২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০২:৫৩:৪৬ অপরাহ্ন


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই আদালতে এক মাস ধরে অচলাবস্থা কেন
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০২-২০২৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই আদালতে এক মাস ধরে অচলাবস্থা কেন ফাইল ফটো


বিচারকদের সঙ্গে আইনজীবীদের অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে প্রায় এক মাস ধরে অচলাবস্থা চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আদালতে। দুই বিচারক ও এক নাজিরকে অন্যত্র সরানোর দাবিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ বর্জন করে আসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতি। আজ বুধবার থেকে এ দুটিসহ জেলার সব আদালতে যাওয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

ফলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি আজ থেকে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আদালত–সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা।

গত রবি ও সোমবার পরপর দুই দিন সকালে জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগারের আদালতে গিয়ে কোনো বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীকে দেখা যায়নি। তবে বিচারক ও আদালতের কর্মকর্তারা ছিলেন। গত সোমবার এই আদালতের কার্যতালিকায় ৪০টির বেশি মামলা ছিল। সেসব মামলার নতুন তারিখ পড়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সিদ্ধান্ত মেনে এবং তাঁর প্রতি সম্মান রেখে আমরা দুই বিচারকের আদালত ছাড়া বাকি সব আদালতে ফিরে গেছি। আইনমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাস পূরণ না হওয়ায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে। ১৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে আশ্বাস পূরণ না হলে সাধারণ সভা করে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তানভীর ভূঞা, আইনজীবী সমিতির সভাপতি

প্রায় একই পরিস্থিতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতেরও। যদিও এই আদালত গত দুই দিন কয়েকটি মামলায় আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন। ওই আদালতের বারান্দায় কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, শ্বশুরকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর এক স্বজনের জামিন আবেদন দাখিল করতে এসেছেন। অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে

আদালত-সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা জানান, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার বিচারপ্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে এসে থাকেন। গতকালের ঘোষণা অনুযায়ী, আজ থেকে সব আদালতে আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের এমন পরিস্থিতির উদ্ভব কেন হলো? আদালতের অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর শীতকালীন ছুটির আগে আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন নির্ধারিত সময়ের পর নিয়ে যাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক তিনটি মামলা গ্রহণ করেননি। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিচারককে মামলা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তারপরও মামলা না নেওয়ায় এ নিয়ে বাদানুবাদ হয়।

এরপর জেলা আইনজীবী সমিতি মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। ছুটি শেষে ১ জানুয়ারি আদালত খোলা হয়। এদিন বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন শুরু করেন আইনজীবীরা। এরপর জেলা জজের পক্ষ থেকে সমিতির নেতাদের ডাকা হয়। তবে আইনজীবী নেতারা প্রকাশ্য আদালতে মতবিনিময় করার কথা বলেন। গত ২ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মতবিনিময়ের সময় নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারিক কার্যক্রম চলছিল। তখন ওই বিচারককে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন কিছু আইনজীবী। বিচারকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনাও ঘটে। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও চিত্র পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

রাজশাহীর সকল খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা জজ শারমিন নিগার ৩ জানুয়ারি বিচারকদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এদিন সকালে জেলা জজ আদালতের সামনে আইনজীবীরা জড়ো হয়ে হইহুল্লোড় শুরু করেন। তখন মুঠোফোনে ভিডিও করতে এসে আদালতের এক কর্মচারী লাঞ্ছিত হন। এর পরদিন ৪ জানুয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন আদালতের সব এজলাসের দরজা ও প্রধান ফটকে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করে। একই দিন আগের ঘটনা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান আইনজীবীরা। ৫ জানুয়ারি সকালে কর্মচারীরা তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। তবে ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা কর্মবিরতির ডাক দেন, যা এখনো চলছে।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের ‘অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের’ অভিযোগে হাইকোর্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর ভূঞাসহ তিন আইনজীবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন। এ বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে শুনানির দিন রয়েছে।

এ ছাড়া এজলাস চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান এবং বিচার বিঘ্নিত করার অভিযোগে জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামসহ ২১ আইনজীবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল হয়েছে। এ বিষয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে শুনানির দিন রয়েছে।

রুল শুনানির অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় গতকাল ষষ্ঠ দফায় কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতি। এ অবস্থার অবসান কবে হবে, জানতে চাইলে আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা গতকাল বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সিদ্ধান্ত মেনে এবং তাঁর প্রতি সম্মান রেখে আমরা দুই বিচারকের আদালত ছাড়া বাকি সব আদালতে ফিরে গেছি।

আইনমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাস পূরণ না হওয়ায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে। ১৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে আশ্বাস পূরণ না হলে সাধারণ সভা করে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’