২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১০:৩৫:০৬ পূর্বাহ্ন


আল্লাহ ক্ষমাশীল
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৩-২০২৩
আল্লাহ ক্ষমাশীল ফাইল ফটো


এমন অপরাধ ও গুনাহ, যা থেকে তওবা না করেই মুমিন মারা গেছে। আল্লাহ তাআলা কারও জন্য চাইলে কোনো প্রকারের শাস্তি না দিয়েই তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং অনেককে শাস্তি দেওয়ার পর ক্ষমা করবেন। আবার অনেককে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশে ক্ষমা করবেন। কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করার অপরাধ কোনো অবস্থায়ই মাফ হবে না। কেননা মুশরিকের ওপর তিনি জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ; যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)

আয়াতে আল্লাহ তাআলার সত্তা ও গুণাবলি সম্পর্কে যেসব বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, যে কোনো সৃষ্ট বস্তুর ব্যাপারে তেমন কোনো বিশ্বাস পোষণ করাই হলো শিরক। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো সৃষ্ট বস্তুর ইবাদাত কিংবা মহব্বত ও সম্মান প্রদর্শনে আল্লাহর সমতুল্য মনে করাই শিরক।

জাহান্নামে পৌঁছে মুশরিকরা যে উক্তি করবে, আল্লাহ তাআলা তা উল্লেখ করেছেন যে-

تَاللّٰهِ اِنۡ کُنَّا لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ - اِذۡ نُسَوِّیۡکُمۡ بِرَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ

‘আল্লাহর শপথ, আমরা প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত ছিলাম যখন আমরা তোমাদেরকে বিশ্ব-পালনকর্তার সমতুল্য স্থির করেছিলাম।’ (সুরা আশ-শুআরা: আয়াত ৯৭-৯৮)

পৃথিবীতে প্রত্যেক খোদাই করা পাথরের মূর্তি এবং কবরের উপর নির্মিত সুদর্শন গম্বুজ মুশরিকদের কাছে ইলাহি এখতিয়ারের অধিকারী বলে মনে হয়। কিন্তু কেয়ামতের দিন তারা জানতে পারবে যে, এ ছিল প্রকাশ্য ভ্রষ্টতা, যার ফলে তারা তাদেরকে আল্লাহর সমতুল্য ভেবে বসেছিল।

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তিনি তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। এর বাইরে যত গুনাহ আছে সবই তিনি যার জন্যে ইচ্ছে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে তার সঙ্গে কাউকে শরিক করে সে অবশ্যই এক বড় মিথ্যা অপবাদ রটনা করল।

আল্লাহ ক্ষমাশীল: অন্য আয়াতে অবশ্য আল্লাহ তাআলা শিরককারীদের মধ্যে যারা তাওবা করবে তাদেরকে ক্ষমা করার কথা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন-

اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یُبَدِّلُ اللّٰهُ سَیِّاٰتِهِمۡ حَسَنٰتٍ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

‘তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান: আয়াত ৭০) সুতরাং তওবা করলে শিরকও মাফ হয়ে যায়।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমরা কবিরা গুনাহকারীর জন্য ইস্তেগফার করা থেকে বিরত থাকতাম। শেষ পর্যন্ত যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ আয়াত শুনলাম এবং আরো শুনলাম যে, তিনি বলছেন, আমি আমার দোয়াকে গচ্ছিত রেখেছি আমার উম্মতের কবিরা গুনাহগারদের সুপারিশ করার জন্য। ইবন ওমর বলেন, এরপর আমাদের অন্তরে যা ছিল, তা অনেকটা কেটে গেল ফলে আমরা ইস্তেগফার করতে থাকলাম ও আশা করতে থাকলাম।’ (মুসনাদে আবি ইয়ালা ৫৮১৩)

মনে রাখতে হবে: إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ শিরক হল সব চেয়ে বড় অন্যায়। (সুরা লুকমান: আয়াত ১৩) হাদিসে পাকেও শিরককে সব থেকে বড় পাপ গণ্য করা হয়েছে। أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الشِّرْكُ بِاللهِ ...। সুতরাং শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কেউ শিরক করে ফেললে আল্লাহর কাছে তওবা করে ফিরে আসতে হবে। কেউ তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। কেননা আল্লাহ ক্ষমাশীল। এ কথাটি মহান আল্লাহ চমৎকার ভাষায় ঘোষণা করেছেন এভাবে-

اَفَلَا یَتُوۡبُوۡنَ اِلَی اللّٰهِ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَهٗ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

তারা কেন আল্লাহর কাছে তওবা করে না এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ৭৪)