলা কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক ৩। কাজি সিদ্দিকুর রহমান ওরফে আবু বাক্কার সিদ্দিক, তিনি পবা উপজেলার সিন্দুর কুসুম্বি নামোপাড়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যাক্ষ ৪। গোদাগাড়ী পৌরসভার ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কাজী মোঃ আব্দুল জাব্বার, তিনি মহিষাল বাড়ি মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ৫। ১নং গোদাগাড়ী ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুল মতিন, তিনি গোদাগাড়ী আই হাই উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ৬। কাকনহাট পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ রেজুয়ানুর রহমান, তিনি গোদাগাড়ী জয়রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ৭। বাঘা থানার হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক বিমল চন্দ্র মোহন্ত, তিনি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া আমনগর দ্বি-মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের চাকরিজীবি ৮। বাঘা ৩নং পাকুড়িয়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুল মান্নান, তিনি বাঘা কাদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ৯। বাঘা ৫নং বাউসা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ নায়েব আলী শেখ, তিনি বাঘা খোদ্দ বাউসা উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মিয় শিক্ষক ১০। বাঘা ২নং গড়গড়ি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুল মতিন, তিনি বাঘা রহমতুল্লাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ১১। আড়ানী পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ শফিকুল ইসলাম, তিনি আলহাজ্ব এরশাদ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ১২। পুঠিয়া ৪নং ভালুকগাছি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, তিনি পুঠিয়া দখিল মাদ্রাসার সহকারী মাওলানা শিক্ষক ১৩। পুঠিয়া পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি ঝলমলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ১৪। পুঠিয়া ২ নং বেল পুকুরিয়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ জোনাব আলী। তিনি পুঠিয়া জামিরা কলেজের শিক্ষক ১৫। তানোর ২নং বাঁধাইড় ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মোঃ এনেতুল্লা, তিনি চাপাইনবাবগঞ্জ আমনুরা দারুল হুদা হককানিয়া দাখিল মাদ্রাসার চাকরিজীবি ১৬। চারঘাট থানার হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক রাজিব কুমার পরামানিক, তিনি চারঘাট বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ১৭।চারঘাট ৪নং নিমপাড়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মোঃ সিদ্দিক হোসাইন, তিনি চারঘাট ভাটপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ১৮। চারঘাট পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ ফজলুর রহমান, তিনি পুঠিয়া ধোপাপাড়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক ১৯। মোহনপুর থানার হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক কোমল কুমার পাল, তিনি তানোর কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ২০। বাগমারা ১৪ নং হামিরকুৎসা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুল মান্নান, তিনি নাটোর নলডাঙ্গা সরকুতিয়া মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী ২১। বাগমারা ১৫নং যোগিপাড়া উইনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ আনিসুর রহমান, তিনি দূর্গাপুর পালশা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ২২। বাগমারা ১০নং মাড়িয়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার আবুল হোসাইন মোঃ মহসিন আলী, তিনি নাটোর নলডাঙ্গা সরকুতিয়া মাদ্রাসার অধ্যাক্ষ ২৩। বাগমারা ৭নং ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ মকবুল হোসেন, তিনি বালানগর কামিল মাদ্রাসার গ্রন্থগারিক ২৪। বাগমারা ৫নং আউচপাড়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী আবু আব্দুল্লাহ মোঃ আসাদুল্লাহ, তিনি হাট গাংগুপাড়া কারিগরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ! ২৫। বাগমারা ২নং নরদাস ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মোঃ মতাসিম বিল্লাহ্, তিনি কোয়ালি পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ২৬। বাগমারা ৩নং দিপপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুল গনি, তিনি মিরপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক ২৭। ১নং গোবিন্দ পাড়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মোঃ নজরুল ইসলাম, তিনি নওগাঁ মান্দা দাসপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

এ ব্যাপারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও নিকাহ্ রেজিষ্ট্রাররা এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি না জানতে চাইলে তারা প্রায় সকলেই বলেন, ‘এ বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রারের নলেজে আছে। এটা কোনো সমস্যা না।

এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এটা নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারদের অভ্যান্তরিন দ্বন্দ্ব। এ সময় তিনি নিউজ না করার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮(২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) এর অনুচ্ছেদ ১১.১০(ক) মোতাবেক এমপিওভূক্ত কোন শিক্ষক কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোন পদে/ চাকুরীতে বা অর্থিক লাভজনক কোন পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। শিক্ষকতার পাশাপাশি কাজী পেশায় যুক্ত থাকার অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।