ওহুদের যুদ্ধে অনেক সাহাবি যখম হয়েছিলেন। যাদের অনেকে নড়াচড়াও করতে পারছিলেন না। এমন সময় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগের দিন চলে যাওয়া কুরাইশ মুশরিকদের পিছু ধাওয়া করার সিদ্ধান্ত নিলেন। জানতে চাইলেন কারা কারা যাবেন? যারা যেতে ইচ্ছুক হলেন তাদের মধ্যে আগের দিন যখম হওয়া সাহাবিও ছিলেন। তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কারের ঘোষণা। কোরআনের আয়াতে আল্লাহ তাআলা সে ঘটনা ও ঘোষণা এভাবে তুলে ধরেছেন-
اَلَّذِیۡنَ اسۡتَجَابُوۡا لِلّٰهِ وَ الرَّسُوۡلِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَاۤ اَصَابَهُمُ الۡقَرۡحُ ؕ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا مِنۡهُمۡ وَ اتَّقَوۡا اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ
‘যখম হওয়ার পর যারা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা সৎকাজ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে চলে, তাদের জন্য মহাপুরস্কার রয়েছে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৭২)
হজরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, তোমার পিতা ও আমার পিতা ঐ সমস্ত সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যারা যখমী হওয়ার পরে আল্লাহ এবং তার রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। (বুখারি ৪০৭৭) অর্থাৎ হজরত যুবাইর ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।
এ যুদ্ধের ঘটনাটি এই যে, যখন মক্কার কাফেররা ওহুদের ময়দান থেকে ফিরে এল, তখন পথে এসে তাদের আফসোস হলো যে, আমরা বিজয় অর্জন করার পরিবর্তে অনর্থকই ফিরে এলাম। সবাই মিলে একটা কঠিন আক্রমণ চালিয়ে সমস্ত মুসলিমকে খতম করে দেয়াই উচিৎ ছিল। আর এই কল্পনা তাদের মনে এমনই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করল যে, পুনরায় মদিনায় ফিরে যেতে ইচ্ছা করতে লাগল। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা তাদের মনে গভীর ভীতির সঞ্চার করে দিলেন। তাতে তারা সোজা মক্কার পথ ধরলো। কিন্তু যেতে যেতে মদিনাযাত্রী কোনো পথিকের কাছে বলে দিয়ে গেল যে, তোমরা সেখানে গিয়ে কোনো প্রকারে মুসলিমদের মনে আমাদের ভয় বিস্তুর করবে যে, তারা এদিকে ফিরে আসছে।
এ ব্যাপারটি অহির মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে পারলেন। কাজেই তিনি ‘হামরাউল আসাদ’ পর্যন্ত তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলেন। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করলেন, কে আছে, যারা মুশরেকদের পশ্চাদ্ধাবন করবে? তখন সত্তর জন সাহাবী প্রস্তুত হলেন যাদের মধ্যে এমন লোকও ছিলেন যারা গত কালকের যুদ্ধে কঠিন ভাবে আহত হয়ে পড়েছিলেন এবং অন্যের সাহায্যে চলাফেরা করছিলেন। এরাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মুশরিকদের পশ্চাদ্ধাবনে রওয়ানা হলেন।’ (বুখারি ৪০৭৭)
তাফসিরে আহসানুল বয়ানে এসেছে
যখন মুশরিকরা ওহুদ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন পথিমধ্যে তাদের খেয়াল হয় যে, আমরা তো একটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে দিলাম। পরাজয়ের কারণে মুসলিমদের মনোবল তো দমে গেছে এবং তারা এখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। সুতরাং এই সুযোগ গ্রহণ করে আমাদের উচিত ছিল, মদিনার উপর পুরোদমে আক্রমণ করে বসা, যাতে মদিনা ভূমি থেকে ইসলাম সমূলে উচ্ছেদ হয়ে যেত।
এদিকে মদিনায় পৌঁছে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাদের (কাফেরদের) পুনরায় পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কা বোধ করলেন। তাই তিনি সাহাবাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলেন। সাহাবায়ে কেরাম যদিও নিজেদের নিহত ও আহতদের কারণে বড়ই মর্মাহত ও দুঃখিত ছিলেন, তবুও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ মত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন।
মুসলিমদের এই দল যখন মদিনা থেকে ৮ মাইল দূরে অবস্থিত ‘হামরাউল আসাদ’ নামক স্থানে পৌঁছল, তখন মুশরিকরা ভয় পেয়ে গেল। কাজেই তাদের ইচ্ছার পরিবর্তন ঘটল এবং মদিনার উপর আক্রমণ করার পরিবর্তে মক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করলো। এরপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীরাও মদিনায় প্রত্যাগমন করলেন।