২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০২:০৮:৩৭ অপরাহ্ন


বিশ্বের সবচেয়ে দামি ওষুধের অনুমোদন, এক ডোজের দাম ৩৫ কোটি টাকা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১১-২০২২
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ওষুধের অনুমোদন, এক ডোজের দাম ৩৫ কোটি টাকা ফাইল ফটো


জটিল এবং বিরল বিভিন্ন রোগের ওষুধপ্রস্তুতকারী যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি সিএসএল বেহরিংয়ের হিমোফিলিয়া বি জিন থেরাপির অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা। এই ওষুধের মাত্র এক ডোজ নিলেই হিমোফিলিয়া রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু ওষুধটির এক ডোজের দাম ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি ৩৫ কোটি ৭০ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫০ টাকার বেশি। এর ফলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ওষুধ হয়ে উঠেছে এটি।

হিমোফিলিয়া এক ধরনের রক্তক্ষরণজনিত রোগ; যা বংশানুক্রমে বাহিত হয়। মানুষের শরীরের কোনও স্থানে কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা আছে। রক্ত জমাট বাঁধার এই প্রক্রিয়ায় অণুচক্রিকার সঙ্গে একাধিক ফ্যাক্টর বা উৎপাদক কাজ করে। এসবের মধ্যে বিশেষ দুটি উপাদানের উৎপাদনের মাত্রা হ্রাস পেলে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হয়। আর এই পরিস্থিতিতে একেবারে হালকা আঘাতে অথবা বিনা কারণেও রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে; যাকে হিমোফিলিয়া বলা হয়।

সিএসএল বেহরিং হিমোফিলিয়ার যে ওষুধটি এনেছে সেটির নাম হেমজেনিক্স। হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শরীরে মাত্র একবার এই ওষুধ প্রয়োগ করা হলে তা এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ৫৪ শতাংশ রক্তপাত হ্রাস করতে পারে। হেমজেনিক্স নিয়ে চালানো বড় পরিসরের এক গবেষণায় এসব চিত্র দেখা গেছে।

গবেষকরা দেখেছেন, এই ওষুধটি ফ্যাক্টর আইএক্সের সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ইনফিউশন থেকে ৯৪ শতাংশ রোগীকে মুক্ত করেছে। বর্তমানে হিমোফিলিয়ার রোগীদের সম্ভাব্য আশঙ্কাজনক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

বায়োটেকনোলজি বিনিয়োগকারী ও লোনকার ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্র্যাড লোনকার বলেছেন, প্রত্যাশার চেয়ে ওষুধটির মূল্য একটু বেশি হলেও আমি মনে করি, এটির সফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রথমত বিদ্যমান ওষুধগুলোও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত হিমোফিলিয়ার রোগীরা প্রতিনিয়ত রক্তপাতের আশঙ্কায় থাকেন। এর ফলে জিন থেরাপিই কারো কারো কাছে আকর্ষণীয় হবে।

হিমোফিলিয়ার অন্তর্নিহিত সব সমস্যা শনাক্তের পর বিধ্বংসী পরিস্থিতির নাটকীয় সমাধানে সক্ষম জিন থেরাপি। এর আগে, ২০১৯ সালে শিশুদের মেরুদণ্ডের ক্ষয়রোগের চিকিৎসার জন্য সুইস-মার্কিন ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস এজির জোলগেন্সমা নামের একটি ওষুধের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এই ওষুধটির দাম ২১ লাখ মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি ২১ কোটি ৪২ লাখ ৫৩ হাজার টাকার বেশি।

এছাড়া চলতি বছরের শুরুর দিকে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসায় ব্লুবার্ড বায়ো ইনক’র তৈরি জিনটেগ্লো ওষুধের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই ওষুধটির দাম ২৮ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি ২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বেশি।

মার্কিন বায়োটেক কোম্পানি বায়োজেনের অ্যালঝেইমার রোগের ওষুধ অ্যাডুহেলম এবং ইউরোপে ব্লুবার্ডের জিনটেগ্লোর মতো ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণে নতুন ওষুধের দাম নির্ধারণ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) সেন্টার ফর বায়োলজিকস ইভালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক পিটার মার্কস বলেন, হিমোফিলিয়ার চিকিৎসায় অগ্রগতি হলেও রক্তপাত প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা রোগীদের জীবনযাত্রার মান নষ্ট করতে পারে। তিনি বলেন, হিমোফিলিয়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হেমজেনিক্স থেরাপির উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ এক অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে।

ম্যাসাচুসেটসের লেক্সিংটনে ইউনিকিউর এনভি জিন থেরাপি হেমজেনিক্স উৎপাদন করবে। ২০২০ সালে হেমজেনিক্স বাজারজাত করার অধিকার ইউনিকিউর এনভির কাছ থেকে কিনে নেয় সিএসএল বেহরিং। 

ইউনিকিউরের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ হিমোফিলিয়া বি রোগে আক্রান্ত। বি’র তুলনায় হিমোফিলিয়া এ-তে আক্রান্ত রোগী প্রায় পাঁচগুণ বেশি।