আনুগত্য হবে শুধু বৈধ ও ভালো কাজে। অন্যায় ও অবৈধ কাজে কারো আনুগত্য চলবে না। মন্দ কাজে আনুগত্য করা নিষিদ্ধ। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘আনুগত্য শুধু ভালো ও বৈধ কাজে করতে হবে। (বুখারি ৭১৪৫) ‘আল্লাহর নাফরমানিতে সৃষ্টির কোনো আনুগত্য বৈধ নয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, ১০৯৫)
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানের জন্য যাদের আনুগত্যকে নিষিদ্ধ করেছেন, তারা কারা। তাদের পরিচয় কী? কোরআন-সুন্নায় তাদের পরিচয় সম্পর্কে কী ওঠে এসেছে? যাদের আনুগত্য করা নিষিদ্ধ, তারা হলো-
১. অবিশ্বাসী ও মুনাফিক: যে কোনো মুসলমানদের জন্য কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করা নিষিদ্ধ। এটা মহান আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-
وَ لَا تُطِعِ الۡکٰفِرِیۡنَ وَ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ دَعۡ اَذٰىهُمۡ وَ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰهِ وَکِیۡلًا
‘আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না এবং তাদের যন্ত্রণাকে মনে স্থান দিও না, আর নির্ভর কর আল্লাহর উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা আহজাব : আয়াদ ৪৮)
২. আহলে কিতাব: আহলে কিতাব তথা ইহুদি-নাসারাদের আনুগত্য করাও আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন। আল্লাহর ঘোষণা-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تُطِیۡعُوۡا فَرِیۡقًا مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ یَرُدُّوۡکُمۡ بَعۡدَ اِیۡمَانِکُمۡ کٰفِرِیۡنَ
‘হে মু’মিনগণ! তোমরা যদি কিতাবীদের মধ্য হতে কোন দলের কথা মেনে নাও, তবে তারা তোমাদের ঈমান আনার পর আবার তোমাদেরকে কাফির বানিয়ে ছাড়বে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০০)
৩. অনুমান নির্ভর মানুষ: বেশির ভাগ মানুষের আনুগত্য করা যাবে না। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ অনুমাননির্ভর কথা বলে এবং ধারণার অনুসরণ করে। এ জন্য বেশির ভাগ মানুষের আনুগত্য করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ اِنۡ تُطِعۡ اَکۡثَرَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ یُضِلُّوۡکَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ؕ اِنۡ یَّتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ اِنۡ هُمۡ اِلَّا یَخۡرُصُوۡنَ
‘তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের আনুগত্য কর তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে, তারা তো কেবল আন্দাজ-অনুমানের অনুসরণ করে চলে, তারা মিথ্যাচার ছাড়া কিছু করে না।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১১৬)
৪. মিথ্যাবাদী: যারা মিথ্যা কথা বলে ও মিথ্যাচার করে তাদের আনুগত্য করতে আল্লাহ নিষেধ করে বলেন-
فَلَا تُطِعِ الۡمُکَذِّبِیۡنَ
‘অতএব তুমি মিথ্যারোপকারীদের আনুগত্য করবে না। ’ (সুরা কলম : আয়াত ৮)
৫. শপথকারী: অনুরূপভাবে বেশি শপথকারী ব্যক্তির আনুগত্য করতেও আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন-
وَ لَا تُطِعۡ کُلَّ حَلَّافٍ مَّهِیۡنٍ
‘তুমি তার অনুসরণ কর না, যে বেশি বেশি কসম খায় আর যে (বার বার মিথ্যা কসম খাওয়ার কারণে মানুষের কাছে) লাঞ্ছিত।’ (সুরা কলম : আয়াত ১০)
৬. নিন্দাকারী: চোগলখুর ও পেছনে নিন্দাকারী ব্যক্তির আনুগত্য করাও নিষিদ্ধ। পরবর্তী আয়াতেও মহান আল্লাহ এ ঘোষণা দেন এভাবে-
هَمَّازٍ مَّشَّآءٍۭ بِنَمِیۡمٍ
‘পেছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখুরী করে বেড়ায় (তার আনুগত্য করা নিষিদ্ধ)।’ (সুরা কলম : আয়াত ১১)
৭. সীমা লঙ্ঘনকারী: পাপী ও সীমা লঙ্ঘনকারীর আনুগত্য করা নিষিদ্ধ। একাধিক আয়াতে সীমা লঙ্ঘনকারীদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেছেন আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَّنَّاعٍ لِّلۡخَیۡرِ مُعۡتَدٍ اَثِیۡمٍ
‘যে ভাল কাজে বাধা দেয়, সীমালঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ।’ (সুরা ক্বলম : আয়াত ১২)
অন্য আয়াতে এসেছে-
وَ لَا تُطِیۡعُوۡۤا اَمۡرَ الۡمُسۡرِفِیۡنَ
‘আর তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারীদের আদেশ মান্য কোরো না। ’ (শুআরা, আয়াত : ১৫১)
৮. গাফেল অন্তর: আল্লাহ তাআলা উদাসীন ও গাফেলের আনুগত্য করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন-
وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ هَوٰىهُ وَ کَانَ اَمۡرُهٗ فُرُطًا
‘... আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার জিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। কোরআনের নির্দেশ মেনে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।