২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৮:৫২:৩৪ অপরাহ্ন


দিনে ট্রাক শ্রমিক, রাতে ভয়ংকর ডাকাত!
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৩
দিনে ট্রাক শ্রমিক, রাতে ভয়ংকর ডাকাত! ট্রাক নিয়ে ডাকাতি করে এমন দুই ধরনের চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত


দিনে করে ট্রাক শ্রমিকের কাজ; রাতে হয়ে ওঠে ভয়ংকর ডাকাত! সম্প্রতি এমন একটি চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলছে, রাজধানীর উপকণ্ঠে এমন অন্তত ১০টি চক্র সক্রিয়।

একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ট্রাক নিয়ে লুটপাট করে এমন দুই ধরনের ডাকাত চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। 

সিটি ক্যামেরার ফুটেজে দেয়া যায়, ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টায় রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরের রাকিন সিটির পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচ থেকে পাঁচ টন রড ডাকাতি করে একটি ট্রাকে করে পালিয়ে যায় ৭ থেকে ৮ সদস্যের একটি ডাকাত দল।

পরে ট্রাকটির গতিবিধি পর্যালোচনা করতে গিয়ে প্রায় ৫০০ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব রাস্তার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডাকাতি করা রড আনলোড করা হয়েছে, রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায়।

কাফরুল থানা পুলিশ এ ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্যে পরে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে সরাসরি ডাকাতির কাজে জড়িত ছিল ৩ জন; বাকি ৬ জন ডাকাতি করা রড ক্রয়-বিক্রয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য।

সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটির ৯ সদস্যকে গ্রেফতারের পর পুলিশ জানতে পারে ট্রাক দিয়ে ডাকাতি করে এমন ২ ধরনের চক্র রয়েছে। একটি চক্র মহাসড়কে বা যানজট নেই এমন এলাকায় পণ্যবাহী কোনো ট্রাককে আরেকটি ট্রাক দিয়ে চাপ দিয়ে গতিরোধ করে। পরে ওই ট্রাকে থাকা পণ্যদ্রব্য ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এ চক্রটির নাম চাপ গ্রুপ।

আরেকটি চক্রের নাম সাইট গ্রুপ। এ গ্রুপের ডাকাতদের টার্গেট নিমার্ণাধীন কোনো ভবনের নিচে থাকা রড ও সিমেন্ট। গভীর রাতে তারা একটি ট্রাক নিয়ে টার্গেট করা ভবনের নিচে গিয়ে প্রথমে নিরাপত্তারক্ষীকে আটকে ফেলে। পরে ডাকাতি করে নিয়ে যায় নির্মাণসামগ্রী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম জানান, ট্রাক নিয়ে ডাকাতি করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের গ্রুপ রয়েছে। একটি চাপ গ্রুপ, আরেকটি সাইট গ্রুপ। চাপের বিষয়টা হচ্ছে, কোনো একটি ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান মালামাল নিয়ে মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় আরেকটি ট্রাক এসে সেটির গতিরোধ করে চাপ দেয়। তারপর ওই চালক ও সহকারীকে জিম্মি করে মালামাল লুট করা হয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, আরেকটা সাইট গ্রুপ আছে। অর্থাৎ, বিভিন্ন টার্গেটেড লোকেশন থাকে; যেখানে তারা ডাকাতির কাজ করবে। তাদের জন্য অ্যাডভান্স একটা পার্টি আছে। তাদের বলা হয় সার্ভেয়ার। প্রতি সপ্তাহে ন্যূনতম একটা কাজ করার লক্ষ্য তাদের। তারা খোঁজখবর করতে থাকেন, কোথায় কোন সাইটে তুলনামূলকভাবে সহজে ডাকাতি করা যাবে।

ডিএমপির এ সহকারী পুলিশ কমিশনার বলেন, সাইট প্যাটার্নে ডাকাতি করা গ্রুপটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণ সামগ্রী অথবা মহাসড়কের পাশে থাকা কিছু দোকান টার্গেট করে। টার্গেটেড জায়গায় গিয়ে তারা ট্রাকটা এমনভাবে রাখে যে দেখে মনে হবে, তারা কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার জন্য সেখানে অবস্থান করছে। যে জায়গাটাতে তারা ডাকাতি করবে, সেটা তারা ট্রাক দিয়ে আড়াল করে ফেলে ওপাশ থেকে যেন কিছু দেখা না যায়। সাইটটাকে মানুষের চোখ থেকে আড়াল করে মালামাল লুট করে পালিয়ে যায় চক্রটি।  

হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম বলেন, ডাকাত চক্রটি সব সময় নিরাপদ মনে করে ঢাকা শহরের বর্ডার এলাকাটাকে। কারণ সেখান থেকে সহজেই ডাকাতির কাজটা শেষ করে তারা মহাসড়কে উঠে পালিয়ে যেতে পারে। ট্রাক নিয়ে যারা ডাকাতি করে, তাদের সাধারণভাবে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, এটা তাদের পেশা। তারা দিনের বেলায় অন্য ট্রাক শ্রমিকদের মতোই মালামাল বা নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের কাজ করেন। তবে রাতের অন্ধকারে হয়ে ওঠেন ভয়ংকর ডাকাত।

ডিএমপির তথ্যমতে, সাইট গ্রুপ সাধারণত নরায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে সক্রিয়। চাপ গ্রুপ সক্রিয় মহাসড়কে। এ দুই গ্রুপের ৮ থেকে ১০ জনের অন্তত ১০টি দল রাজধানীর আশপাশের এলাকায় সক্রিয়। ডাকাতি করা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের একটি সিন্ডিকেটেরও সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।