নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়তে হয়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম সালাম দেওয়ার নিয়ম-পদ্ধতি শিখেছেন কিন্তু দরূদ পড়বেন কীভাবে? সাহাবায়ে কেরাম এ সম্পর্কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন তিনি দরূদ পড়ার বিষয়টি একাধিক হাদিসে এভাবে তুলে ধরেছেন-
১. হজরত আবদুর রহমান ইবনু আবু লাইলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, হজরত কাব ইবনু উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার সঙ্গে দেখা করে বললেন- আমি কি আপনাকে এমন একটি হাদিয়া দেব না; যা আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি?
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ’, আপনি আমাকে সে হাদিয়া দিন। তিনি বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর কিভাবে দরূদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ তো (কেবল) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাম করব। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা এভাবে বলো-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন; কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিনও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন; কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন; যেভাবে আপনি ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহিম আল্লাইহিস সাালম ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
২. হজরত আবু হুমাইদ সাইদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর কিভাবে দরূদ পাঠ করব? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন; তোমরা বলো-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আযওয়াঝিহি ওয়া জুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা আলা আলি ইবরাহিমা; ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আযওয়াঝিহি ওয়া জুররিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাজিল করুন; যেভাবে আপনি রহমত নাজিল করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর এমনিভাবে বরকত নাজিল করুন যেভাবে আপনি বরকত নাজিল করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুসলিমাহকে দরুদ পড়ার নিয়ম ও পদ্ধতি শিখিয়েছেন। যাতে তারা সব সময় নবিজীর প্রতি দরুদ পড়তে পারেন এবং নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে দরুদ পড়তে পারেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো পদ্ধতিতে নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ শরিফ পড়া। হাদিসের ওপর আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের শেষ বৈঠকে উল্লেখিত দরুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। নবিজী ও তাঁর পরিবারের প্রতি রহমত ও বরকত কামনা করার মাধ্যমে পরকালে তাঁর সুপারিশ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রাজশাহীর সময় / এফ কে