১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:০৭:০২ অপরাহ্ন


২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৩
২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন ফাইল ফটো


দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। রোববার রাষ্ট্রপতি পদে তার দুটি মনোনয়নপত্র নির্বাচনি কর্তার কাছে জমা দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। আজ মনোনয়নপত্র দুটি বাছাই করবেন এ নির্বাচনের নির্বাচনি কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। একাধিক প্রার্থী না থাকায় এ পদে ভোটের প্রয়োজন হবে না। মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা এখন আনুষ্ঠানিকতামাত্র। তিনিই বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনা ছাপিয়ে চমক দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রোববার তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুই সপ্তাহ ধরে অন্য কয়েকজনের নাম প্রকাশিত হয়।

রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। তবে জমা দেওয়ার সময়ে তিনি নির্বাচনি কর্তার কার্যালয়ে যাননি। তার পক্ষে বেলা ১১টা ও ১১টা ৫ মিনিটে দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তখন তিনি ইসির অন্য আরেকটি রুমে অবস্থান করছিলেন। দুটি মনোনয়নপত্রেই প্রস্তাবক ছিলেন ওবায়দুল কাদের। আর সমর্থক ছিলেন যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, শুকরিয়া। ভালো লাগছে। সবই সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা। এ সময় তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান।

এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় মো. সাহাবুদ্দিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ওবায়দুল কাদের নতুন রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দলের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।

তিনি পেশায় একজন আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। তার সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতঃপূর্বে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার বিভাগে) ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসাবে নির্বাচিত হন। মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মী দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারাবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্রসন্তানের পিতা এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্মসচিব ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি পদে রোববার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এদিন রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে সকাল সাড়ে ১০টার পর নির্বাচন কমিশনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, নূর-ই আলম চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. সেলিম মাহমুদসহ সিনিয়র নেতারা। এরপরই সেখানে আসনে মো. সাহাবুদ্দিন। তার পক্ষে রোববার দুটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল। ওই ফর্মে মো. সাহাবুদ্দিনের সই নিয়ে তা সিইসির হাতে তুলে দেন নেতারা। পরে তারা ইসি থেকে বেরিয়ে যান।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সিইসির পক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দুটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ দুটি আবেদন আগামীকাল (সোমবার) দুপুর একটা থেকে বাছাই করা হবে। বাছাইয়ের পর যেটা টিকবে, নির্বাচনি কর্তা তা আপনাদের অবহিত করবেন। তিনি বলেন, ‘বাছাইয়ের পরে বৈধ মনোনয়নপত্র যেগুলো হবে, তাদের নাম আপনাদের সম্মুখে ঘোষণা করব এবং আইনানুগভাবে প্রত্যাহারের শেষ তারিখে (১৪ ফেব্রুয়ারি) আমরা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করব যে কে বাংলাদেশের পরবর্তী মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হলেন। তবে যেহেতু একজনমাত্র প্রার্থী, মানে এক ব্যক্তিরই দুটি মনোনয়ন ফর্ম জমা হয়েছে, সুতরাং কাল বাছাইয়ে যদি দুটি আবেদন টিকে যায়, তাহলে কালকে এটা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’ একই ব্যক্তির দুটি আবেদন প্রসঙ্গে ইসি সচিব জানান, তিনটি পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ আছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেখানে অধিষ্ঠিত হবেন মো. সাহাবুদ্দিন।