২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৫:৩১:৫০ অপরাহ্ন


বছরের শেষ দিনেও, মাংসে বাজারে আগুন
ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-১২-২০২২
বছরের শেষ দিনেও, মাংসে বাজারে আগুন চিত্র ধারণ- মো: পারভেজ ইসলাম


সময়টা শীতকাল। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজশাহীর মাস্টারপাড়া ও কোর্টস্টেশন বাজার ঘুরে দেখা গেছে শীতকালীন শাক-সবজিতে ভরপুর বাজার ও দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।  তবে পেঁয়াজ, রসুনের দাম কিছুটা কমলেও মাংস, চাল, চিনি ও ডালে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

দাম বাড়তি সব কিছুর, চলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মাছ-মাংস খাওয়া এখন বিলাসিতা বললেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, শীতের সবজিতে বাজার ভরে উঠলেও মন বেজার করেই ঘরে ফিরতে হচ্ছে। বাজারে সব পণ্যের দাম চড়া কমের লক্ষণ নেই, চাল, আটা, চিনি ও তেলেরও।

গত সপ্তাহের চেয়ে নতুন বছরের শেষ দিনে ব্রয়লার মুরগি তে ২৫ টাকা বেড়ে ১৮৫ টাকায় , সোনালি মুরগি তে ২০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকায়, গরুর মাংসে ৫০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকায় ও খাসির মাংসে ৫০ টাকা বেড়ে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে প্রতি কেজি মাছে ২০-৫০ টাকা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বড় ইলিশ ৯০০-১০০০ টাকা, মাঝারি ইলিশ ৬০০-৭৫০ টাকা ও ছোট ইলিশ ৫০০-৬০০ টাকা,  ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে চাষের কই, তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ। এছাড়া রুই, কাতলা কার্পজাতীয় চাষের মাছ ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশি জাতের মাছের দাম খুব একটা হেরফের হয়নি।

পর্যাপ্ত সবজি সরবরাহ থাকার পরেও চড়া দামে ক্রেতাদের অসন্তোষ থাকলেও বরাবরের মত পাইকারি দাম ও পরিবহন ব্যয়কে দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা।

সবজি বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, দাম অনেক বেশি। মুলা- পেঁপে ছাড়া সবকিছু ৬০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। মাছ মাংসেরও দাম বেশি। ভরা মওসুমেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। কেজি প্রতি আঠাশ চাল ৬০-৬৫ টাকা কেজি, জিরা চাল ৭৫ টাকা, মসুর ডাল ১০০—১৪০ টাকা কেজি।

অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এর মধ্যে, বিশ্ববাজারে মসলার দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশের বাজারেও বেড়েছে মসলার দাম। ৫০ টাকা বেড়ে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এছাড়া, এলাচ দারুচিনি ও লবঙ্গের দাম মান ভেদে বেড়েছে ৫০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। সরবরাহ বাড়ায় কমেছে, ডিম, মুরগি ও সবজির দাম। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ সরকারের পক্ষথেকে কোনও পণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গেই তা কার্যকর হয়। কিন্তু দাম কমলে দেখা যায় উল্টোটা। দাম কমলে পণ্য সরবরাহে গড়িমসি শুরু করে কোম্পানিগুলো। খুচরা বিক্রেতারা কমদামে কোনও পণ্য ক্রেতার হাতে দিতেই চান না।

গত রোববার (১৭ ডিসেম্বর) থেকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাঁচ টাকা কমে ১৮৭ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু ক্রেতাদের এখনও গুনতে হচ্ছে আগের নির্ধারিত ১৯২ টাকা। কোম্পানিগুলো এখনও নতুন দরে তেল বাজারে ছাড়েনি। আবার এক মাস আগে চিনির দাম ১০৮ টাকা (প্যাকেট) নির্ধারণ করার পরও ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি। শুধু বোতলজাত সয়াবিন তেল নয়, খোলা পাম তেলও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার পাম তেল ১১৭ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেনি মসুর ডাল, আটা ও ময়দার দাম। খুচরায় প্রতি কেজি মসুর ডাল এখনও বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি আটা ৭০ টাকা ও ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়।

শীতে সবজি সরবরাহ বাড়লেও মাঝারি আকারের প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। পাকা টক টমেটো ৮০—১০০ টাকা, প্রতি কেজি সিম ৩০-৪০ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, লম্বা বেগুন বা তাল বেগুনের কেজি ৬০ টাকা, নতুন আলুর কেজি ২৫-৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি লাউ ৫০ টাকা, করলার কেজি ১০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ২০-৩০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকায় আর শসা ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিচিঙ্গা ও ধুন্দুলের কেজি ৬০ টাকা, শালগমের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মোসা. সোনিয়া খাতুন বলেন, ছুটির দিনে সকাল সকাল বাজার করার অভ্যাস থাকলেও আজকে নতুন বছর উপলক্ষে বনভোজনের জন্য বাজার করতে বেরিয়েছি। কিন্তু সাধারণ দিনের চেয়ে আজকে প্রতিটি পন্যতে ৩০—৫০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। এই গরুর মাংস আজকে কিনতে হয়েছে ৭০০ টাকায়। গরুর মাংসের যতই দাম হোক না কেন আজকে উৎসবের দিন উপলক্ষে সবাই যেন কিনতে বাধ্য, আর আমিও বাধ্য।