২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৪৩:০৯ অপরাহ্ন


গুরুতর ৭টি রোগের প্রবণতা নারীদের মাঝে বেশি দেখা যায়!
ফারহানা জেরিন এলমা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২২
গুরুতর ৭টি রোগের প্রবণতা নারীদের মাঝে বেশি দেখা যায়! ফাইল ফটো


শারীরিক ও মানসিক রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনার সাথে সম্পর্ক রয়েছে লিঙ্গের। বেশ কিছু গুরুতর ও বড় ধরনের রোগ দেখা দেওয়ার উপর লিঙ্গ অনেকাংশে প্রভাব বিস্তারকারী একটি বিষয়। তবে এ সম্পর্কে অবগত নয় অনেকেই। কারণ হৃদরোগ কিংবা বিষণ্ণতার মতো পরিচিত রোগগুলোর সাথে লিঙ্গের সম্পর্কে থাকতে পারে, এ ধারণাটি কখনো বিশেষ স্থান পায়নি।

অথচ বেশ কিছু সিরিয়াস রোগ পুরুষদের তুলনায় নারীদের মাঝে দেখা দেয় কয়েক গুণ বেশি। এমন সাতটি বড় ধরনের রোগ সম্পর্কে জানানো হল এই ফিচারে।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস: আর্থ্রাইটিসের সবচেয়ে কমন ধরণ হলো হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ ফ্যামিলি মেডিসিন এর পরিচালক জিনা ট্র্যান জানান, পুরুষদের চাইতে নারীদের মাঝে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবণতা অন্তত তিন গুণ বেশি। নারীদের শারীরিক গঠন ও জয়েন্ট তুলনামূলক ফ্লেক্সিবল হলেও সন্তান জন্মদানের সময়ে যে শারীরিক প্রেশারের ভেতর দিয়ে একজন নারীকে যেতে হয়, তা থেকেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আলঝেইমার ডিজিজ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন দেশটির আলঝেইমারে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা থেকে পর্যবেক্ষন করেছে, স্মৃতিশক্তি হারানোর মতো এই রোগটিতে আক্রান্তদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী। গবেষণার তথ্য মতে, নারীদের মেনোপজকালীন হরমোনাল পরিবর্তনের সাথে আলঝেইমার দেখা দেওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। তবে মন ও শরীরকে কার্যক্ষম রাখা, পর্যাপ্ত ঘুমানো ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আলঝেইমারের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনা সম্ভব।

ডিপ্রেশন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিস্টিক্স তাদের সার্ভে থেকে দেখেছে, পুরুষদের চাইতে নারীদের মাঝে ডিপ্রেশন তথা বিষণ্ণতায় ভোগার সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবণতা থাকে দ্বিগুণ (নারীদের মাঝে ১০.৪ ও পুরুষদের মাঝে ৫.৫)। পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক ও সাইকোলজিস্ট ডেবরাহ সেরানি জানান, পুরুষদের চাইতে নারীদের মাঝে তুলনামূলক বেশি বায়োলজিক্যাল অরিজিন্স থাকার ফলে নিউরোক্যামিস্ট্রি পরিবর্তনের ফলে বিষণ্ণতায় ভোগার সমস্যাটি তাদের মাঝে বেশি দেখা যায়। প্রতি মাসে হরমোনাল পরিবর্তন, সন্তান জন্মদান, মেনোপজের ভেতর দিয়ে যাওয়ার মতো বড় ধরনের পরিবর্তনগুলো বিষণ্ণতার সমস্যাকে বাড়িয় দেয়।

হৃদরোগ: নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই মৃত্যুজনিত রোগের মাঝে প্রথমদিকে থাকবে হৃদরোগ। তবে বেশ কিছু পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, পুরুষদের চাইতে নারীদের হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী মৃত্যুর হার বেশি। কিন্তু এমনটা হওয়ার কারণ কী? বেশ কিছু চিকিত্‍সক বিষয়টি খতিয়ে দেখে জানিয়েছেন, যে সকল নারীদের হৃদরোগ দেখা দেয় তারা তুলনামূলক বেশি অসুস্থ থাকেন এবং হৃদরোগের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য রোগও থাকে। এছাড়া যেকোন কারণে বুকে ব্যথা দেখা দিলেও অধিকাংশ সময় এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে এই সমস্যা দেখা দেয়।

ইউরোলজিক্যাল সমস্যা: এক্ষেত্রে নারীদের অ্যানাটমি (দৈহিক গঠনতন্ত্র) অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। নারী ও পুরুষের মূল দৈহিক গঠনতন্ত্রের পার্থক্যের জন্যেই নারীদের মাঝে ইউরিনারি ট্র্যাকশন ইনফেকশন (UTIs), ইনকন্টিনেন্স, ব্লাডার লিকিংয়ের মতো সমস্যাগুলো বেশি হয়। এছাড়া সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়ার ফলেও ইউরোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।

স্ট্রোক: আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে প্রতি বছর ৫৫,০০০ এর বেশি নারী স্ট্রোকের শিকার হন এবং মারা যান। নারীদের মাঝে যারা ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিলস সেবন করেন, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেন এবং গর্ভধারণ করেন, তাদের মাঝে স্ট্রোকজনিত সমস্যা ও মৃত্যুর হার অধিক বেশি।

থাইরয়েড ডিজিজ: আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, পুরুষদের চাইতে নারীরা অন্তত ৫-৮ গুণ বেশি ঝুঁকির মাঝে থাকেন থাইরয়েডজনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে। দেখা গেছে প্রতি আটজন নারীর মাঝে একজন নারী পুরো জীবদ্দশায় কখনো না কখনো থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগেছেন।

রাজশাহীর সময় /এএইচ