২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১২:৫৬:৩৩ পূর্বাহ্ন


ভূমিহীন থাকছে না ২১১ উপজেলায়
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
ভূমিহীন থাকছে না ২১১ উপজেলায় ফাইল ফটো


আজ থেকে দেশের ২১১ উপজেলা ও নয়টি জেলায় কেউ গৃহ-ভূমিহীন থাকছে না। এসব উপজেলায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের আশ্রয়ণের ব্যবস্থা হয়েছে। গৃহহীনদের দুর্দশা লাঘবের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ ৩৯ হাজার ৩৬৫টি একক ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথাও বলবেন। একই সঙ্গে সারা দেশের সব উপজেলায় একযোগে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের কাছে এ ঘর হস্তান্তর করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অনন্য উদ্যোগ। পৃথিবীর কোনো সরকার এত গৃহহীনকে একসঙ্গে ঘরসহ বাড়ি করে দেওয়ার নজির নেই। ১৯৯৬ সালে সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তিনি জাতির পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় চালু করেন। ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৭ সালের ২০ মে কক্সবাজার জেলার ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মানুষের দুর্দশা দেখতে কক্সবাজার পরিদর্শন করেন এবং গৃহহীনদের আবাসনের কথা চিন্তা করে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবারপ্রতি পাঁচজন হিসেবে এ কার্যক্রমের উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবারকে। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের সমান কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে আরও ২ লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার।

২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে দেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন- গৃহহীন থাকবে না বলে ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী শুধু মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সারা দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় সারা দেশে পুনর্বাসন কার্যক্রমের মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে পরিবারভিত্তিক স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ২ শতাংশ জমির মালিকানার দলিল ও নামজারি সম্পাদন করে দেওয়া হয়। এ জমিতে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ২ কক্ষ, প্রশস্ত বারান্দা, একটি স্যানিটারি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর সংবলিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব ডিজাইনের একটি অনন্যসাধারণ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বুধবার দেশের সাত জেলা ও ১৫৯ উপজেলাকে সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ ৩৯ হাজার ৩৬৫টি একক ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলাকে তিনি ভূমিহীন-গৃহহীন হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। তোফাজ্জল হোসেন আরও বলেন, আগামীকাল ঘর হস্তান্তরের পর দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত জেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৯ এবং উপজেলার সংখ্যা হবে ২১১টি। আরও সাতটি জেলা গৃহ-ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জেলাগুলো হচ্ছে নরসিংদী, মাদারীপুর, রাজশাহী, জয়পুরহাট, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

 

যেসব স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি সংযুক্ত থাকবেন সেসব স্থানে যেন উৎসবের আমেজ বইছে। গতকাল সরেজমিন শ্রীপুরের নয়াপাড়া আশ্রায়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার ঘরে ঘরে যেন ঈদের মতো আনন্দ। আগের বাসস্থান থেকে মালামাল নিয়ে নতুন ঘরে উঠছেন সবাই। কেউ বা নিজেদের ঘর সাজাচ্ছেন। অনেকে দু-এক দিন আগে উঠে গেছেন, রান্নায় ব্যস্ত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন ঘরে, নতুন পরিবেশে খেলাধুলায় মেতে উঠেছে। আশ্রয়ণের ঘরের পাশাপাশি এখানে নান্দনিক একটি মসজিদ ও স্কুল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ দুটোর নির্মাণকাজ এখনো চলমান। আশ্রয় কেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের নয়াপাড়ায় ঘর পেয়েছে ১৪২টি পরিবার। এখানে কথা হয় ৬০ বছরের বৃদ্ধা হামিদা খাতুনের সঙ্গে।

 তিনি বলেন, ‘৬০ বছরের জীবনে প্রায় ৪০টা বছরই কখনো পলিথিনের তাঁবু, কখনো গাছতলায় বা স্টেশনে, আবার কখনো অন্যের বাড়িতে ভাড়া থেকে কাটিয়েছি।’ মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে একমাত্র সন্তানকে বুকে আগলে ঘুরেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়াপাড়ায় একটা পাকা ঘর ও এক টুকরো জমি পেয়ে বহুদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এই বৃদ্ধার। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব-১ এম এম ইমরুল কায়েসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে আগের পাওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো পরিদর্শন করে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জীবনচিত্র বদলে যাওয়ার দৃশ্য দেখলাম, যা সত্যি অনন্য উদাহরণ।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির মূল দর্শন “দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো”- এটিকে কি ধারণ করেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। আমি বলব, এমন উদ্যোগ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় যুক্ত করছে, যা অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল।’

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ফরিদপুরে ৫ হাজারের অধিক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আজ দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে ফরিদপুরের সালথা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের দেওয়া ২ শতাংশ জমিসহ সেমিপাকা ঘর পেয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন সুবিধাভোগীরা। আলফাডাঙ্গা উপজেলায় সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প স্বপ্ননগর। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতাভুক্ত যেখানে প্রায় ৩০০ ঘরে বসবাস করছে কয়েক শ পরিবার। অসহায়, ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীনরা এখন স্বামী-স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে সেখানে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছে। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন শেষে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানালেন, চত্বরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব বাসিন্দার নিজস্ব পরিবর্তনের গল্প রয়েছে। তাদের এ গল্পের মূল কারিগর সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফরিদপুরসহ সারা দেশে আশ্রয়হীনদের নিজস্ব ঠিকানা গড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশেই আমরা দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে ছুটে আসি এদের খোঁজখবর নিতে। শুনি তাদের কথা। কোথাও কোনো সমস্যা বা অতি প্রয়োজনীয় কিছু আছে কি না। এ আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানালেন তাদের একটি মসজিদ দরকার। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেটি করে দেব।