দেশে মুসলিম বিদ্বেষ ক্রমবর্ধমান। প্রতিবাদ করলে হতে পারে প্রাণসংশয়। তাই স্বামীকে আগলে রাখেন অভিনেত্রী রত্না পাঠক শাহ। মতপ্রকাশ করতেই দেন না ইদানীং। তবে অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহকে বেশি দিন দমিয়ে রাখা গেল না। তাঁর পরবর্তী কাজটিই যে মুসলিম ইতিহাসে সম্পৃক্ত। প্রচারে এসে ফের মুখ খুললেন তিনি।
খুব শীঘ্রই নাসিরকে দেখা যাবে সম্রাট আকবরের ভূমিকায়, জি ফাইভের সিরিজ় ‘তাজ: ডিভাইডেড বাই ব্লাড’-এ। মুঘল সাম্রাজ্যের অন্দরে ঘটা না-জানা কথা, উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব ইত্যাদি হবে এই সিরিজ়ের বিষয়।
ক্ষুব্ধ নাসিরউদ্দিনের দাবি, “মুঘলরা যদি সব কিছুই খারাপ করে থাকেন, তা হলে তাজমহল, রেড ফোর্টের মতো সৌধগুলি ভেঙে ফেলা হোক।” তাঁর মতে, মুঘলদের মহিমান্বিত করার কথা হচ্ছে না, কিন্তু তাঁদের অপমান করাও উচিত নয়।
নাসির জানান, সুস্থ বিতর্কের পরিসর এই দেশে নেই। যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করতেই অভ্যস্ত, তাঁর তাঁর বক্তব্যের অভিমুখটাই বুঝতে পারেন না। যুক্তিবুদ্ধি, ইতিহাস চেতনার অভাব বাড়ছে। ঘৃণাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এই বোধ থেকেই ভারতের এক অংশ মানুষ অতীতের সব কিছুই নিন্দার চোখে দেখে। বিশেষ করে মুঘলদের। এটা এখন তাঁকে ক্ষুব্ধ করার চেয়ে আমোদ দেয় বেশি। স্পষ্টতই শ্লেষ ঝরে পড়ে নাসিরের কণ্ঠে।
অভিনেতা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে মুঘল যুগকে নিরন্তর অপমান করে যাচ্ছেন শাসকদল, সরকারের মন্ত্রীরা। চল্লিশটি শহরের নাম বদলে গিয়েছে গত কয়েক বছরে, যেগুলি মুঘলদের নামের স্মৃতি বহন করছিল।
রাষ্ট্রপতি ভবন ‘মুঘল গার্ডেনস’-এর নাম পর্যন্ত বদলে করা হয়েছে ‘অমৃত উদ্যান’। নাসিরের মতে, এটি সমান্তরাল ইতিহাস তৈরির প্রয়াস।
মুঘলদের সমস্ত কাজকেই নস্যাৎ করে দেওয়ার প্রবণতা চলছে বলে মনে করছেন তিনি। নাসির বললেন, “বিষয়টা খুবই হাস্যকর। জনসাধারণ আকবরের মতো সম্রাট আর দস্যু নাদির শাহর বা তৈমুরের পার্থক্য জানে না। তৈমুররা লুট করতে এসেছিলেন, মুঘলরা এ দেশকেই তাদের ঘরবাড়ি বানাতে চেয়েছিলেন। কে তাঁদের অবদান অস্বীকার করতে পারবে?”
শাহ স্বীকার করে নেন, পাঠ্য ইতিহাসে দেশীয় ঐতিহ্যের তুলনায় মুঘলদের প্রতি বেশি পক্ষপাত দেখানো হয়েছে। যে ইতিহাস তাঁরা পড়েছেন তা মূলত ইংরেজরাই লিখেছেন বলে ভারতীয় ঐতিহ্য, যেমন গুপ্ত সাম্রাজ্য ইত্যাদির কথা সে ভাবে আসেনি বলে তিনি মনে করেন।
নাসিরের মতে “মানুষের ভাবনা কিয়দংশে সত্যি। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের তুলনায় মুঘলরা হয়তো মহিমান্বিত হয়েছেন ইতিহাসে, কিন্তু তাঁদের খলনায়ক বানানোও অযৌক্তিক।”