নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরে এ উপজেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। তবে এ বছর কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা চাষে কৃষকরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
চলতি মৌসুমে ৫৫০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সরিষার চাষ করা হয়েছে। ফলে এ বছর উপজেলায় সরিষার চাষ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। গত বছর স্থানীয় বাজারে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবার এ উপজেলার ১১০০ জন কৃষক সরিষা চাষ করেছেন। কৃষকের নিপুন হাতে প্রকৃতির বুকে গড়ে তোলা ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আগামীতে আরও সরিষার আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলার বিভিন্ন সরিষাক্ষেত ঘুরে দেখা যায় মাঠে যেন কেউ সবুজের গায়ে হলুদের আল্পনা দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে। হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। মাঠের পর মাঠ যেন হলুদের গালিচা। দিগন্ত জুড়ে শুধু হলুদের সমারোহ। সরিষার ফুলে ফুলে মৌঁমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌঁমাছির গুনগুনানিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, আমন ধান কাটার পর জমি তৈরি করে সরিষা বীজ বপণ করা হয়। বীজ লাগানোর ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মাথায় সরিষা ঘরে আসে। এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় তিন থেকে চার মণ ফলন হয় সরিষার, যা বর্তমান বাজারে বিক্রি হবে প্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকা।
পৌর এলাকার কৃষক মামুন আলী বলেন, আমন কাটার পর সরিষা চাষ করলে আমাদের অনেক উপকার হয় কারণ সরিষা কাটাই-মাড়াই করে সেটা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বোরো ধান লাগাই। এটা আমাদের একটা বোনাস ফসল। বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, এই উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এবার সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সরিষা চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের প্রণোদান হিসাবে ১১০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করেছি। পাশাপশি সার্বিক সহযোগিতাও দিয়ে যাচ্ছি। আগামীতেও এসব প্রণোদনা ও সহোযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি মনে করেন।