আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক গড়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে তাকওয়া। তাকওয়া দ্বারা আল্লাহর ভয়কে বোঝানো হয়েছে। ভয় করার নির্দেশ প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তাআলাকে ভয় করাও ইবাদাত। তাকওয়া বা আল্লাহর ভীতি যেহেতু ইবাদাত। তাই তাকওয়া অবলম্বনে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার সুযোগ। তাহলো-
১. যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে এরূপ গুণের অধিকারীর জন্য রয়েছে পুরস্কার। আল্লাহ বলেন-
এ পুরস্কার তাদের জন্যই যারা আমার সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার শাস্তিকে ভয় করে। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ১৪)
২. মানুষের মনের ভয়ই আল্লাহ আশা করেন। বাহ্যিক কোনো ইবাদতই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, যা মানুষ মুখে আল্লাহর জন্য করে বলে ঘোষণা দেয়। আল্লাহ বলেন, পশুর গোশত, রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)
৩. তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ের ফজিলতে হজরত আদম আলাইহিস সালামের সন্তানদের কোরবানি সম্পর্কে কোরআনে এসেছে- হে নবি! আপনি তাদেরকে আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্রের কাহিনিটিও পুরোপুরি শুনিয়ে দিন। তারা দু’জনেই কোরবানি করল, তখন তাদের একজনের কোরবানি কবুল করা হলো আর আরেক জনেরটা কবুল করা হলো না। সে বলল আমি তোমাকে হত্যা করব। উত্তরে (যার কোরবানি কবুল করা হয় সে) বলল, আল্লাহ শুধুমাত্র মুত্তাকিদের তথা তাঁকে ভয়কারীদের মানত কবুল করে থাকেন। (সুরা মায়িদা : আয়াত ২৭)
৪. তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য রয়েছে কল্যাণের ঘোষণা। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তারা ঈমান আনতো এবং আল্লাহকে ভয় করে চলতো (পরহেজগার হতো), তবে তারা আল্লাহর কাছ থেকে অধিক কল্যাণকর প্রতিদান পেত। যদি তারা জানতো। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১০৩)
৫. আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হলে দুটি বিষয়ের ওপর আমল করতে হবে। আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করার পাশাপাশি সত্যবাদী-পরহেজগার ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন-
‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১১৯)
এ আয়াতে কারিমায় দুটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে-
একটি হলো: তাকওয়া বা মহান আল্লাহর ভয়।
দ্বিতীয় টি হলো: সত্যবাদীদের সঙ্গী হওয়া।
দুনিয়ার প্রতিটি কাজে যেমন আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি ভয় করতে হবে। তেমিন আল্লাহকে যারা বেশি বেশি ভয় করে সাদেকিন বা সত্যবাদী তাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তবেই সম্ভব মহান আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেয়ামত কবে (সংঘটিত হবে)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (পাল্টা প্রশ্ন করে) বললেন, ‘তুমি তার (কেয়ামতের) জন্য পাথেয় সঞ্চয় করেছ কি? সে বলল, ‘আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসা।’ তিনি বললেন, ‘তুমি তারই সঙ্গেী হবে যাকে তুমি ভালোবাস।’
দুনিয়ার প্রতিটি কাজে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করা উচিত। কারণ একদিন তাঁর কাছে প্রত্যেকটি কাজের জন্যই জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্ণ তাকওয়াবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।