২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:২৫:৩৪ পূর্বাহ্ন


যুগে যুগে যেভাবে মানুষ পাপের ফল ভোগ করেছে
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১১-২০২২
যুগে যুগে যেভাবে মানুষ পাপের ফল ভোগ করেছে ফাইল ফটো


গুনাহ অন্তরের জন্য ক্ষতিকর, ঠিক বিষ যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে এ ক্ষতির মধ্যে অবশ্যই তারতম্য রয়েছে। দুনিয়া ও পরকালে যত অকল্যাণ অথবা ব্যাধি রয়েছে তার মূলে রয়েছে গুনাহ ও পাপাচার। এ গুনাহ ও পাপাচারের কারণে যুগে যুগে মানুষ কঠিন পরিস্থিতি ও পরিণামের সম্মুখীন হয়েছেন। সেসব কী?

১. হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম একদিন জান্নাত থেকে বের হতে বাধ্য হন।

২. শয়তান ইবলিস আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়।

৩. হজরত নুহ আলাইহিস সালামের যুগে বিশ্বব্যাপী মহা প্লাবন দেখা দেয় এবং কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ও বস্ত্ত ছাড়া সবই ধ্বংস হয়ে যায়।

৪. এ পাপের কারণেই হজরত হুদ আলাইহিস সালামের যুগে ধ্বংসাত্মক বায়ু প্রবাহিত হয় এবং সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যায়।

৫. পাপ বা গুনাহের কারণেই হজরত ছালিহ আলাইহিস সালামের যুগে ভয়ঙ্কর চিৎকার শুনে সবাই হৃদয় ফেটে অথবা হৃদয় ছিঁড়ে মারা যায়।

৬. এরই কারণে হজরত লুত্ব আলাইহিস সালামের কওমকে জমিন উল্টিয়ে তাতে পাথর নিক্ষেপ করা হয় এবং শুধু একজন ছাড়া তাঁর পরিবারের সবাইকেই রক্ষা করা হয়। আর অন্যরা সবাই দুনিয়া থেকে একেবারেই নির্মূল হয়ে যায়।

৭. পাপের কারণে হজরত শুআইব আলাইহিস সালামের যুগে আকাশ থেকে আগুন বর্ষিত হয়।

৮. আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপাচারের কারণে ফেরআউন ও তার বংশধররা লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়।

৯. আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপাচারের কারণেই ক্বারূন তার ঘর, সম্পদ ও পরিবারসহ ভূমিতে ধসে যায়। (আল-জাওয়াবুল কাফি পৃষ্ঠা ৪২-৪৩)

১০. পাপাচার ও বাড়াবিাড়ির কারণেই আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈল তথা ইহুদিদের উপর এমন শক্র পাঠিয়ে দেন, যারা তাদের এলাকায় ঢুকে তাদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস করে দেয়, তাদের পুরুষদের হত্যা করে, তাদের নারী ও বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের সকল সম্পদ লুটে নেয়। এভাবে একবার নয়। বরং দুই দুই বার এ ঘটনা ঘটে। আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের সম্পর্কে কসম করে বলেন-

 وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ يَسُومُهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ

‘(হে নবি!) তুমি স্মরণ করো সে সময়ের কথা; যখন তোমার প্রভু ঘোষণা করলেন, তিনি অবশ্যই কেয়ামত পর্যন্ত ইহুদিদের প্রতি এমন লোক পাঠাবেন যারা ওদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে।’ (আরাফ : আয়াত ১৬৭)

এসব দৃষ্টান্ত থেকে গুনাহ বা পাপের কুপ্রভাব ও ভয়াবহতা সহজেই বোঝা যায়। মুমিন বান্দাকে পাপের এসব ভয়াবহতা সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকে। মুমিন বান্দা কখনও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে পাপ ও দুনিয়াবি বাহ্যিক চাকচিক্যের অতল গহবরে নিজেকে বিলীন করে দিতে পারে না। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত হুজায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الخَيْرِ، وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي

‘লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কল্যাণ বা নেকি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো। আমি তাঁকে অকল্যাণ ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম। যেন সেটা আমাকে পেয়ে না বসে।’ (বুখারি ৩৬০৬, মুসলিম ১৮৪৭)

মুমিন মুসলমানের উচিত মানব জীবনে পাপের কুপ্রভাব ও ভয়াবহতা থেকে বেঁচে থাকা। কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যুগে যুগে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। পাপাচারমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।