২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:১৯:০৪ পূর্বাহ্ন


কাতারে এশিয়ার দাপট রইল, তবে সূর্যোদয় হল না পরপর তিনদিন
আব্দুল্লাহ্ সাদাত:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১১-২০২২
কাতারে এশিয়ার দাপট রইল, তবে সূর্যোদয় হল না পরপর তিনদিন কাতারে এশিয়ার দাপট রইল, তবে সূর্যোদয় হল না পরপর তিনদিন


২২তম বিশ্বকাপে ‘গ্রুপ এইচ’-এ আজ ৫ম দিন ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে ছ’টায় দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে খেলা ছিল দিয়েগো আলোনসো-র কোচিংয়ে উরুগুয়ে আর কোচ পাওলো বেন্তো-র দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে। এই গ্রুপের অন্য দুটি দল হল পর্তুগাল ও ঘানা। তাই ১৫ বছরের কোচ অস্কার তাবারেজকে পাল্টে উরুগুয়ের নতুন কোচ দিয়েগো আলোনসোর কাজটা এবার কঠিন হলেও অভিজ্ঞ সুয়ারেজ ও কাভানি সমৃদ্ধ দল বেশ শক্তিধরই। এবং তার চেয়েও বেশি কঠিন ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার চার বছর পুরনো কোচ পাওলো বেন্তো-র কাজটাও, যদিও কারও কারও মতে তারা এবারের বিশ্বকাপের ‘কালো ঘোড়া’।

এর আগে তাদের ৪টি হেড টু হেডে ২টি ম্যাচ জিতেছে (১৯৯০-এর গ্রুপে ২-১ আর ২০ বছর পরে রাউন্ড অফ ১৬-তে ২-০) ১৯৩৪-এর বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে আর বাকি ২টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ২০১০ থেকে এবার, টানা শেষ চার বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠা উরুগুয়ে এবার নিয়ে মোট ১৪ বার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলছে। বাছাই পর্বে শেষ ৮টি ম্যাচের ৬টিতে জিতেছে তারা। ২০১৮-তে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল তারা।

অধিনায়ক গোডিন, কোটস ও ভ্যাসিনো সমৃদ্ধ মজবুত ডিফেন্সই উরুগুয়ের প্রধান ভরসা, সঙ্গে থাকা আক্রমণভাগ সমেত মিডফিল্ডার ভালভার্দে, ফরোয়ার্ড নুনেজ ও সুয়ারেজের দিকে নজর আছে সবারই।

অন্যদিকে ১৯৮৬ থেকে ২০২২, টানা ১০ বার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার সুযোগ করে নেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার এটি একাদশ বিশ্বকাপ অভিযান। ২০০২-এর বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। চোটের কারণেই এবার তারা বাধ্য হচ্ছে অনেক নবীন প্রতিভাকে খেলাতে। গত ৭ বছর টটেনহ্যামে খেলা ফরোয়ার্ড সন হুয়েন মিনের অধিনায়কত্বে দক্ষিণ কোরিয়ার নবীন ব্রিগেদ দল হিসেবেই লড়ে যাবে। একটু চিন্তা আছে ডিফেন্স নিয়ে। সবার নজর আছে তাদের মিডফিল্ডার লি কাং ইন, ডিফেন্ডার ইয়ুন জং গিউ ও ফরোয়ার্ড চো ইয়ং উকের দিকে।

এই ব্যাকড্রপে খেলার শুরু থেকেই মাঝমাঠের দখল নিয়ে আক্রমণে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। ৫ মিনিটে একটি হাফ চান্স পাওয়ার পরের মিনিটেই কর্নার পায় তারা। এ সময় বলের দখলই পাচ্ছিল না উরুগুয়ে। খেলার গতির বিরুদ্ধে ১২ মিনিটে একটি হাফ চান্স পেলেও গোল পায়নি উরুগুয়ে। তারপরেই মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের বক্সে ঠাসবুনোট পাসে পাসে চাপ বাড়াতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া। ১৮ মিনিটে আবার হাফ চান্স পেলেও নষ্ট করে উরুগুয়ের ভালভার্দে। ২১ মিনিটে ডান দিক থেকে একটি সেন্টারে বক্সের মধ্যে পা ছোঁয়াতে না পেরে সুযোগ হারায় উরুগুয়ে।২৫ মিনিটে ভালভার্দের নেওয়া ফ্রি কিকের পরে কর্নার পায় তারা, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।

প্রতি আক্রমণে দক্ষিণ কোরিয়া সুযোগ পেয়ে নষ্ট করার পরের মিনিটেই তাদের গোলরক্ষক নিশ্চিত গোল বাঁচানপ্রতিপক্ষের নুনেজের পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ধরে নিয়ে। বল বাড়িয়েছিলেন পেলিস্ট্রি। ৩৩ মিনিটে উই ঝ্যাং বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বারের উপর দিয়ে বল তুলে দেন। ৩৯ মিনিটে আবার বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বারের উপর দিয়ে বল তুলে দেন কোরিয়ানরা। তাঁদেরদের তুখোড় ফিটনেস আর দৌড়ের ফলে ছটফট করতে থাকা উরুগুয়ে বল ধরে খেলা শ্লথ করে দিতে দিতেই কাউন্টার অ্যাটাকে এসে ৪৪ মিনিটে একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে।প্রথমার্ধে ফল দাঁড়ায় গোলশূন্য। এত খেলে ও ৫১ শতাংশ পজেশন রেখেও একটিও গোলমুখী শট করেনি দক্ষিণ কোরিয়া, যেখানে উরুগুয়ের ১টি শট গোলের লক্ষ্যে ছুটেছিল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ৫০ মিনিটে উরুগুয়ের গিমেনেজের চমৎকার ট্যাকেল সন-কে গোল থেকে বঞ্চিত করে। ৫২ মিনিটে সন-এর কর্নার বাঁচিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রোশে। এরপরে হালকা চাপ বাড়ায় উরুগুয়ে। ৬৮ মিনিটে নুনেজের পাস সুয়ারেজকে খুঁজে পাওয়ার আগেই কোরিয়ান গোলরক্ষক সেং গিউ তা বাঁচিয়ে দেন। ৬৪ মিনিটে সুয়ারেজের বদলি কাভানি আসার পরে উরুগুয়েকে বেশি সচল লাগছিল আর কোরিয়ান রক্ষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ছিল। ৭৪ মিনিটে তিনটি বদল করে দক্ষিণ কোরিয়া। ৭৬ মিনিটে তাদের চো গুয়ে সং-য়ের শট বাইরে যায়। পাল্টা ৮০ মিনিটে উরুগুয়ের নুনেজ-য়ের শট বাইরে যায়। ৯০ মিনিটে উরুগুয়ের ভালভার্দের জোরালো শট পোস্টে লাগে। পরের মিনিটেই দক্ষিণ কোরিয়ার সন-এর শক্তিশালী পোস্ট বাইরে যায়। ৭ মিনিটের ইনজুরি টাইমেও এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ উপভোগ্য (বল পজেশন উরুগুয়ে ৫৬% বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ৪৪%)। সারা ম্যাচে একটিই গোলমুখী শট ছিল, যা নিয়েছিল উরুগুয়ে।

একটি করে পয়েন্ট পেয়ে বিশ্বকাপের লড়াই শুরু করল উরুগুয়ে আর দক্ষিণ কোরিয়া। অস্তে না গেলেও আজ পরপর তিন দিন ‘এশিয়ান সূর্যোদয়’ হল না কাতারে।