নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ৫ নং বিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ও অনাস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের ৮ ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, নওগাঁ জেলা প্রশাসক, নওগাঁ স্থানিয় সরকার উপ পরিচালক, রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে। গত ৬ মার্চ বিভিন্ন দপ্তরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।
অভিযোগ কারিরা হলেন, আত্রাই ৫ নং বিশা ইউনিয়নের ৮ ইউপি সদস্যরা হলেন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান, ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রশিদ, ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য জরিনা, ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান, ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হানিফ আলী চাঁন, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিউটি বেগম, ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিন্টু সোনার, ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আত্রাই উপজেলার ৫ নং বিশা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা।
গত (৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২) ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই শুরু করেছে তান্ডব। মাত্র মাস খানেক চেয়ারম্যান হিসাবে ইউনিয়ন পরিষধ পরিচালনা করতে গিয়ে অনিয়ম দূর্নিতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ চেয়ারম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষধের ৮ ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসী।
অভিযাগ রয়েছে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গু দেখিয়ে তার আপন বড় ভাই আ: জবারের ছেলে শাকিল খান, ভাইরা ভায়ের মা হালিমা এবং সুলতান মেমম্বারের জামাই পাপ্পুকে দিয়ে নিবন্ধন প্রতি প্রকাশ্য রশিদ ছাড়ায় ২০০ টাকা এবং দ্রুত বা তাৎক্ষনিক করতে চাইল ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা করে গ্রহন করছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ক্ষেত্রে ০ দিন থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত ফ্রি, ৪৬ থেকে ৩৬৫ দিন পর্যন্ত ২৫ টাকা এবং ৫ বছরের অধিক হলে ৫০ টাকা আইন ও বিধিতে আছ। এছাড়া ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত ভিজিডি/ভিডাব্লিউবি কার্ডধারীর সংখ্যা ২৯০টি জন। গত বারের ন্যায় অনলাইন আবদন উন্মুক্ত থাকলও কার্ড বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই সংশ্লিষ্ট কমিটির বিনা মিটিং এ চেয়ারম্যান ১৪৫ টি নিজে রাখেন এবং ইউপি সদস্যদের বাঁকি অর্ধেক ভাগ করে দেন। প্রতিটি কার্ড ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। বিক্রিত কার্ডধারীদের কাছ থেকে আইডি কার্ড সংগ্রহ করে ডিজিটাল স্টার সিন্ডিকেট করে নিজের ভাতিজা সাকিলকে আদায়কারী নিবন্ধনের দায়িত্ব দিয়ে ২৯০ কার্ডের বিপরীত ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা হারসহ অন্যান্য আবদনকারীদের নিকট হতে একই পরিমান বাধ্যতামূলকভাবে টাকা আদায় করন। কার্ড বিক্রি বাবদ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা এবং ডিজিটাল স্টার আবেদন ফি বাবদ ৩ লক্ষ টাকাসহ মোট ১৮ লক্ষ টাকা এ কর্মসূচীতে চেয়ারম্যান অবৈধ ভাবে টাকা আদায় করেছেন।
এদিকে, ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত মাতৃত্বকালে মা ও শিশু সুরক্ষা ভাতা মাস প্রতি ৯ টি, সে হিসেবে জুলাই ২০২২ হতে জানুয়ারী ২০২৩ পর্যন্ত মোট বরাদ্দকৃত কার্ডধারীর সংখ্যা ৬৩ জন। ভিজিডি ও ভিডাব্লিউবি কার্ডের ন্যায় এ ভাতার কার্ডও ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকাই বিক্রয় হয়েছে এবং শুধুমাত্র সিলেকটেড ও বিক্রিত কার্ডধারীদের কাছ হতে চুক্তিমূল্যসহ আবেদন ফি বাবদ ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে যা চলমান রয়েছে। আদায়কৃত টাকার পরিমান অনলাইন আবেদনসহ প্রায় আনুমানিক কার্ড বিক্রি বাবদ প্রায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
আরো অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়নের মোট খেয়া ঘাটের সংখ্যা মোট ৬ টি তার মধ্যে ভাঙ্গাজাঙ্গাল খেয়াঘাট উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এবং বাকি ৫ টি উদয়পুর খেয়াঘাট, সুদরানা খেয়াঘাট, বৈঠাখালী খেয়াঘাট, শ্রীধরগুড়নই খেয়াঘাট এবং থলওলমা খেয়াঘাটের ইজারার ব্যবস্থা ইউপির হাতে ন্যস্ত। ইউপির নিজস্ব খেয়াঘাট হতে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা আয় হওয়ার কথা। উল্লেখ্য, সুদরানা খেয়াঘাট পরিচালনা করেন দখলে শ্রী শ্যামল হালদার, আতাব ওরফে আক্তার, আরজ আলী, হবি, গোলাপ। তাদের কাছে কোন প্রকার ইউপি অফিসে ইজারা টাকা জমার কোন প্রকার রশিদ বা প্রমানক চেয়ারম্যান দেন নাই । ইউনিয়নের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী ৪০ দিনের কর্মসূচীর আওতায় বরাদ্দকৃত শ্রমিক সংখ্যা ১৪৩ জন। চেয়ারম্যান পূর্বের শ্রমিকের নাম পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান তার নিজের সহযোগী ২৫ থেকে ৩০ জন কথিত ক্যাডারদের নাম অন্তর্ভূক্ত করেন এবং কোন প্রকার কাজ না করে তাদের মাধ্যমে চেয়ারম্যান এক অর্থ বছরে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। এসব ভুয়া শ্রমিকরা হলেন : রুবেল, আইডি নং ৭৩৩৩২৪৩১৪০ মোবাইল: ০১৮৫৮১১৪৩০১১, জাকের, আইডি নং ৬৪১০৩৩১৭৬৬৭৪২ মোবাইল: ০১৭৭০৩৮৬৬৭০,সবুজ, আইডি নং ৬৪১০৩৩১৭৬৫৯২৬ মোবাইল: ০১৭১৩৮৭৭৮৩২, হাবিবুর, আইডি নং ১৯৮৩৬৪১০৩৩১০০০০১০ মোবাইল: ০১৭৪৬২৪২৩৩৪, বাবলু শেখ, আইডি নং ৬৪১০৩৩১৭৬৭০৫৪ মোবাইল: ০১৭৭৬৬৪৭৩৮৫,গোলাম, আইডি নং ১৯৮৯৬৪১০৩৩১০০০০৯২ মোবাইল: ০১৩২২৫৫২৭৬৬ সহ আরো অনেকে।
সবচে বেশি দূর্নীতিগ্রস্থ প্রকল্প হচ্ছে টিআর কাবিখা: বর্তমান চেয়ারম্যানের অধিনে বরাদ্দকৃত বিগত এবং চলতি অর্থ বছরে সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে মিটিং না করে ইচ্ছে মত প্রকল্প গ্রহন এবং টিআর কাবিখা প্রকল্পের কাজ নাম মাত্রে এবং ওভার ল্যাপিং একই স্থানে ভিন্ন নামে প্রকল্প প্রস্তাব করে করে সমূদয় অর্থ/চাল/গম আত্মসাৎ করেছেন। অপরদিকে, গ্রাম আদালতের এখতিয়ারভুক্ত ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলার মূল্যামান ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তুু বর্তমান চেয়ারম্যান আইন-বিধিমালার তোয়াক্কা না করে সকল মামলা ও অভিযোগ গ্রহন করেন এবং প্রাথমিকভাবে আবেদনের সাথে ৫০০ টাকা গ্রহন করেন। যদিও আইন বিধি অনুযায়ী মামলার ফি ১০/২০ টাকা। এভাবে তিনি জনহয়রানিসহ অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করছেন । ইউনিয়নের আওতাধীন বা কোন ব্যক্তির প্রয়োজনে ওয়ারিশ সনদ ও ভূমিহীন সনদসহ সকল প্রকার সনদ ও প্রত্যয়ন নিতে ইউনিয়নে গেলে এজেন্ট সাকিলকে অলিখিত ফি বাবদ ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হয় চেয়ারম্যানের অংশ হিসেবে। অন্যথায়, কাউকে সনদ প্রদান করা হয় না। টিসিবির কর্মসূচীর আওতায় বরাদ্দকৃত এবং উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত তালিকাভূক্ত কার্ডের সংখ্যা ১৪৩৪ টির মত কিন্তুু চেয়ারম্যান গায়ের জোরে অনুমোদিত তালিকার সাথে সম্পর্ক না রেখে ইচ্ছেমত তার পছন্দমত ব্যক্তিদের কার্ড প্রদান করে থাকেন এবং প্রতি বারে কার্ড পরিবর্তন করে ভিন্নজনকে প্রদান করেন। কোন ক্ষেত্রে কার্ডপ্রতি ৫০ টাকা করে এজেন্টের মাধ্যমে আদায় করে থাকেন, এছাড়াও বেশ কিছু কার্ডে পন্য এজেন্টের মাধ্যমে উত্তোলন করে বাজারে বিক্রয় করে চেয়ারম্যান লভ্যাংশ গ্রহন করেন।
এলাকাবাসী জানান, চেয়ারম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ আমরা। এ অবস্থায় জাতির জনকের সোনার বাংলা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলা এবং আগামীর স্মার্ট বাংলা ও আমার গ্রাম, আমার শহর বির্ণিমানে বাধা প্রদানকারী সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের খুনি ও যাবতজীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী (মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক বর্তমানে জামিন প্রাপ্ত সরকারি আদেশ লংঘনকারী, দুর্নীতিবাজ কথিত সর্বহারার সহযোগী দেশের শত্রু আত্রাই ৫ নং বিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান স্থানিয়রা।
আত্রাই ৫ নং বিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা বলেন, এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। ইউপি সদস্য যারা অভিযোগ দিয়ে তারা আমাকে ব্ল্যকমেইল করতে এসব মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। নিয়ম নিতিমালার বাইরে কোন কিছু করা হয়নি।