২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৩৩:৪২ পূর্বাহ্ন


অট্টালিকায় ঠাঁই নেই, বাবার ঠিকানা মুরগির খামারে!
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১১-২০২২
অট্টালিকায় ঠাঁই নেই, বাবার ঠিকানা মুরগির খামারে! অট্টালিকায় ঠাঁই নেই, বাবার ঠিকানা মুরগির খামারে!


সাত শতক জমির ওপর নির্মিত চারতলা ভবনের তৃতীয় তলায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন শামসুল হক। তবে ছেলের বিশাল ফ্ল্যাটে ঠাঁই হয়নি তাঁর বৃদ্ধ বাবা ইয়াকুব আলীর। সন্তান অবশ্য বাবার জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছেন; তবে সেটা ওই ভবনের ছাদে। ছাদের ওপরে টিন দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি মুরগির খামার।

সেই খামারের এক পাশে শুয়ে যেন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ৮০ বছর বয়সী ইয়াকুব আলী। ময়লা, দুর্গন্ধ, মশার কামড় তাঁর নিত্যসঙ্গী। খাবারও খেতে হয় মুরগির খামারেই। আর ভবনটির তৃতীয় তলায় কাটে পরিবারের সঙ্গে ছেলের বিলাসী জীবন।

ঘটনাটি কুমিল্লা লাকসাম পৌর শহরের পশ্চিমগাঁও পুরান বাজার এলাকার বাসিন্দা শামসুল হকের ‘হক মঞ্জিল’ নামের বাড়িতে। চরম অযত্ন আর অবহেলায় দিন পার করা বৃদ্ধ ইয়াকুব আলীর বাড়ি লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নে। ২০০৬ সালে স্ত্রীর মৃত্যুর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ইয়াকুব আলীর বড় ছেলে শামসুল হক।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামসুল ছাড়াও ইয়াকুব আলীর আরো এক ছেলে এবং পাঁচ মেয়ে রয়েছেন। তবে অসহায় বাবার খবর রাখেন না কেউই। ছোট ছেলে প্রবাসে তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন। আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, বাবার সম্পত্তির ভাগ বুঝে নিয়ে যে যার মতো স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করছেন। তারাও খোঁজ রাখেন না বৃদ্ধ বাবার। তাই বাধ্য হয়েই বড় ছেলের বাড়ির ছাদে অবহেলায় দিন কাটাচ্ছেন ইয়াকুব আলী।  

চিকিৎসার অভাব আর অযত্নের কারণে ইয়াকুব আলী এখন অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বুকভরা কষ্টগুলো চিৎকার করে বলতে চাইলেও বয়সের ভারে বন্ধ হয়ে গেছে তার কণ্ঠস্বর। এজন্য শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন কেউ কাছে গেলেই।

ইয়াকুব আলীর এমন কষ্টের দৃশ্য সন্তানদের চোখে না পড়লেও এলাকার মানুষ ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। রবিবার এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা মতিন। এ সময় তিনি শামসুল হককে এক দিনের মধ্যে তার বাবাকে ঘরে নিয়ে যত্নে রাখাসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন।

ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার ইউএনও চারতলা বাড়িটির ছাদে গিয়ে দেখেন মুরগির খামারের মধ্যে শুয়ে আছেন ইয়াকুব আলী। এ সময় ইউএনও ক্ষোভ প্রকাশ করে ইয়াকুব আলীর ছেলে শামসুল হককে শাসান। এক পর্যায়ে উচ্চস্বরে শামসুল ইউএনওকে বলেন,  ‘আমার দাঁতের যত্ন আমি কিভাবে নেব, এটা আমার ব্যাপার। আপনাদের কী?’

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিতা-মাতার হক আইন ২০১৩ অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থার কথা বললে শান্ত হন শামসুল হক। ইউএনও ইয়াকুব আলীর দেখভাল ও থাকার সুব্যবস্থার জন্য তাকে এক দিন সময় দেন।

ইউএনওর সঙ্গে রবিবার ঘটনাস্থলে ছিলেন লাকসাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু সায়েদ বাচ্চু। তিনি জানান, বৃদ্ধ ইয়াকুব আলী উপজেলা কান্দিরপাড় ইউনিয়ন ছনগাঁও গ্রামের নিজ বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। ২০০৬ সালে তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর বড় ছেলে প্রবাসফেরত শামসুল হক ২০০৭ সালে পশ্চিমগাঁও পুরান বাজার এলাকায় সাত শতক জায়গার ওপর ‘হক মঞ্জিল’ নামে ওই বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন।

শামসুল হকের স্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাঁর শ্বশুর দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। শ্বশুরের মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিক ওষুধ ও দেখভাল করেছেন তিনি। মাথায় সমস্যার কারণে সব কিছু ওলটপালট করে ফেলেন তিনি। এ জন্য দুই-এক দিন আগে তাকে ছাদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

আর শামসুল হক দাবি করেন, তাঁর বাবার মাথায় সমস্যা। ঠিকমতো কাপড় পরেন না। কোনোভাবেই তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না। এজন্য ছাদে রাখা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা মতিন বলেন, ‘ওই বৃদ্ধ বাবাকে ছাদ থেকে তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়াসহ ভালোভাবে দেখভাল করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। যদি তারা দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আইনগণ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এ ঘটনার খোঁজ রাখছি।’ সূত্র: কালের কন্ঠ