২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০১:২৩:৫০ পূর্বাহ্ন


শিল্প বাঁচাতে দ্রুত গ্যাস চান ব্যবসায়ীরা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১০-২০২২
শিল্প বাঁচাতে দ্রুত গ্যাস চান ব্যবসায়ীরা ফাইল ফটো


জ্বালানি সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পোৎপাদন। রপ্তানিমুখী শিল্পে বেশি সমস্যা হচ্ছে। অধিকাংশ কারখানা দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস পাচ্ছে না। গ্যাস পেলেও চাপ এত কম থাকে, তাতে কারখানা চালুই করা যায় না। বিদ্যুৎও ভোগাচ্ছে। শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। রপ্তানি আদেশ কমছে। তাই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। না হলে শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। দাম বাড়িয়ে হলেও গ্যাস আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর কাঠামো পুনর্গঠন করলে জ্বালানির দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

বুধবার বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার কার্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব দাবি জানান। সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিসিআই ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এবং হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ, নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), বিজিএমইএর সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি, বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জসিম উদ্দিন বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে হলেও আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ চাই। কর কাঠামো পুনর্গঠন করলে মূল্য সমন্বয় সহনীয় থাকবে।

এ. কে. আজাদ বলেন, অন্যান্য খাত থেকে সাশ্রয় করে হলেও শিল্পে ৫ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো জরুরি। তা হলে শিল্প খাত টিকে যাবে।

ব্যবসায়ী নেতারা শিল্পাঞ্চল বিশেষ করে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়েছেন।

সভায় নসরুল হামিদ বলেছেন, এসব এলাকার গ্যাসের চাপের সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে। পরিকল্পিত এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপন করলে এককভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে সুবিধা পাওয়া যেত। বিচ্ছিন্নভাবে যত্রতত্র শিল্পকারখানা স্থাপন করায় এই সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, গাজীপুর, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের চাপের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে। ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৭% ও শিল্পে ১৮% গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। মিশ্রিত গ্যাসের (দেশীয় ও আমদানি করা এলএনজি) দাম প্রতি ঘনমিটার ২৮.৪২ টাকা অথচ গড় বিক্রয়মূল্য ১১.৯১ টাকা। শিল্পের প্রসারের জন্যই কম দামে গ্যাস বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে যে পরিমাণ গ্যাস শিল্পকারখানায় দেওয়া হয়েছিল, এবারও ঠিক সেই পরিমাণই গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিল্পের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বেড়ে গেছে। এতে চাহিদা বাড়ায় জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে শিল্পকারখানার জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের পৃথক কোনো বিতরণ বা সঞ্চালন লাইন নেই। এ কারণে শিল্পের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণ করলেও আলাদা সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইনে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয়।

সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'ভালো আলোচনা হয়েছে। কোন কোন জায়গায় কী ধরনের সমস্যা তা নিয়ে কথা বলেছেন তাঁরা (ব্যবসায়ী নেতারা)। আমরা বলেছি, অচিরেই এটা ঠিক করার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে যাতে সমস্যা না হয়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, সেটা অন্য বিষয়। এখনকার যে পরিস্থিতি রয়েছে আগামী মাসগুলোতে অবস্থা (গ্যাস-বিদ্যুৎ) এর চেয়ে যেন ভালো হয় সবাই মিলে সেই চেষ্টা করব। তাঁরা (ব্যবসায়ীরা) কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। কোন কোন জায়গায় গ্যাসের চাপ কম, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা সেগুলোর সমাধান দেব। আমার মনে হয় না, এগুলো খুব বড় সমস্যা। শিল্প মালিকরা গত বছরও যে গ্যাস পেতেন, এ বছরও সেই পরিমাণ গ্যাস পাচ্ছেন। এখানে কিছু সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের, আমরা এর সমাধান করব। গ্যাস আমদানি বাড়ানো হবে কিনা সেটি সরকারের সিদ্ধান্ত।'

সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'কভিড পরিস্থিতি আমাদের পরিকল্পনামতো এগোতে দেয়নি। তার পরও শিল্পকারখানায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। রিজার্ভ ঘাটতি যেন না হয়, সেজন্য গ্যাস আমদানি কম করছি সেটা ঠিক না। সমস্যা হচ্ছে দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন যদি আমরা আমদানি করি সেখানে আমাদের দাম বাড়াতে হবে।'

আন্তর্জাতিক বাজার খুব অস্থির হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, 'কিছুদিন আগে এলএনজির স্পট মার্কেটের দাম কমেছিল। গত দুই-তিন দিনের মধ্যে আবারও বেড়ে গেছে। এটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তার পর আমরা ভাবব কী করা যায়।'

জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাসের সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, এটা বৈশ্বিক। কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায় সেই চিন্তা করতে হবে। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পে বেশি সমস্যা হচ্ছে। তাই কীভাবে সহজে শিল্পে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, গ্যাসের সরবরাহ কোথায় কাটছাঁট করা যায়, সেসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাজারেও গ্যাসের দাম বেড়েছে। এখন টাকা দিলেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ দাম ওঠানামা করছে। এই কমছে তো আবার বাড়ছে। তাই কীভাবে গ্যাস পাওয়া সম্ভব সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা হবে। জসিম উদ্দিন বলেন, গ্যাস সংকটের সমাধানে সহজ পদ্ধতি হলো, দাম বাড়িয়ে দেওয়া কিংবা আমদানি করা। কিন্তু এ পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। কারণ সরকারকে গ্যাস আমদানি করে তারপর বিক্রি করতে হয়। তবে গ্যাস আমদানির জন্য নতুন করে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

সভায় প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতি, রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন, স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন, সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইকোনমিক জোন ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন ও স্মল অ্যান্ড ক্যাপটিভ পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।