গুনাহ থেকে তওবা করা ইবাদত। মানুষ নিজের অজান্তেই অনেক গুনাহ করে থাকে। অথবা জেনেশুনে কিংবা বাধ্য হয়েও গুনাহ করে। বান্দা যা জানে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গুনাহ তার রয়েছে, যা সে জানে না। অমনিভাবে যেসব গুনাহের কথা তার স্মরণে আছে, তার চাইতে বহুগুণ বেশি গুনাহ তার স্মরণে থাকে না। তাই বান্দাকে সব সময় জানা-অজানা সকল পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয় এবং খালেছ অন্তরে তওবা করতে হয়। তাতে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তওবাকারীকে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন। কোরআনের ঘোষণাও এমনই। আল্লাহ তাআলা বলেন-
ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُواْ كَذَلِكَ حَقّاً عَلَيْنَا نُنجِ الْمُؤْمِنِينَ
‘এরপর আমরা নাজাত দিয়ে থাকি আমাদের রাসুলদের এবং একইভাবে মুমিনদের। কেননা আমাদের উপর হক হলো মুমিনদের নাজাত দেওয়া।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ১০৩)।
অন্য আয়াতে আরও এসেছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا تُوْبُوْا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحاً عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لاَ يُخْزِي اللهُ النَّبِيَّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا مَعَهُ نُوْرُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধভাবে তওবা কর। যাতে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের গুনাহসমূহ মোচন করে দেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। যেদিন আল্লাহ স্বীয় নবি ও তার সাথী মুমিনদের লজ্জিত করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আমাদের নূরকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৮)
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে তওবায় দান করবেন ক্ষমা ও নাজাত। ক্ষমা ও নাজাত পেলেই পরকালের সব কাজ হবে তার জন্য সহজ। কেননা কেয়ামতের দিন পুলছেরাত পার হওয়ার সময় নিজ নিজ নেক আমল অনুযায়ী মুমিনদের সম্মুখে জ্যোতি থাকবে এবং তাদের ডান হাতে আমলনামা থাকবে। যেখানে জান্নাতের সুসংবাদ থাকবে।
এ সময় পাপী, অবাধ্যতাকারী ও মুনাফিকদের সম্মুখে জ্যোতি নিভে যাবে। তখন মুমিনগণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, যেন পুলছেরাত পার হওয়া পর্যন্ত তাদের জ্যোতি অব্যাহত থাকে। আর এটা তারা ঐসময় বলবে, ‘সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীগণ ঈমানদারদের বলবে, ‘তোমরা আমাদের জন্য অপেক্ষা কর, তোমাদের নূর থেকে আমরা একটু নিয়ে নেই’, বলা হবে, ‘তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও এবং নূরের সন্ধান কর,’ তারপর তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর স্থাপন করে দেওয়া হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে। তার ভেতর ভাগে থাকবে রহমত এবং তার বহির্ভাগে থাকবে আযাব।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ১৩)
মূলত আল্লাহ তাআলা তওবাকারী গুনাহ থেকে মুক্ত মুমিনদের জন্য জ্যোতিকে অব্যাহত রাখবেন। আর এসবই হবে তাদের খালেছ তওবার ফল। এ কারণেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
كُلُّ ابْنِ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ
‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী এবং ভুলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তওবাকারীগণ।’ (তিরমিজি ২৪৯৯)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তওবা করা। তওবার মাধ্যমে নিজেদের জানা-অজানা সব গুনাহ থেকে মুক্ত করা। কারণ গুনাহ থেকে মুক্তি পেলেই আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়ে ধন্য হবে মুমিন।
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে বেশি বেশি তওবা করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। পরকালের নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।