পরিত্যক্ত জায়গায় মিশ্র ফল ও সবজি বাগান করে সফল হয়েছেন নাটোরের সিংড়া পৌরসভার পাটকোল গ্রামের আঃ লতিফের ছেলে মাসুদ করিম মিঠু নামের এক যুবক।
আজ থেকে ৭ বছর আগের কথা। চাতাল মিলের মালিক মিঠুর তখন ধান-চাউলের রমরমা ব্যবসা। বাজার থেকে ধান কিনে চাতাল মিলে সিদ্ধ শুকান । এর পর চাউল তৈরী করে বাজারে বিক্রি এসব কাজ নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটত মিঠুর। তার মিলে কাজ করতেন প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক ।
অটো মিলের দৌরাত্ম্য, শ্রমিক সংকট সহ বিভিন্ন কারনে চাতাল মিলের মন্দাভাবের এক পর্যায়ে মিল বন্ধ হলে বেকারত্ব জীবন যাপন শুরু করেন মিঠু। মিঠুর চাতাল মিলের ৪ বিঘা জায়গাতে ধীরে ধীরে ঘাস গজিয়ে পরিত্যক্ত হয়ে উঠে।
এর পর ২০২০ সালের জুন-জুলাই মাসে করোনা কালীন সময়ে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে অনেক পরিত্যক্ত জায়গায় ফল ও সবজি বাগানের সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হন মিঠু। সেই থেকেই শুরু করেন মিশ্র ফল ও সবজি বাগান। তার বাগানে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী পিনাকি প্রামাণিক।
মাত্র দেড় থেকে ২ বছরের মধ্যেই সফলতার মুখ দেখছেন মিঠু। তার ৪ বিঘা পরিত্যক্ত এই জায়গার ফল ও সবজি বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে দার্জিলিং, সাদকি, ম্যান্ডারিন ও নাকপুরি সহ বিভিন্ জাতের ১৬০ টি কমলাগাছ । মিঠু জানায়, দেড় বছরের মাথায় প্রতিটি গাছে কমলা ধরা শুরু হয়েছে। সিংড়ার সমতল ভূমিতে এত সুন্দর সুমিষ্ট কমলা হবে তা তিনি কল্পনাই করেননি। প্রথমবারের মতো এই অঞ্চলে কমলা চাষে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। নীলফামারী, চুয়াডাঙ্গা ও ঠাকুরগাঁও থেকে গাছগুলো সংগ্রহ করেছেন তিনি। এছাড়া তার এই মিশ্র বাগানে রয়েছে পেয়ারা, বরই, পেঁপে, আম, আঙ্গুর, বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, চাল কুমড়াসহ বিভিন্ন ফল ও সবজি গাছ।
মিঠু বলেন, ইউটিউবে বিভিন্ ভিডিও দেখে প্রথমে বাগান করার উদ্বুদ্ধ হই। এর পর কৃষি অফিসের পরামর্শে মিলের পরিত্যক্ত জায়গায় এই মিশ্র বাগান শুরু করি। এ পর্যন্ত আমার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। বাগান থেকে কিছু সবজি ও পেয়ারা বাজারজাত করেছি। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই কমলা বাজারজাত করবো। এর পর বরই মৌসুমে বরই। অনেক দুর থেকে লোকজন আমার বাগান দেখতে আসে। পরার্মশ চায়। আমি মনে করি আমার সফলতা এখানেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সেলিম রেজা বলেন, পরিত্যক্ত জায়গায় মিশ্র ফল বাগান করে অসাধ্যকে সাধন করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা মিঠু। বিশেষ করে কমলা চাষে তিনি সবার নজর কেড়েছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষি উদ্যোক্তাদের সবসময় সঠিক পরার্মশ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি মিঠু তার মিশ্র বাগান থেকে অনেক লাভবান হবেন।