২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:৪২:৩০ অপরাহ্ন


শিশু মারমুখী ও আগ্রাসী আচরণ করলে কী করবেন?
ফারহানা জেরিন:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০১-২০২৩
শিশু মারমুখী ও আগ্রাসী আচরণ করলে কী করবেন? ফাইল ফটো


সাধারণত তিন থেকে আট বছর বয়সী শিশুদের কারো কারো মধ্যে মারকুটে স্বভাব বেশি দেখা যায়। হঠাৎ মার, কামড়, খামচি দেওয়া, অন্য শিশুর খেলনা কেড়ে নেওয়া, চিত্কার-চেঁচামেচির মতো স্বভাব দেখা যায়। খেলনা কেড়ে নেওয়া, নিজের সঙ্গে একটু মতের অমিল হলেই রাগে ফেটে পড়ে। এর সঙ্গে যদি পারিবারিক কলহ, মা-বাবার ঝগড়া কিংবা বিচ্ছেদ দেখে তাহলে তো কথাই নেই। এর প্রভাব পড়ে শিশুর মনে। এর প্রভাবে মারমুখী স্বভাবের হয় শিশুরা। এক সময় বড়দের ধারণা ছিল মার না খেলে ছোটরা নাকি মানুষ হয় না। কিন্তু সময় বদলেছে। এই ধারণার বিপক্ষে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা। মার খাওয়ার কারণে ছোট থেকে মারমুখী হয়ে উঠতে পারে শিশুরা।

অনেক শিশুর মধ্যে আবার ছোট থেকে এমনিতেই মারমুখী স্বভাব দেখা যায়। তাদের অবাধ্য হলে বা কথা না শুনলে মারমুখী আচরণ ও ভাঙচুর শুরু করে। রেগে গেলে তো কথাই নেই। কিল, ঘুষি, লাথি থেকে শুরু করে খামচি, কামড় পর্যন্ত বসিয়ে দেয়। শিশুর মধ্যে এমন আচরণ দেখা গেলে রেগে যাওয়া যাবে না বা উল্টো তার গায়ে হাত তোলা যাবে না। ধৈর্য ধরে শিশুর মারমুখী আচরণের প্রবণতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কোনো কারণে অধৈর্য হলে শিশুর মধ্যে এই মারমুখী আচরণ আরো বেড়ে যাবে।

অনেক সময় সন্তানকে সুপথে আনতে বা আচরণ পরিবর্তনে শিক্ষকদেরও সন্তানকে মেরে শাসন করতে বলেন অভিভাবকরা। এমনটাও করা যাবে না। মারমুখী সন্তানকে মেরে শাসন করা যাবে না। এতে উল্টো ফল হবে। মার খাওয়ার কারণে ভয়, লজ্জা, ঘৃণা ও অপমানবোধ নিয়ে বড় হবে তারা। শারীরিক শাস্তিতে ভোগা শিশুরা বড় হয়ে নিজের শিশু, স্বামী-স্ত্রী ও কাছের আত্মীয়দের ওপরও চড়াও হতে পারে। মনে রাখতে হবে ছোটদের মেরে কখনোই নিয়ম মানা বা শৃঙ্খলায় ফেরানো যায় না।

শিশু মারকুটে হলে মা-বাবার রাগ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই রাগ শিশুর ওপর ঝাড়তে যাওয়া যাবে না। মা-বাবাকে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। এ সময় শিশু ও তার মা-বাবার পাশে যাঁরা থাকেন তাঁদেরও সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। শিশুর সঙ্গে সার্বক্ষণিক মা-বাবা থাকেন। তাই তাঁদেরই বেশি সচেতন থাকতে হবে। মারকুটে শিশু অন্য আরেকটি শিশুর গায়ে হাত তুললে সেই শিশুটির মা-বাবার সামনে ভালো সাজার জন্য নিজের শিশুকে শাসন করে অনেকেই। এই শাসনে সীমা অতিক্রম করা যাবে না। বরং মার খাওয়া শিশু ও তার মা-বাবার সামনে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। এরপর নিজের সন্তানকে ভালো ও মন্দের পার্থক্য সম্পর্কে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে।

সন্তানের বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। দরকারে শাসন করতে পারেন। তবে শাসন করতে গিয়ে শিশুর গায়ে হাত তোলা যাবে না। শিশুকে শাসনের চেয়ে জরুরি আদর করা। সন্তান যেমনই হোক কখনোই তাকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করা যাবে না। সে যেন মনে না করে যে মা-বাবা তাকে ভালোবাসে না। আদর ও শাসনের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

শিশু একটু বড় হতে শুরু করলে ওকে বিভিন্ন কাজ দিতে হবে। কাজ শেষে পুরস্কৃত করতে হবে। এতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা শুরু করবে। কোনো কথার অবাধ্য হতে চাইবে না বা আপত্তি করবে না। শিশুরা প্রশ্ন করতে ভালোবাসে। জানার আগ্রহ শিশুদের মনে বেশি। কখনো প্রশ্নের জবাব না পেলে বা মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হলে তাদের মারকুটে স্বভাব বেশি প্রকাশ পায়। তাই শিশুর সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। শিশুর প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যা বলা বা একেক সময় একেক উত্তর দেওয়া যাবে না। একেক সময় একেক উত্তর পেলেও রেগে গিয়ে মারমুখী আচরণ শুরু করতে পারে। বাচ্চার প্রতি সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। রেগে গিয়ে অন্য কারো গায়ে হাত তোলার আগেই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। শিশু কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কাণ্ড ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে তাকে শাসন করা যাবে না। আবার খুব বেশি দেরিও করবেন না। এতে ঘটনাটি পুরোপুরি ভুলে যাবে। ঘটনার আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।

শিশুকে শাসন করতে তার প্রিয় খেলনার ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া, টেলিভিশন কম দেখতে দেওয়া, প্রিয় খাবার কম খেতে দেওয়ার কথা বলা, বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার মতো তার প্রিয় জিনিস কমিয়ে দিতে পারেন। এতে সে মারমুখী স্বভাব বদলাতে মনোযোগী হবে। সন্তান যেসব কারণে রেগে যায় বা মারমুখী হয়ে ওঠে সেসব দিক সম্পর্কে সর্তক থাকতে হবে। প্রয়োজনে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।