২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৩:৪৭:৩৯ পূর্বাহ্ন


হক ও সত্য চেনার উপায়
ধর্ম ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১২-২০২২
হক ও সত্য চেনার উপায় ফাইল ফটো


সত্যের পরিচয় লাভ করতে চায় সবাই। কিন্তু সবাই সত্যের সন্ধান পায় না। কেননা সত্যের পরিচয় লাভের জন্য যথাযথ পথ ও পদ্ধতি তারা অনুসরণ করে না। কোরআন ও হাদিসের বহু স্থানে পরিচয় লাভের জন্য আবশ্যকীয় নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে।

সত্য জানা আবশ্যক কেন? : সত্যই মানুষকে সুপথের পথিক করে। মানুষ কখনো সত্য থেকে বিমুখ হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের বেশির ভাগ অনুমানেরই অনুসরণ করে। সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোনো কাজে আসে না। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। ’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৩৬)

সত্যের পরিচয় লাভের উপায়

কোরআন ও সুন্নাহে বর্ণিত সত্যের পরিচয় লাভের কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলো।

১. বড় ব্যক্তিরও ভুল হতে পারে : একজন ব্যক্তি অনেক বড় হলেও তার ভুল হতে পারে—এটা বিশ্বাস করতে হবে। এমনকি মানুষের বক্তব্যের একাংশ সঠিক, অন্যাংশ ভুল হতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি আজ রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি। অতঃপর সে স্বপ্নে যা দেখেছে তা বর্ণনা করল। আবু বকর (রা.)-এর ব্যাখ্যা করলেন। নবী (সা.) বললেন, ‘তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যায় কিছুটা ঠিক বলেছ এবং কিছুটা ভুল করেছ। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩২৬৮)

২. নিজের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা : নিজের ভুলের ব্যাপারে সচেতন না হলে মানুষ অনেক সময় সত্যের দিশা থেকে বঞ্চিত হয়। মুমিন দোয়া করবে যেন আল্লাহ তাদেরকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত না করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮)

৩. জ্ঞানীদের সান্নিধ্য : জ্ঞানীদের সান্নিধ্য মানুষকে সত্যের পথ দেখায়। কেননা তখন সত্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার অবকাশ পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি না জানো, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কোরো। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৪৩)

৪. দ্বিনের পথ অনুসরণ করা : আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনদের পথই সত্য পথ। সুতরাং কেউ সত্যের দিশা পেতে চাইলে তাদেরই অনুসরণ করতে হবে। নতুবা পথভ্রষ্ট হওয়ার তীব্র আশঙ্কা আছে। আল্লাহ বলেন, ‘কারো কাছে সুপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৫)

৫. প্রতিপক্ষকে অবজ্ঞা না করা : প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও যথাযথ জ্ঞান না থাকলে ব্যক্তি সত্যের সন্ধান লাভে ব্যর্থ হয়। যেমনটি ইহুদি-খ্রিস্টানরা করে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইহুদিরা বলে, খ্রিস্টানদের কোনো ভিত্তি নেই। খ্রিস্টানরা বলে, ইহুদিদের কোনো ভিত্তি নেই। অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবে যারা কিছুই জানে না তারাও অনুরূপ কথা বলে। সুতরাং যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার মীমাংসা করবেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১১৩)

৬. সত্য গ্রহণে প্রস্তুত থাকা : পূর্ব ধারণা, সমাজে প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারা ও সংস্কারের কারণে মানুষ অনেক সময় সত্য গ্রহণে প্রস্তুত থাকে না। ফলে সে সত্য থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি মানুষের জন্য এই কোরআনে বিভিন্ন উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ অস্বীকার করা ছাড়া ক্ষান্ত হলো না। ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮৯)

৭. স্রোতে গা না ভাসানো : স্রোতে গা ভাসানোর কারণে অনেক সময় মানুষ সত্যের সন্ধান থেকে বঞ্চিত হয়। এ জন্য আল্লাহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যদি তুমি বেশির ভাগ মানুষের কথামত চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে। (সুরা আনআম, আয়াত : ১১৬)

৮. বাহ্যিক অবস্থার বিচার না করা : বাহ্যিক অবস্থার বিচার করলে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ সত্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কেননা বাহ্যিক অবস্থা ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘গ্রাম্য লোকেরা বলে, আমরা ঈমান আনলাম। বলো, তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমরা বলো, আমরা আত্মসমর্পণ করেছি। কেননা ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১৪)

৯. দলিল অনুসন্ধান করা : সত্যের অনুসন্ধান লাভের জন্য ব্যক্তির উচিত অনুমান বা ধারণার অনুসরণ না করে দলিল-প্রমাণ অনুসন্ধান করা। আল্লাহ বলেন, ‘বলো, তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত করো যদি তোমরা সত্যবাদী হও। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১১১)

১০. আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা : সত্য ও সুপথ লাভে ব্যক্তির মেধা, প্রচেষ্টা ও বাহ্যিক উপকরণ যথেষ্ট নয়। এগুলো থেকে বেশি প্রয়োজন আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ। তাই সত্যের দিশা পেতে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যাকে ভালোবাস, ইচ্ছা করলেই তাঁকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনেন এবং তিনিই ভালো জানেন সৎপথ অনুসারীদের। ’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৫৬)

আল্লাহ সবাইকে সুপথের দিশা দিন। আমিন।