২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫১:৪৩ অপরাহ্ন


সময় থাকতে যেসব জিনিসের মূল্যায়ন করতে বলেছেন নবিজি (সা.)
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২২
সময় থাকতে যেসব জিনিসের মূল্যায়ন করতে বলেছেন নবিজি (সা.) ফাইল ফটো


সময় থাকতে পাঁচটি জিনিসের মূল্যায়ন করতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এটি মুসলিম উম্মার প্রতি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নসিহত এবং বিশেষ অসিয়ত। যেন উম্মতের প্রতিটি সদস্য সৌভাগ্যবান, সফল ও সর্বাঙ্গীণ সুন্দর জীবন লাভ করতে পারে। সেই হাদিসটি কী?

হজরত আমর ইবনু মায়মুন আল আওদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে বললেন: পাঁচ জিনিসের আগে পাঁচ জিনিসকে মূল্যায়ন করো। তাহলো-

১. যৌবনকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্যের আগে।

২. সুস্থতাকে মূল্যায়ন করো অসুস্থ হওয়ার আগে।

৩. স্বচ্ছলতাকে মূল্যায়ন করো দারিদ্র্যতা আসার আগে।

৪. অবসরকে মূল্যায়ন করো ব্যস্ততার আগে। এবং

৫. জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে।’ (জামে ১০৭৭, আত্ তারগিব ওয়াত তারহিব ৩৩৫৫, মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বা ৩৪৩১৯, শুআবুল ঈমান ১০২৪৮, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭৮৪৬, মিশকাত,৫১৭৪)

কী বলা হয়েছে হাদিসটিতে?

১. شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ ‘বার্ধক্য আসার আগেই যৌবনকে গুরুত্ব দাও’

বার্ধক্যের আগে যৌবনকালকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মানব জীবনের তিনটি কালের মধ্যে যৌবনকাল নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে একজন মানুষের যৌবন হচ্ছে তার সব কাজ-কর্মের তৎপরতার উৎস। যৌবনের ইবাদতও মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ। হাদিসে এসেছে-

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যৌবনকাল ইবাদতে কাটানো যুবক সেই সাত ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে মহান আল্লাহ কেয়ামতের কঠিন অবস্থায় তাঁর আরশের ছায়াতলে স্থান দান করবেন আর সেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না।’ (বুখারি ৬৬০, মুসলিম ১০৩১, নাসায়ী ৫৩৮০, তিরমিজি ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭, মিশকাত ৭০১)

২. وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ ‘অসুস্থতার আগেই সুস্থতাকে গুরুত্ব দাও’

প্রতিটি সুস্থ মূহুর্তকে পরিপূর্ণভাবে সদ্ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। সুস্থতা মানুষের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার এক অপার মহিমা বিশাল নেয়ামত। সুস্থ অবস্থায় মানুষ আল্লাহর ইবাদত করার যে সামর্থ রাখে অসুস্থ হলে তার আর সামর্থ থাকেনা। কারণ মানুষের শরীর একটা স্বয়ংক্রীয় যন্ত্র বিশেষ। তাই এ যন্ত্রের একটু ব্যতিক্রম হলেই শরীরে নানা ধরণের বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তার নাম অসুস্থতা। সুস্থতা আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। মানুষ সুস্থ থাকলে সবকিছু করতে পারে কিন্তু অসুস্থ হয়ে গেলে আর কোনো কাজ করতে পারে না। তাই যখন সে সুস্থ থাকে তখন তাকে নেয়ামত মনে করে ইবাদতে মশগুল হওয়া প্রয়োজন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘যে ব্যক্তি তার দিনটি পারিবারিক নিরাপত্তাবোধ ও সুস্থতার মধ্য দিয়ে শুরু করতে পারলো এবং নিজের দিনটিকে কাজে লাগাতে পারলো সে যেন সমগ্র দুনিয়া অধিকার করলো।’ (তিরমিজি ২৩৪৬, ইবনে মাজাহ ৪১৪১)

৩. وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ ‘দারিদ্রতার আগেই স্বচ্ছলতাকে গুরুত্ব দাও’

অভাব অফুরন্ত। মানুষের একটি অভাব পুরণ হলে আরেকটি এসে হাজির হয়। এজন্য সে মনে করে আর একটু স্বচ্ছল হলে ভালো কাজটি করব। কিন্তু সে জানে না বর্তমানের চেয়ে সে আরো দরিদ্র হয়ে যেতে পারে। মানব দেহে যেমন যে কোন সময় অসুস্থতা আসতে পারে, ঠিক তেমনি যে কোন সময় মানব জীবনে দারিদ্রতাও এসে যেতে পারে। কারণ স্বচ্ছলতা এবং অস্বচ্ছলতা এর কোনটাই মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। মহান আল্লাহ বলেন-

اِنَّ رَبَّکَ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَقۡدِرُ ؕ اِنَّهٗ کَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِیۡرًۢا بَصِیۡرًا

‘নিশ্চয় তোমার রব যাকে ইচ্ছা করেন তার রিযিক বাড়িয়ে দেন। যাকে ইচ্ছা করেন তার রিযিক সংকীর্ণ করে দেন। তিনি অবশ্যই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত, পূর্ণ দ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩০)

৪. وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغُلُكَ ‘ব্যস্ততা আসার আগেই অবসরকে গুরুত্ব দাও’

হাদিসের এ অংশে অবসরকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। ইসলামে অলস সময় কাটানোকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে ব্যস্ততা ও অবসর দুটোই বান্দাহর জন্য নেয়ামত। ব্যস্ততা এজন্য নেয়ামত যে, ব্যস্ততা মানুষের অনেক অন্যায় ও বেহুদা কাজ থেকে বিরত রাখে। আর অবসর এই অর্থে নিয়ামত যে, সে এই অবসরে অনেক ভালো কাজ সম্পন্ন করে নেকী লাভ করতে পারেন।

৫. وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ ‘মৃত্যু আসার আগেই জীবনকে গুরুত্ব দাও’

পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই মানুষের জীবন শুরু হয় এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তার জীবনের অবসান ঘটে। তবে পৃথিবী নামক এই গ্রহে কার অবস্থান কতটুকু সময় তা মানুষ কেউ বলতে পারবে না। কারণ জীবন-মৃত্যুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কে কখন কীভাবে মৃত্যু বরণ করবে এটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেছেন-

قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ

‘বল যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। (সুরা জুমুআ : আয়াত ৮)

তাই এখনই মৃত্যু এসে যেতে পারে এই চিন্তা করে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগানোই হচ্ছে মুমিন জীবনের প্রধানতম কাজ।

মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে এ হাদিসের গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করে কাজে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।