২৯ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:৩১:০৪ অপরাহ্ন


পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় শ্বাশুড়িকে হত্যা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী পুত্রবধূ গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় শ্বাশুড়িকে হত্যা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী পুত্রবধূ গ্রেফতার পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় শ্বাশুড়িকে হত্যা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী পুত্রবধূ গ্রেফতার


পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় শ্বাশুড়িকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক নারী আসামী শারমিন আক্তারকে (২৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে গাজীপুরের গাছা থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার শারমিন আক্তার নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার বসন্তপুর গ্রামের মৃত সেলিমের মেয়ে।

বুধবার সন্ধায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৩, এর  সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারজানা হক।

তিনি জানান, ২০১৬ সালে লক্ষীপুর জেলায় পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় শ্বাশুড়িকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নারী আসামী শারমিন আক্তার গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক ছিলো।

জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানায়,  মৃত জাকেরা বেগম লক্ষীপুর জেলার সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মপুর গ্রামের প্রবাসী রুহুল আমিনের স্ত্রী। ২০১৪ সালে জাকেরার ছোট ছেলে আবুল বাশারের সাথে শারমীন আক্তারের বিবাহ হয়।

বিয়েতে জাকেরার সম্মতি ছিল না। শুরু থেকেই আসামী শারমীনের সাথে মৃত জাকেরার তিক্ত সম্পর্ক ছিল । এসময়ে জীবিকার তাগিদে এবং পারিবারিক অশান্তির কারনে আসামী শারমীনের স্বামী বাশার গাজীপুরে ইলেকট্রিকের কাজ নেয়।

স্বামীর অনুপস্থিতে শারমিন তাদের প্রতিবেশী জামালের সাথে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। জামাল মৃত জাকেরাকে আম্মা হিসেবে সম্বোধন করত। বাশারের অনুপস্থিতিতে সে তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য নিয়মিত বাসায় যাতায়াত করত। শুরুতে মৃত জাকেরা তাদের পরকীয়ার সম্পর্কে বিষয়টি বুঝতে পারে নাই। তিনি সরল বিশ্বাসে জামালকে তাদের বাসায় অবাধে যাতায়াত করতে দিতেন।

একদিন তিনি জামাল এবং শারমিনকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। তিনি জামালকে তাদের বাসায় আসতে নিষেধ করেন এবং পুত্রবধূ শারমিনকে গালমন্দ করেন। এরপর তাদের পরকীয়ার বিষয়টি তার ছেলে বাশারকে অবহিত করেন। স্ত্রী পরকীয়ার সম্পর্ক জানার পর থেকে বাশার শারমিনকে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করে এবং তাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়।

এতে শারমিন তার প্রেমিক জামালের সাথে তার শাশুড়িকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।

 আসামী শারমীন আরও জানায়, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী (২০১৬ সালের ১৪ জুলাই) শারমীন তাদের বাড়ির ছাদের গেইট খোলা রাখে। ঐদিন গভীর রাতে জামাল তার বন্ধু নাজিম ও জসিমকে নিয়ে ছাদের গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ওই সময় শারমিনের ঘরের দরজা খুলে দেয়। শারমিন দরজা খুলে দিলে তারা শারমিনের রুমের ভিতর দিয়ে শাশুড়ি জাকেরার রুমে প্রবেশ করে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

ওই ঘটনাকে ডাকাতির ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তারা জাকেরা এবং শারমিনের আলমারি ভেঙ্গে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে বাড়ির ছাদ দিয়ে পালিয়ে যায়। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর ধৃত শারমিন চিৎকার চেঁচামেচি ও কান্নাকাটি শুরু করে। তার ডাক চিৎকারে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও স্বাক্ষীদের জবানবন্দীতে বুঝতে পারে ঘটনাটি একটি সাজানো ডাকাতি এবং হত্যা। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে আসামী শারমিন তাদের হত্যা পরিকল্পনা এবং ডাকাতির ঘটনা সাজানোর বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করে।

তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার সহযোগী জামাল, নাজিম ও জসিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরপর আসামী দেবর বাদী হয়ে লক্ষীপুর জেলার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  ঘটনা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ওই মামলায় সকলে জেল খেটে জামিনে বের হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর  শারমিন ও জামালের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।

আসামীরা সকলে যার যার মত পলাতক জীবন শুরু করে। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ৪জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর পুত্রবধূ শারমিন আক্তারসহ ৪ জনের ফাঁসির আদেশ এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন।