১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:২২:২৪ পূর্বাহ্ন


সুস্মিতার হার্টে কীভাবে স্টেন্ট বসানো হল, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি মানে কী?
তামান্না হাবিব নিশু :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৩-২০২৩
সুস্মিতার হার্টে কীভাবে স্টেন্ট বসানো হল, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি মানে কী? সুস্মিতার হার্টে কীভাবে স্টেন্ট বসানো হল, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি মানে কী?


আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন সুস্মিতা সেন। পরীক্ষা করে ধরা পড়ে তাঁর হার্টে ব্লকেজ আছে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করারই সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি (angioplasty) করে হার্টের ব্লক ছাড়িয়ে স্টেন্ট বসানো হয় সুস্মিতার (Sushmita Sen)। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও একইভাবে হার্টে ব্লকেজ ছাড়িয়ে স্টেন্ট বসানো হয়েছে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট—এই শব্দ দুটোর সঙ্গে আমরা পরিচিত। হার্টের রোগীর অঅযাঞ্জিওপ্লাস্টি করে হৃদপিণ্ডে স্টেন্ট বসানো হয়েছে এমন খবর প্রায়ই শোনা যায়। এখন জানতে হবে এই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি আসলে কী!

করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে হার্টে ব্লক ছাড়িয়ে একটি ধাতব নল বসিয়ে দেওয়া হয়। এই ধাতব নলই স্টেন্ট। এখন জানতে হবে হার্টে ব্লকেজ হয় কেন।

চুপিসাড়ে হানা দেয় হার্টের রোগ:

হার্টের রোগের অনেক ধরন। যেমন করোনারি হৃদরোগ, কার্ডিও মায়োপ্যাথি, হার্ট ফেলিওর, উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগ, ভালভুলার ডিজিজ, হৃদপিণ্ডের ডান পাশ অচল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হার্টের রোগের মধ্যে পড়ে। তবে আমরা সবচেয়ে বেশি যে রোগের অস্ত্রোপচার করি তা হল ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ বা করোনারি হার্ট ডিজিজ। আমাদের দেশে এই হৃদরোগের চিকিৎসাই বেশি হয়। কারণ ভারতে ডায়াবেটিসে ভোগা রোগীদের সংখ্যা বেশি তাই ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের প্রকোপও বেশি। ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ (আইএইচডি) হৃদপিণ্ডের এমন এক রোগ যেখানে রক্তনালীগুলো সংকীর্ণ হয়ে হৃদপেশিতে রক্ত ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারে না। হৃদপেশিতে পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের (ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া) কারণে করোনারি আর্টারির পথ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় রক্তনালীতে চর্বি জমতে থাকে। রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে হার্টে ব্লকেজ হয়ে যায়। সেই ব্লক ছাড়ানোর জন্যই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কী?

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কোনও মেজর হার্ট অপারেশন নয়। আমাদের সারা শরীরে  জালের মতো ছড়িয়ে আছে রক্তনালী। এই পথেই রক্তের সরবরাহ হয় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। বিশুদ্ধ রক্ত যাতায়াত করে ধমনীর মধ্যে দিয়ে। দূষিত রক্তের যাতায়াতের রাস্তাকে বলে শিরা। যদি দেখা যায়, রক্তনালীতে চর্বি জমে যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে গেছে তখনই রক্তনালীর সেই ব্লক দূর করার জন্য অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়।

করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিতে, একটি স্টেন্ট (ছোট, ধাতব জাল নল) তার শেষে একটি বেলুন দিয়ে ক্যাথেটারের সাহায্যে ধমনীতে প্রবেশ করানো হয়। বেলুনটি সংকীর্ণ ধমনীকে প্রশস্ত করে এবং ধমনীর পথে যে চর্বির স্তর বা ক্যালসিয়াম জমে প্লাক তৈরি হয় সেটা পরিষ্কার করে সাফসুতরো করে দেয়। বাধা সরে যাওয়ার পর ধমনীর পথে আবার রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির আগে সিবিসি (সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা), ইসিজি (ইলেক্ট্রো কার্ডিওগ্রাফি), লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি ফাংশন টেস্ট করিয়ে নেওয়া হয়।

 নব্বইয়ের দশক কাঁপানো কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নথ ওরফে কেকে-র মৃত্যুও হয়েছিল হার্টের চারপাশে চর্বির স্তর জমার কারণে। ফরেন্সিক বিশষেজ্ঞরা হার্টের কাঁটাছেড়া করে দেখেছিলেন, কেকে-র হার্টের চারপাশে জমে ছিল চাপ চাপ চর্বির স্তর, শক্ত হয়ে গেছিল হৃদপেশি। এর মানে হল দীর্ঘদিন ধরেই অকেজো হতে শুরু করেছিল হার্ট, যা টেরই পাননি সঙ্গীতশিল্পী। হৃদপেশিতে রক্তপ্রবাহ বাধা পেয়ে আচমকাই হার্ট অ্যাটাক হয় শিল্পীর।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে ধমনীর ভেতর বেলুন ঢুকিয়ে চর্বি, ময়লার স্তর সাফ করার পরে ধমনী কুঁচকে যায়। বেলুন বের করে নেওয়ার পরে করোনারি আর্টারি সঙ্কুচিত হতে থাকে। সে জন্যই স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয়, যাতে আর্টারি স্বাভাবিক থাকে এবং তার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়।

স্টেন্ট বসানোর জন্য নতুন করে অস্ত্রোপচার করতে হয় না। রোগীর হাত বা কুঁচকির কাছ থেকে ইনসিশন (ছোট ছিদ্র) করে তার মধ্যে দিয়ে তার জন্যই স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয়, যাতে আর্টারি স্বাভাবিক থাকে এবং তার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়। এই ক্যানুলার মধ্যে দিয়ে সরু নল ঢুকিয়ে দেওয়া হয় হৃদপেশির রক্তবাহী নালি অবধি। স্টেন্ট ধাতুর তৈরি সূক্ষ্ম জালিকার মতো দেখতে টিউব যেটি একটি বেলুনের উপর বসানো থাকে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির বেলুন নয়, এটা অন্য বেলুন।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে যে ধমনী থেকে ময়লা পরিষ্কার করা হয়, সেখানেই বসানো হয় স্টেন্ট। সেই জন্য ওই বেলুন ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট করোনারি ধমনীর মধ্যে নিয়ে গিয়ে বেলুনটি ফোলানো হয়। বেলুন ফুলে তার উপর লাগানো স্টেন্ট ধমনীর দেওয়ালে আটকে দেয়। এরপর খালি বেলুন বের করে নেওয়া হয়। স্টেন্ট বসানোর পরে মাত্র দু’-তিনদিনের মধ্যেই রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যান। কার্যক্ষমতাও ফিরে আসে দ্রুত।