আজ শুক্রবার। জুমার দিন। ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ইংরেজি, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯ বাংলা, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৪ হিজরি। আজ জমাদিউল আউয়াল মাসের দ্বিতীয় জুমা। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- নবিজির প্রতি ভালোবাসা। এ বিষয়টিও কোরআন সুন্নাহর বর্ণনায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
আলহামদুলিল্লাহ! সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। মহান রাব্বুল আলামিন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উম্মতের জন্য অনুগ্রহ করে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বিষয়টি ঘোষণা দেন এভাবে-
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.
‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন; তিনি তাদেরই নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেন, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬৪)
প্রিয় মুসল্লিগণ!
হেদায়াত ও সফলতার পথ সম্পর্কে মানুষ অজ্ঞ ছিল। ছিল পথহারা, দিশেহারা। অতপর মহান রাব্বুল আলামীন হেদায়েতের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। তিনি এসে মানুষকে সত্য-মিথ্যার পথ চিনিয়েছেন। মানুষের জন্য সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন। নাজাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পন্থা শিখিয়েছেন। এ ছিল মানুষের প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহের বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে-
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.
আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন; তিনি তাদেরই নিজেদের মধ্য হতে তাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬৪)
প্রিয় মুসল্লিগণ!
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মাঝে এসেছেন রহমত হয়ে। তিনি জগদ্বাসীর জন্য রহমত হয়ে এসেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
(হে নবী!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)
ইমাম ত্ববারী রাহ. বলেছেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জগতের সকলের প্রতি আল্লাহ পাকের রহমত। মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকল মাখলুকই কেয়ামত পর্যন্ত এই মহান রহমতের মাধ্যমে উপকৃত হতে থাকবে। মুমিনকে তো আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে হেদায়াত দান করেছেন। তাঁর উপর ঈমান আনা এবং তিনি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে পয়গাম নিয়ে এসেছেন সে অনুযায়ী আমল করার কারণে তাকে জান্নাত দেবেন। আর এই উম্মতের অবিশ্বাসীকে তাঁর কারণে পূর্ববর্তী উম্মতের অবিশ্বাসীর মতো নগদ শাস্তি দেবেন না। (তাফসীরে ত্ববারি ১৮/৫৫২)
প্রিয় মুসল্লিগণ!
নবিজি ছিলেন উম্মতের জন্য দরদী। উম্মতের জন্য তিনি ছিলেন দয়া-মমতার সাগর। উম্মতের প্রতি ছিল তাঁর গভীর মায়া, সীমাহীন মমতা এবং তাদের কল্যাণ সাধনে ছিলেন সদা ব্যাকুল, ব্যতিব্যস্ত। তাদের তিনি নিঃস্বার্থ ভালোবাসতেন। তিনি তাদের থেকে না এর কোনো প্রতিদান চাইতেন, আর না কৃতজ্ঞতা কামনা করতেন। চাইতেন শুধু তাদের নাজাত ও সফলতা। চাইতেন যেন তাঁর উম্মত হেদায়েতের পথ হারিয়ে না ফেলে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো আজাব তাদেরকে আক্রান্ত না করে। হাদিসে পাকে এসেছে-
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: تَلَا قَوْلَ اللهِ عَزّ وَجَلّ فِي إِبْرَاهِيمَ: رَبِّ اِنَّهُنَّ اَضْلَلْنَ كَثِیْرًا مِّنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِیْ فَاِنَّهٗ مِنِّیْ، وَقَالَ عِيسَى عَلَيْهِ السّلَامُ: اِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَاِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَ اِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَاِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: اللهُمّ أُمّتِي أُمّتِي، وَبَكَى، فَقَالَ اللهُ عَزّ وَجَلّ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى مُحَمّدٍ، وَرَبّكَ أَعْلَمُ، فَسَلْهُ مَا يُبْكِيكَ؟ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصّلَاةُ وَالسّلَامُ، فَسَأَلَهُ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِمَا قَالَ، وَهُوَ أَعْلَمُ، فَقَالَ اللهُ: يَا جِبْرِيلُ، اذْهَبْ إِلَى مُحَمّدٍ، فَقُلْ: إِنّا سَنُرْضِيكَ فِي أُمّتِكَ، وَلَا نَسُوءُكَ.
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াত পাঠ করলেন, যাতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ আছে : (তরজমা) ‘হে আমার রব! এসব প্রতীমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত হবে।’ (আর সেই আয়াতও পড়লেন যেখানে আছে) ‘(এবং ঈসা আলাইহিস সালাম বললেন,) যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে নিশ্চয়ই আপনার ক্ষমতাও পরিপূর্ণ এবং হিকমতও পরিপূর্ণ।’ অতপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’হাত তুলে কেঁদে কেঁদে বললেন-
اللهُمّ أُمّتِي أُمّتِي.
‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত!!’
তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, হে জিবরাঈল! মুহাম্মাদকে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর সে কেন কাঁদে? যদিও তোমার রবই ভালো জানেন। অতপর জিবরিল আলাইহিস সালাম নবিজির কাছে এসে তা জিজ্ঞাসা করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব খুলে বললেন। যদিও আল্লাহ তাআলা সব জানেন। এরপর আল্লাহ তাআলা বললেন, হে জিবরিল! মুহাম্মাদকে গিয়ে বলো, আমি অচিরেই তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করব, ব্যথিত করব না।’ (মুসলিম ২০২)
প্রিয় মুসল্লিগণ!
উদাহরণ টেনে অন্য হাদিসে নবিজি উম্মতের প্রতি তাঁর দরদকে এভাবে বুঝিয়েছেন-
مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَوْقَدَ نَارًا، فَجَعَلَ الْجَنَادِبُ وَالْفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا، وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا، وَأَنَا آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ، وَأَنْتُمْ تَفَلَّتُونَ مِنْ يَدِي
অর্থাৎ আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত, যে আগুন জ্বালালো, ফলে ফড়িংদল পতঙ্গরাজি তাতে পড়তে লাগল। আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগল। অনুরূপ আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমর ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ।’ (মুসলিম ২২৮৫)
উম্মতের প্রতি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরদ ও আত্মত্যাগের মাত্রা বুঝার জন্য কোরআন কারিমের এ আয়াতে ওঠে এসেছে-
فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلٰۤی اٰثَارِهِمْ اِنْ لَّمْ یُؤْمِنُوْا بِهٰذَا الْحَدِیْثِ اَسَفًا
অর্থাৎ, মনে হয় যেন আপনি ওদের পিছনে পরিতাপ করতে করতে স্বীয় প্রাণ নাশ করে ফেলবেন, যদি ওরা এই বাণীর প্রতি ঈমান না আনে।’ (সুরা কাহ্ফ : আয়াত ৬)
উম্মতের প্রতি ভালোবাসা তায়েফের ঘটনা থেকেও কঠিনভাবে প্রমাণিত। এমনকি অকৃতজ্ঞ উম্মতের ধৃষ্টতার সামনেও তাঁর দয়ার বাঁধ ছিল অটল। তায়েফবাসীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তাওহীদের বাণী, হেদায়েতের পয়গাম। তাদেরকে দেখাতে চেয়েছিলেন মুক্তির পথ। কিন্তু তাদের অজ্ঞতা তাদের উপর চেপে বসল। চরম ধৃষ্টতা দেখিয়ে তারা নবিজির উপর চড়াও হল। পাথরের আঘাতে তাঁকে জর্জরিত করল। আঘাতে আঘাতে তাঁকে রক্তাক্ত করে ফেলল। কেঁপে উঠল আল্লাহর আরশ। পাঠালেন জিবরিল আমীনকে। জিবরিল বললেন-
إِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَمَا رَدّوا عَلَيْكَ، وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ، قَالَ: فَنَادَانِي مَلَكُ الْجِبَالِ وَسَلّمَ عَلَيّ، ثُمّ قَالَ: يَا مُحَمّدُ، إِنّ اللهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَأَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِي رَبّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرِكَ، فَمَا شِئْتَ، إِنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمُ الْأَخْشَبَيْنِ
আপনার কওম আপনার উদ্দেশে যা বলেছে এবং আপনার সঙ্গে যে আচরণ করেছে আল্লাহ তা দেখেছেন। আপনার আদেশ পালনে পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে সম্বোধন করে সালাম দিল এবং বলল, আমি পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা। হে মুহাম্মাদ! আপনার কওমের বক্তব্য আল্লাহ শুনেছেন। আমাকে পাঠিয়েছেন আপনার আদেশ পালন করতে। আপনি আমাকে কী আদেশ করবেন করুন। আপনি যদি আদেশ করেন তাহলে আমি দুই পাহাড়ের মাঝে এদেরকে পিষে ফেলব।
কিন্তু না, দয়ার সাগর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন-
بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا.
(আমি এটা চাই না;) বরং আমি আশা রাখি, আল্লাহ তাআলা এদের বংশধরদের মাঝে এমন মানুষ বের করবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।’ (মুসলিম ১৭৯৫; বুখারি ৩২৩১)
প্রিয় মুসল্লিগণ!
পরকালীন জীবনের ভাবনা ছাড়াও একান্ত জাগতিক বিষয়েও উম্মতের বিপদাপদে নবিজি ছিলেন নিঃস্বার্থ সহযোগিতার আধার। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ مُؤْمِنٍ إِلّا وَأَنَا أَوْلَى النّاسِ بِهِ فِي الدّنْيَا وَالآخِرَةِ، اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ: اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ فَأَيّمَا مُؤْمِنٍ تَرَكَ مَالًا فَلْيَرِثْهُ عَصَبَتُهُ مَنْ كَانُوا، فَإِنْ تَرَكَ دَيْنًا، أَوْ ضَيَاعًا فَلْيَأْتِنِي فَأَنَا مَوْلاَهُ.
‘দুনিয়া ও আখেরাতে আমি প্রত্যেক মুমিনেরই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতর। ইচ্ছা হলে তোমরা এ আয়াতটি তেলাওয়াত কর-
اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ
মুমিনদের পক্ষে নবী তাদের প্রাণ অপেক্ষাও বেশি ঘনিষ্ঠ।
তাই সম্পদ রেখে কোনো মুমিন মারা গেলে আত্মীয়-স্বজন তার ওয়ারিস হবে। আর যদি সে ঋণ কিংবা অসহায় পরিজন রেখে যায়, তবে তারা যেন আমার কাছে আসে। আমিই তাদের অভিভাবক। (বুখারি ৪৭৮১)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বার্থহীনতার শ্রেষ্ঠ আদর্শ ছিলেন। একদিকে অসহায় উম্মতের অভিভাবক তিনি। কিন্তু অপরদিকে তাদের বিত্ত বৈভবের দাবিদারও নন। আর তাই তো অন্যত্র নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِنّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِد.
‘আমি তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য।’ (ইবনে খুযাইমা ৮০; ইবনে হিব্বান ১৪৩১)
উম্মতের প্রতি নবিজি কী পরিমাণ দয়ার্দ্র ও অনুগ্রহশীল ছিলেন, এখান থেকে তা অনুমেয়। আল্লাহ তাআলা এককথায় বড় সুন্দরভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন-
لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِیْزٌ عَلَیْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِیْصٌ عَلَیْكُمْ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ.
(হে মানুষ!) তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসুল এসেছে। তোমাদের যেকোন কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু। (সুরা তাওবা : আয়াত ১২৮)
মনে রাখতে হবে: নবিজির প্রতি ভালবাসা মুমিনের ঈমান। মুমিনের জীবনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসুল তো ঈমানের রূহ, মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই ইশ্ক ও মহব্বত ছাড়া না ঈমানের পূর্ণতা আসে, আর না তার স্বাদ অনুভূত হয়। আর নিছক ভালবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এই ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালবাসার প্রকাশ ঘটতে হবে।
আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি দরুদ পড়ার তাওফিক দিন। وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين। আমিন।