১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৩৯:৫৮ পূর্বাহ্ন


বড় পরিবর্তন আসছে কর ব্যবস্থাপনায়
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০২-২০২৩
বড় পরিবর্তন আসছে কর ব্যবস্থাপনায় ফাইল ফটো


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমোদন করা ঋণ পেতে বাংলাদেশকে আগামী চার বছর সংস্কারের মধ্যে থাকতে হবে। এর মধ্যে কর ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য চলতি বছরেই বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। আর ২০২৬ সালের মধ্যে সব ধরনের সংস্কার শেষ করতে হবে।

আইএমএফ আগামী ৪২ মাসে ৪৭০ কোটি ডলারের অর্থ সাহায্য দেবে। নানা খাতের সংস্কারের শর্তেই বাংলাদেশ এ ঋণ পেতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছে। রাজস্ব খাতে আইএমএফের শর্তপূরণ করতে আগামী তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে রাজস্ব হিসেবে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই আদায় বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

আইএমএফের শর্তই হচ্ছে কর-জিডিপির অনুপাতে প্রতিবছর সরকারকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৩

করার শর্ত দিয়েছে। এই শর্তপূরণ করতে গেলে বর্তমানে যে রাজস্ব আয় আছে, তার থেকে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করতে হবে। পরের অর্থবছরের (২০২৪-২৫) শেষে কর-জিডিপির অনুপাত হতে হবে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। তাতে বর্তমান রাজস্ব আয় থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে। আর আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এই অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত আরও ৯৬ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে। সব মিলিয়ে আগামী তিন অর্থবছর শেষে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন অবস্থানের দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে পারছে না। দেশে এখন স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় জিডিপির ১ শতাংশের কম। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মান হচ্ছে ৩ থেকে ৫ শতাংশ। আর শিক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ, যা ইউনেস্কোর ঠিক করা লক্ষ্যের অর্ধেক।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে আইএমএফের সংস্কার শর্তাবলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর-ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে কর্মসূচি শুরু করেছে। আইএমএফ যেসব সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে, তার মধ্যে একটি হলো শুল্ক আইনের সংশোধন। এদিকে, রাজস্ব বোর্ডও এই সংস্কার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইতোমধ্যেই প্রস্তাবিত আইনটি সংসদে জমা দিয়েছে।

এ ছাড়া, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি মিডটার্ম রাজস্ব কৌশল বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। এসব কৌশল বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ঝুঁঁকিগুলোকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা ও প্রশমিত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ঝুঁঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট (সিআরএমইউ) প্রতিষ্ঠা করবে এনবিআর।

অন্যদিকে, আইএমএফ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক শাখার মধ্যে তথ্য ভাগাভাগি জোরদার করার বিষয়েও কথা বলেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। তা ছাড়া প্রতি মাসের রাজস্বসংক্রান্ত তথ্য পরবর্তী ৬ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করার শর্ত রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতি মাসের তথ্য এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও মাঝে মাঝে কোনো কোনো তথ্য প্রকাশ করতে দেরি হয়।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, আইএমএফ যেসব শর্তের কথা বলেছে, এসব কথা আমরাও আগে থেকে বলে আসছি। এ সংস্কারগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন। শর্তগুলো যৌক্তিক। এগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে সুফল মিলবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ আমাদের সময়কে বলেন, আইএমএফ যেসব সংষ্কারের কথা বলেছে তা নতুন কিছু নয়। আমাদের সামষ্টিক অর্থীতিতে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো পরিপালনের কথা বলেছে। মূলত অর্থনীতিতে যেসব দুর্বলতা রয়েছে তা বাড়িয়ে সক্ষমতা অর্জনের কথা বলা হয়েছে।