খাবার নষ্ট করা সবার জন্য নিষিদ্ধ। নষ্টের একটি ধরন হলো অপচয় করা; নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, ‘তিনি বাজে আলাপ, অধিক প্রশ্ন করা এবং সম্পদ-হানি করতে নিষেধ করেছেন।‘
অপচয়কারীদের স্বয়ং আল্লাহও পছন্দ করেন না। ফলে অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষের জীবন থেকে বরকতও কমে যায়। এর ফলে মানুষের ধন-সম্পদ ক্রমে হ্রাস পায়। খাবার নষ্ট করা যেমন অমানবিক তেমনি গুনাহের কাজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন-
وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ
‘(তোমরা) খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৩১)
হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন করার পর ওই সম্পদ নষ্ট, অপচয় ও (তা নিয়ে) অহঙ্কার করা এবং গৌরব ও প্রাচুর্যের জন্য প্রতিযোগিতায় নামা- এ সবই মানুষের জন্য হারাম। (সম্পদ) নষ্ট করা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّـهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ ۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا ۖ وَأَحْسِن كَمَا أَحْسَنَ اللَّـهُ إِلَيْكَ ۖ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ ۖ إِنَّ اللَّـهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ
‘আল্লাহ তোমাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের ঘর তৈরি করার কথা চিন্তা করো এবং দুনিয়া থেকেও নিজের অংশ ভুলে যেয়ো না৷ অনুগ্রহ করো, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে নষ্টামি করো না৷ যারা নষ্টামি করে, আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না৷’ (সুরা আল-কাসাস : আয়াত ৭৭)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ ۗ وَاللَّـهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ
‘যখন সে কর্তৃত্ব লাভ করে, পৃথিবীতে তার সমস্ত প্রচেষ্টা-সাধনা নিয়োজিত করে নষ্টামি-সাধন এবং শস্যক্ষেত ও মানব-বংশ ধ্বংস করার কাজে৷ অথচ আল্লাহ নষ্টামি মোটেই পছন্দ করেন না৷’ (সুরা আল-বাকারা : আয়াত ২০৫)
মনে রাখতে হবে: ইসলাম সব সময় সমাজের দরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ভাবার কথা বলে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের সাহায্যের কথা বলে। নিজের পাড়া-প্রতিবেশী, অভাবী আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য করতে বলে। মানবতার ধর্ম ইসলাম অতিভোজন ও অপচয় থেকে যেমন মানুষকে বিরত থাকার কথা বলে, তেমনি কৃপণতা করতে নিরুৎসাহিত করে। মধ্যমপন্থা অবলম্বন ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও সৌন্দর্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَنۡفَقُوۡا لَمۡ یُسۡرِفُوۡا وَ لَمۡ یَقۡتُرُوۡا وَ کَانَ بَیۡنَ ذٰلِکَ قَوَامً
‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৭)
তাই আসুন, আমরা রাসুলের এই সুন্নতের ওপর গুরুত্বসহকারে আমল করে জীবনকে ধন্য করি। খাবার অপচয় না করে আত্মীয়-স্বজন ও অনাহারী মানুষের পাশে দাঁড়াই। এটা মহান আল্লাহর হুকুম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। আর কোনোভাবেই অপব্যয় কোরো না। (সুরা : ইসরা, আয়াত : ২৬)