২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৮:০৯:২৯ অপরাহ্ন


বোয়ালখালীতে সিএনজি চালককে হত্যা, তিন খুনি গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২২
বোয়ালখালীতে সিএনজি চালককে হত্যা, তিন খুনি গ্রেফতার খুনি মোহাম্মদ বখতিয়ার


বোয়ালখালীতে সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনকে হত্যার রহস্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদঘাটন করা সহ হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত তিন খুনিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ভোর পৌনে ৫টায় চট্টগ্রাম মহানগরের বাকলিয়া থানাধীন নতুনব্রীজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো: চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার পশ্চিম শাকপুরা গ্রামের মোঃ মনু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ বখতিয়ার (২৭), একই গ্রামের মোঃ শফিকের ছেলে মোঃ ইলিয়াস (৩৫), মৃত আহমেদ ছফার ছেলে মনির আহম্মদ প্রকাশ মেহেরাজ (২৬)।

র‌্যাব জানায়, নিহত হেলাল উদ্দিন পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধূলা উপজেলার নিজহোগলা গ্রামে। সে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীর জমাদারহাট এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো এবং সেখানে সিএনজি অটোরিকশা চালানোর পেশায় নিয়োজিত ছিলো। সিএনজি অটোরিকশা চালনোর সুবাধে তার ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তি সাথে পরিচয় হয়। ইলিয়াস পেশায় একজন সিএনজি গ্যারেজের মিস্ত্রী। গত ৪ মাস পূর্বে ইলিয়াসের মামাতো ভাইয়ের একটি সিএনজি বিক্রয় করার জন্য নিহত হেলাল উদ্দিনের সহযোগিতা চায়। পরে সিএনজিটি বিক্রয় করে দিতে পারলে ইলিয়াসের মামাতো ভাই তাদের দুজনকে ৫হাজার টাকা বকশিস দিবে বলে জানায়। পরে সিএনজিটি ইলিয়াস এবং হেলাল উদ্দিন দুজন মিলে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সে সময় ইলিয়াসের মামাতো ভাই খুশি হয়ে ইলিয়াসকে কিছু টাকা বকশিস দেয় এবং সেই টাকা থেকে ইলিয়াস কিছু টাকা রেখে বাকী ১হাজার টাকা হেলাল উদ্দিনকে দেয়। তখন হেলাল উদ্দিন ইলিয়াসকে বলে তোর মামাতো ভাই তোকে ৫হাজার টাকা দিয়েছে কিন্তু তুই আমাকে মাত্র ১ হাজার টাকা দিলে কেন? এই কথা নিয়ে হেলাল উদ্দিন ও ইলিয়াসের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতিসহ মারপিট হয়। ইলিয়াস প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। 

ঘটনাক্রমে ইলিয়াস তার পরিচিত অপরাপর সিএনজি ড্রাইভার মোঃ বখতিয়ার (২৭) ও মনির আহম্মদ অরফে মেহেরাজ (২৬) নামীয় দুজনকে ভাড়া করে হেলাল উদ্দিনকে হত্যা করার পরিকল্পণা করে। 

এরই ধারাবাহিতায় গত (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় ইলিয়াস সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনকে তার সিএনজি নিয়ে সিএনজি ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কথা বলার জন্য চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌরসভাধীন সিও অফিস সংলগ্ন একটি সিএনজি স্টেশন আসতে বলে। 

তার কথামতো হেলাল উদ্দিন তার ভাড়ায় চালিত সিএনজি নিয়ে উল্লেখিত জায়গায় এসে ইলিয়াসের সাথে সাক্ষাৎ করে। তখন ইলিয়াস হেলাল উদ্দিনের সিএনজিসহ তাকে নিয়ে সিএনজি ক্রয়ের কথা বলে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানাধীন ৯নং আমুচিয়া ইউনিয়নের পোস্ট অফিস সড়ক থেকে একটু ভিতের দুর্গম এলাকার একটি খালি জায়গায় নিয়ে যায়। 

পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আরও একটি সিএনজি নিয়ে তার অপর সহযোগী বখতিয়ার ও মেহেরাজ হেলাল উদ্দিনের সিএনজির পিছন পিছন তাদের নিকট উপস্থিত হয়। সকলেই উল্লেখিত স্থানে একত্রিত হওয়ার পর মিস্ত্রী ইলিয়াস হেলাল উদ্দিনকে পূর্বের মারপিট করার হুমকি দেয়ার কথা স্মরণ করিয়ে তাকে উপুর্যপরি শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এরপর বখতিয়ার কাঠের লাঠি দিয়ে হেলাল উদ্দিনের মাথায় আঘাত করে ও মেহেরাজ তাৎক্ষণিকভাবে তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে পিঠে ছুরিকাঘাত করে। এছাড়াও ইলিয়াস সিএনজি থেকে হাতুড়ি নিয়ে এসে হেলালের মাথায় উপুর্যপরি আঘাত করে এবং সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে ইলিয়াস। একই সময় নিহত হেলাল উদ্দিনের সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর ইলিয়াসের দুই সহযোগি বখতিয়ার ও মেহেরাজ মিলে লাশটি পাশের একটি ধানি জমির উপর রেখে তাদের সিএনজি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। 

এ ঘটনায় গত শনিবার (৪ ডিসেম্বর) নিহত সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানায় ৫জনকে নামীয় এবং ৩/৫ জন অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-২। 

এরপর নিহত হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী গত (৪ ডিসেম্বর) অধিনায়ক, র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত আবেদন করে। হত্যার বিষয়টি আমলে নিয়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ৫ ডিসেম্বর ভোর পৌনে ৫টায় চট্টগ্রাম মহানগরের বাকলিয়া থানাধীন নতুনব্রীজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতারকৃতরা সিএনজি অটোরিকশা চালক হেলাল উদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে ।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার সকালে সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।