সব প্রশংসা ও গুণগান মহান আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি বিশ্বগজতের মালিক। শতকোটি দরুদ ও সালাম নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি। যিনি উম্মতের দরদি নবি। মুমিন মুসলমানের সব কাজই হবে আল্লাহ তাআলাকে রাজি এবং খুশি করার জন্য। দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহ তাআলার হুকুম-আহকাম জীবনভর পালন করতে হবে এবং মানুষের মাঝে দ্বীনের কাজকে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আল্লাহ তাআলা অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হজতর মুসা আলাইহিস সালামকে পাঠিয়েছেন। নিজ পরিবার ও দুনিয়ার মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌছে দিতে যুগে যুগে অসংখ্য নবি রাসুল পাঠিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য, দ্বীন কায়েমের জন্য সর্বশেষ বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। দাওয়াতে দ্বীনের এ জিম্মাদারি এখন তাঁর উম্মতের ওপর। শেষ নবির উম্মত হিসেবে দাওয়াতে দ্বীনের এ জিম্মাদারির দায়িত্ব মুমিন মুসলমানকেই পালন করতে হবে।
যতদিন দুনিয়াতে দ্বীন কায়েম থাকবে; ততদিন দুনিয়াও টিকে থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে দাওয়াতি কাজ করে গেছেন।
দ্বীনের দাওয়াতের মেহনত থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মাঝে দাওয়াতে দ্বীনের কাজ কমে গেছে। এ কারণেই মুসলমান পদে পদে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আসবে তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানো এবং মৃত্যুর কোনো সিদ্ধান্তই পরিবর্তন হবে না। আল্লাহ তাআলা তাঁর এ সিদ্ধান্তের কথাও কোরআনে পাকে ঘোষণা করেছেন-
‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে; সব কিছুই একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে। শুধুমাত্র আল্লাহর স্বত্ত্বাই চিরস্থায়ী; যার কোনো শুরু নেই এবং শেষও নেই। আল্লাহ আগে ছিলেন; যারে আগে কোনো কিছু ছিল না এবং তিনি সব কিছুর পরে স্থায়ী থাকবেন; যার পরে কোনো কিছুই থাকবে না।'
মনে রাখতে হবে
সৃষ্টিকূলের শুরু আছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কোনো শুরু নেই। প্রকাশ্যে যা কিছু হয় তা তিনি দেখেন, আর যা গোপনে হয় তাও তিনি দেখতে পান। আল্লাহর দৃষ্টি সীমার বাইরে কিছুই নেই, এমনকি একটি অনুও নেই। সবকিছুই তার দৃষ্টিসীমার অন্তর্ভূক্ত।
আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি সব কিছু জানেন। এমন কোনো জিনিস নেই যা তার জ্ঞানের বহির্ভূত। এমন সময়ও ছিল, যখন পৃথিবীর কোনো বস্তু সম্পর্কে কারো কোনো খবর ছিলো না, মানুষ ছিল না, মানুষ সম্পর্কে কোনো আলোচনাও ছিল না; তখনও আল্লাহ তাআলা ছিলেন। আল্লাহর ক্ষমতার কত দৃষ্টান্ত মানুষের চোখের সামনে বিদ্যমান।
আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ নেই যে, তিনি খেজুর গাছ থেকে খেজুর বের করতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ নেই, যিনি বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন করতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ নেই, যিনি মানুষের জীবন দান করতে পারেন।
মানুষের জন্য বিশেষ সতর্ক এই যে, এ দুনিয়া ধোঁকার ঘর, এ দুনিয়া হলো ধোঁকার জীবন। সুতরাং মানুষকে এ ধোঁকার জীবন থেকে বেঁচে চলতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
‘তুমি (দুনিয়ার ধোঁকা ও রঙ-তামাশা) এসব কিছু হতে আমার দিকে ফিরে আসো, আমার নৈকট্য অর্জন করতে চেষ্টা করো, তুমি যদি আমাকে (মাওলাকে) পেয়ে যাও; তাহলে জেনে নিবে, তুমি দুনিয়ার সব কিছু অর্জন করতে পেরেছ। আর যদি তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলো (নৈকট্য অর্জনে ব্যর্থ হও) তাহলে মনে রাখবে, তুমি পৃথিবীতে সব কিছু হারিয়ে ফেলেছো।’
সুতরাং শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনই হবে আমাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসো। তোমরা (আল্লাহকে ছাড়া) কোথায় পলায়ন করছ? তোমরা কোথায় (কোন কাজে) ব্যস্ত হয়ে পড়ছ। সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে এসো।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনের উপদেশমূলক বক্তব্য অনুযায়ী কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশিত পথে তথা আল্লাহর পথে জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।