২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৫:৫০:০৫ পূর্বাহ্ন


পারস্পরিক মূল্যায়নে সুখময় দাম্পত্যজীবন
ধর্ম ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৩
পারস্পরিক মূল্যায়নে সুখময় দাম্পত্যজীবন ফাইল ফটো


পবিত্র কোরআনের একটি সুরার নাম নিসা। নিসা অর্থ নারী। নারীদের নামে সুরার নামকরণই প্রমাণ করে ইসলামে নারীসমাজের মর্যাদা কত বেশি। সুরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাকো। তোমরা আত্মীয়তার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন আছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১)

আমি মনে করি, নারীদের ব্যাপারে ইসলামের চিন্তা ও দৃষ্টিকোণ, নারী-পুরুষের পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্য ও সম্পর্কের রূপরেখা প্রসঙ্গে উল্লিখিত আয়াত একটি পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, নারী ও পুরুষ উভয় শ্রেণির সৃষ্টি একই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে জড়িত যেন তারা একই দেহের দুটি অঙ্গ। পুরুষ ও নারীর শারীরিক গঠনে কিছুটা পার্থক্য থাকার কারণ হলো, যেন তারা সুখ-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে।

আল্লাহ নারী ও পুরুষকে এক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর সেই সত্তাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। তবে এই বিভাজনে কোনো বিরোধ বা বৈরিতা নেই, বরং তাদের সমন্বয়ে এমন এক কেন্দ্রিকতা তৈরি হয়েছে তা থেকে মানবজাতির বিকাশ ঘটছে। আর তা সম্ভব হচ্ছে তাদের ভেতর আল্লাহ যে বন্ধুত্ব, প্রেম-ভালোবাসা ও কল্যাণ-বরকত দান করেছেন তার বদৌলতে। ফলে মাত্র দুজন মানুষ থেকে আজ শতকোটি মানুষের বিস্তার ঘটেছে। এই মানুষের সংখ্যা এত বেশি যে পৃথিবীর কোনো শক্তির পক্ষে, কোনো উপায় অবলম্বন করে তার সঠিক সংখ্যা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কেননা প্রতি মুহূর্তে মানুষের জন্ম ও মৃত্যু হচ্ছে। আর সেটি ইঙ্গিত করতেই আল্লাহ ‘অগণিত’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।

এরপর আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা পরস্পরের কাছে চাও।’ কোরআনে আল্লাহ প্রথমে এই বৈপ্লবিক ধারণা পেশ করেন যে, মানবজাতির প্রতিটি সদস্য পরস্পরের মুখাপেক্ষী। প্রত্যেকেই অপরের কাছে কিছু না কিছু চায় বা চাওয়ার আছে। প্রতিটি মানুষ অন্যের ওপর কোথাও না কোথাও নির্ভরশীল। আর এভাবেই আল্লাহ মানবসমাজে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। নারী ও পুরুষও এই নির্ভরতার জায়গায় ব্যতিক্রম নয়। কোনো পুরুষ নারীকে ছাড়া তার আল্লাহ প্রদত্ত ও স্বভাবধর্মী যাত্রা সুন্দর ও আনন্দময় করতে পারে না। আবার কোনো ভদ্র-সভ্য নারী জীবনসঙ্গী ছাড়া জীবনের সুখ খুঁজে পাবে না। মানুষ যখন পরস্পরের নির্ভরতার দিকগুলো বিবেচনা করবে, তখন সে জীবনসঙ্গীকে মূল্যায়ন করতে পারবে। তখন তাদের দাম্পত্যজীবন সুখময় ও সুন্দর হবে।



তামিরে হায়াত থেকে মুফতি আবদুল্লাহ নুরের ভাষান্তর