২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৪৪:৪৪ অপরাহ্ন


রেমিট্যান্সের হুন্ডি বন্ধে চতুর্মুখী তৎপরতা
অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১১-২০২২
রেমিট্যান্সের হুন্ডি বন্ধে চতুর্মুখী তৎপরতা রেমিট্যান্সের হুন্ডি বন্ধে চতুর্মুখী তৎপরতা


হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধে চতুর্মুখী তৎপরতা শুরু করেছে সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাংলাদেশ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

এসব প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে কাজ করছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে, বিএফআইইউ ব্যাংকিং চ্যানেলে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন হুন্ডিবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হুন্ডি বন্ধ করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতেই মূলত এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, হুন্ডির সঙ্গে বড় চক্র জড়িত। তাদেরকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংকিং সেবা বাড়াতে হবে। ফি কমাতে হবে। ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠালে অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে খরচ বেশি। হুন্ডিতে কোনো খরচ নেই। যে কারণে ঝুঁকি নিয়ে হলেও হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।

ডলারের দামে ব্যাংক ও খোলাবাজারের যে ব্যবধান তা কমিয়ে আনতে হবে। বিদেশে প্রবাসীরা ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারেন না। ভাষাগত সমস্যার কারণে ব্যাংকের সেবা নিতে পারেন না। প্রবাসীরা যেখানে কাজ করেন তার চেয়ে অনেক দূরে ব্যাংক। যে কারণে প্রবাসীরা ব্যাংকমুখী হচ্ছেন না। প্রবাসীদের কাছাকাছি ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিতে হবে। দেশে ব্যাংক সেবায় হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এর পক্ষে প্রচারও বাড়াতে হবে। তাহলেই প্রবাসীরা ব্যাংকমুখী হবেন রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে।

সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। এখন এটি বেশ কমে গেছে। প্রতি মাসেই গড়ে রেমিট্যান্স কমছে। এ কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব ও দেশে বিদ্যমান সংকট মোকাবিলা করতে রিজার্ভ বাড়ানোর বিকল্প নেই। কেননা রপ্তানি আয় কমে গেছে। এখন রেমিট্যান্স বাড়াতে পারলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও সরকারের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে রেমিট্যান্সে পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। বিএফআইইউ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের হুন্ডির ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডির তথ্য পেয়েছে।

যেসব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হুন্ডি হচ্ছে এমন ২ শতাধিক হিসাব সাময়িকভাবে জব্দ করা হয়েছে। হুন্ডির সঙ্গে জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টদের লাইসেন্স বাতিল করারও প্রক্রিয়া চলছে। যেসব হিসাব জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে এখন বিশদ তদন্ত চলছে। বিএফআইইউ থেকে ইতোমধ্যে হুন্ডির বিষয়ে সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করছে।

সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সারাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ কারা প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, তাদের একটি তালিকা করেছে। এই তালিকা বিএফআইইউর কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকা ধরে বিএফআইইউ সংশ্লিষ্টদের হিসাবের বিষয়ে তদন্ত করছে।

কোথায় কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন দেখলেই তার ব্যাপারে বিশদ তদন্ত করছে। এ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্প্রতি ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও মৌলভীবাজার থেকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে বিদেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে কারা রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠাচ্ছে, এরকম বাংলাদেশি বেশ কিছু নাগরিকের তালিকা সংগ্রহ করেছে। তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে হুন্ডিতে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এর বিপরীতে প্রতি ডলারে তারা দিচ্ছে ১১২ থেকে ১১৬ টাকা। ব্যাংকে পাওয়া যাচ্ছে ১০৭ টাকা। হুন্ডি বেশি টাকা পেয়ে অনেকেই অবৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।

এসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএফআইইউ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেশি আসে, সেইসব দেশের দূতাবাসগুলোতে চিঠি দিয়েছে। এসব চিঠিতে হুন্ডি বন্ধে প্রবাসীদের সচেতন করা এবং কারা হুন্ডির সঙ্গে জড়িত তাদের বিষয়ে সে দেশের সরকারকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কয়েক মাস আগে পর্তুগালে সমস্যা হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এটি বন্ধ হয়েছে। মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হুন্ডি বন্ধে তৎপরতা শুরু করেছে।

দেশের ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, বিদেশে আরও এক্সচেঞ্জ হাউজ খুলতে। যাতে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে। একই সঙ্গে বর্তমানে যেসব এক্সচেঞ্জ হাউজ বা ব্যাংক রয়েছে সেগুলোর শাখা আরও বাড়ানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, হুন্ডির সঙ্গে বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। তারা বেশ প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। মাসে যদি ৮০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স হুন্ডিতে আসে তাহলে এর বিপরীতে ৯ হাজার কোটি টাকা প্রবাসীদের দিতে হচ্ছে। এত টাকা সাধারণ মানুষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এর চক্রের সন্ধানও করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে আশার আলো দেখাতে পারে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশ থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার প্রবাসী বিদেশে গিয়েছেন। তারা রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপও কিছুটা কমবে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে গেছে। এর প্রভাবে জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদানও কমছে। একই সঙ্গে আমদানি কভারেজের মাত্রাও কমে গেছে। আগে রেমিট্যান্স দিয়ে ৪০ শতাংশ আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। এখন ২৫ শতাংশ মেটানো যাচ্ছে।