উপদেশ দেওয়া ভালো। উপদেশ অনুযায়ী আমল করাও ভালো কিন্তু আমলহীন উপদেশ নিন্দনীয় কাজ। শাস্তি ভোগের কারণ। অনেকের জিজ্ঞাসা এমন যে, অন্যকে ভালো কাজের উপদেশ দিয়ে নিজে পালন না করলে কি গুনাহ হবে?
কোরআন সুন্নাহয় ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। আর যারা উপদেশ দেওয়া সত্ত্বেও নিজেরা তা থেকে বিরত থাকে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা উপদেশ দেওয়া সম্পর্কে বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পূণ্যশীলতা ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য কর।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২)
বান্দা যখন নিজে ভালো কাজ করার পাশাপাশি অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তখন আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-
‘একজন মুসলমান যতক্ষণ পর্যন্ত তার অপর মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহও তার সাহায্যে হাত বাড়িয়ে রাখেন।’ (মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিজি)
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি (লোকদের) ভালো কাজের উপদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে কিন্তু নিজেরাই উপদেশ অনুযায়ী ভালো কাজ করে না এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত হয় না, তাদের সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা লোকদেরকে ন্যায়ের পথ অবলম্বন করতে বল; কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন করতে থাক। তোমরা কি বিচার-বুদ্ধিকে কোনো কাজেই লাগাও না?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৪)
বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বনি ইসরাঈলরা মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য, তাকওয়া ও কল্যাণের কাজের আদেশ করতো; অথচ নিজেরা এর উল্টো চলতো। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের এমন কাজকে ভর্ৎসনা করেছেন।
অন্যকে ভালো কাজের উপদেশ দিয়ে নিজে তা থেকে বিরত থাকা ব্যক্তির জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। হাদিসের বর্ণনায় তা এভাবে ওঠে এসেছে-
হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। এর ফলে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে আসবে। সে এটা নিয়ে বার বার চক্কর দিতে থাকবে, যেভাবে গাধা চক্রের মধ্যে বারবার ঘুরতে থাকে। দোজখীরা তার চারপাশে জড়ো হয়ে জিজ্ঞাসা করবে, হে (অমুক) লোক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি লোকদের সৎ কাজের আদেশ দিতে না এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলতে না? জবাবে সে বলবে, ‘হ্যাঁ’ আমি সৎ কাজের আদেশ দিতাম কিন্তু আমি নিজে তা পালন করতাম না। আমি অন্যদেরকে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু আমি নিজে তা মানতাম না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
এ বিষয়টি সম্পর্কে ইসলামি স্কলাররা বলেন, ভালো কাজের আদেশ একটি বিষয় এবং ভালোর ওপর আমল করা অন্য বিষয়। প্রতিটি কাজের জন্য পৃথক পৃথক বিনিময় রয়েছে।
তবে ইসলাম মনে করে, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ হতে বারণকারীকে অবশ্য অধিকতর পরহেজগার হওয়া বাঞ্ছনীয়। মুত্তাকি ব্যক্তির দাওয়াত ভালো ফল বয়ে আনে। পক্ষান্তরে নিজে আমল না করে অপরকে দাওয়াত দেওয়া যদিও জায়েজ, তবুও তা নিন্দনীয়। এ ধরনের ব্যক্তিদের দাওয়াত ফলদায়ক নয়। আর এ শ্রেণির মানুষের জন্য জাহান্নামের কঠিন শাস্তি রয়েছে। এ শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে পাকে আরও এসেছে-
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘ইসরার (মিরাজ) রাতে আমি এমন একশ্রেণির মানুষের কাছ দিয়ে গমন করলাম, যাদের জিহ্বাকে জাহান্নামের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। আমি জিবরাঈলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করলাম, ওরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো তোমার উম্মতের দুনিয়াদার বক্তা। তারা যেসব ভালো কাজের আদেশ করতো, তা নিজেরা ভুলে বসতো, অথচ তারা কিতাব পাঠ করছে। তবুও কি তারা বুঝবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, অন্যকে উপদেশ দেয়ার আগে সে উপদেশ নিজের মাঝে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এতে দু’টি উপকারিতা রয়েছে।
১. হাদিসে ঘোষিত কষ্ট বা শাস্তি থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
২. নিজে আমল করার পাশাপাশি তা যদি অন্যকে করার জন্য বলা হয়, তবে তার নসিহত যথাযথ পালিত হবে। বা কোনো আমল করা হয় তা যথাযথভাবে সম্পাদন হবে। ওই ব্যক্তির এ নসিহত যথাযথ বাস্তবায়ন হবে।
সুতরাং নিজে আমল করার পাশাপাশি অন্যকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিলে তাতে দুনিয়া ও পরকালে সফলতা লাভ করা সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। নেক আমলের পাশাপাশি অন্যদেরকে নেক আমলের নসিহত করার তাফিক দান করুন। আমিন।