বিচার দিবসে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি হবেন আল্লাহ। সেদিন প্রতেক্য বনি আদমকেই আল্লাহ তাআলার দরবারে দুনিয়ার প্রতিটি কর্মের হিসাব দিতে হবে। সেদিন আল্লাহর বিচারালয়ে মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে তাঁর বিধি-বিধান মেনে চলার পাশাপাশি তাঁকে বেশি বেশি ভয় করা।
আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি ভয় পোষণকারীকে ভালোবাসেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে ওই ব্যক্তির দ্বারা কোনো অন্যায় বা গোনাহের কাজ করা সম্ভব হয় না। আল্লাহর ভয় মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন-হাদিসের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহকে ভয় করার কথা বার বার বলেছেন।
আল্লাহকে কেন ভয় করতে হবে? এ ভয়ের ধরন ও তাৎপর্য কী? তাফসিরকারগণ কিয়ামতের দিন আল্লাহকে ভয় করার ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, ভয় হবে দু’ধরণের-
প্রথম ভয়: দুনিয়ার ওই সব ব্যক্তির ভয় যারা আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধান যথাযথ পালন না করতে পারে নাই। দুনিয়ার জীবনে তাদের কৃত অপরাধের কারণে তাদের অন্তরে জাগ্রত আল্লাহ তাআলার কঠিন শাস্তির ভয়।
দ্বিতীয় ভয়: দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা ইবাদত-বন্দেগি ও তাঁর বিধি-বিধান পালন করা সত্ত্বেও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা, তাঁর অনন্ত অসীম ক্ষমতা ও কুদরাতের কারণে মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবে যে ভয়ের উদ্রেক হয়; সেই ভয়।
যারা আল্লাহর পথে জীবন পরিচালন করে এবং কুরআন হাদিসের মতের ওপর অটল ও অবিচল থাকবে; কিয়ামতের দিন তাদের কোনো ভয় থাকবে না ঠিকই কিন্তু আল্লাহ তাআলার অসাধারণ প্রভাব-দাপট ও একচ্ছত্র ক্ষমতার ভয় সব সময় তাদের অন্তরে থাকবে। আর আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তরে এ ভয়ই বেশি হয়ে থাকে।
আল্লামা আলুসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমার ভয়; বান্দার হৃদয়ে তা হবে পরিপূর্ণ ভাবে। আর যারা তার সর্বাধিক আপন, তাদের ভয় অত্যন্ত বেশি।
হাকিমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরকালে আল্লাহর ভয়ের দৃষ্টান্ত এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যদি তার আইনজীবী এ মর্মে নিশ্চিত করেন যে, এ মামলায় কোনো শাস্তি এবং ভয়ের কারণ নেই; তারপরও অভিযুক্ত ব্যক্তির মনে স্বভাবগতভাবে অবশ্যই ভয় থাকবে যে, কি জানি কি হয়।’
উল্লেখিত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে পরকালে ক্ষমা করবেন শুধুমাত্র তাঁকে ভয় করার কারণে।
যারা আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি ভয় করে তাদের দ্বারা দুনিয়াতে কোনো অন্যায়-অপরাধ করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর কাছে তাঁকে ভয়কারীর মর্যাদা অনেক বেশি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে শান্তি ও কল্যাণ লাভে দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর বিধানকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।