২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:৩৩:০৬ পূর্বাহ্ন


জঙ্গি ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তি শনাক্ত: সিটিটিসি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১১-২০২২
জঙ্গি ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তি শনাক্ত: সিটিটিসি জঙ্গি ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তি শনাক্ত: সিটিটিসি


আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে আর কারা কারা ছিল এরকম বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে কারও নাম-পরিচয় বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, রোববার আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তির নাম আমরা পেয়েছি। তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে সেটাও আমরা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পরিকল্পনা ও অপারেশনে কারা কারা ছিল এরই মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাদের যতদ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিষয়টি অনেক জটিল। নাইন ইলেভেনের ঘটনা কবে ঘটেছিল সেটা আমরা সবাই জানি (২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর)। ওই ঘটনার এক যুগ পর কিন্তু ওসামা বিন লাদেনের অপারেশনটি সংঘঠিত হয়েছিল। আদালতের সামনে থেকে জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে কারা কারা ছিল তাদের বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তিকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। এজন্য গণমাধ্যম ও দেশবাসীর সহযোগিতা চাইছি।

জঙ্গিদের টার্গেট শুধু চারজনই ছিল নাকি আরও জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার টার্গেট ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, চারজনকে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে দুজনকে তারা নিয়ে যায়। প্রথমে চারজন নেমেছে, তাদেরই তারা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। যদি একসঙ্গে বেশি নামতো তাদেরও নিয়ে যেত, এমন পরিকল্পনা থাকতে পারে হয়তো। অপারেশনে যারা ছিল তাদের গ্রেপ্তার করলে পুরো পরিকল্পনা জানা যাবে। তাদের আরও বড় পরিকল্পনা থাকলেও থাকতে পারতো বলে জানান তিনি।

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, আদালতে হাজিরা দিতে আসেন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গিরা। প্রত্যেক আসামিই জঙ্গি সংগঠনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সব সদস্যকে সিটিটিসি ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাদের বেশকিছু অপারেশন ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়েছিল। তাদের পুনরায় গ্রেপ্তার করা আমাদের কাছে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের আরও বড় কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা বলা সম্ভব তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে। তবে মনে হচ্ছে বড় পরিকল্পনা ছিল। তারা চারজনকে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুজনকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। যেসব আসামিকে আদালতে হাজিরার জন্য আনা হয়েছিল তারা সবাই আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখা অর্থাৎ আস্কারি বিভাগের সদস্য ছিল। তাদের সবাইকে সিটিটিসি ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অনেকগুলো ঘটনা ও হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছিল।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা প্রত্যেকটি পয়েন্টকে সতর্ক করে দিয়েছি। জঙ্গিরা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারে, তারা যাতে কোনোভাবে বের হতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা যাতে কোনোভাবে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক গলে বের হয়ে যেতে না পারে। পুলিশ প্রধান একটি ঘোষণা দিয়েছেন ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

মেজর জিয়া নেতৃত্ব দেননি, তিনি মাস্টারমাইন্ড। তবে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। নামটা আপাতত বলতে চাচ্ছি না।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জঙ্গিরা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে কিনা? এই অপারেশনে নতুন জঙ্গি সংগঠনের কোনো যোগসাজশ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকালের জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে নতুন জঙ্গি সংগঠনের কোনো হাত নেই। তবে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আনসার আল ইসলাম, জেএমবি, নিউ জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোক নিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনের যোগসাজশ আমরা পেয়েছি। তবে এই ঘটনায় তাদের হাত নেই। গতকালের অপারেশনে জড়িত কমপক্ষে ১০/১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য।

রোববার দুপুরে দিকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে আসা চার জঙ্গি পুলিশের চোখে-মুখে পিপার স্প্রে করে লেখক অভিজিৎ রায় ও জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। ছিনিয়ে নেয়া আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম এবং লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। তারা জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। এরপর তাদের গ্রেপ্তার করতে ঢাকা জুড়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছে পুলিশ।