আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যই নির্ভর করে পুষ্টিকর খাবারের উপর। অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বাড়ে। তাই আপনি কী খাচ্ছেন তার উপর বিশেষ নজর রাখা জরুরি। তাছাড়া আপনি কোন খাবার খাচ্ছেন তা কিন্তু নির্ধারণ করে দেবে আপনি কেমন অনুভব করবেন। বিশেষজ্ঞরা এমনটাই বলছেন। আপনি নিশ্চয়ই মাঝে মাঝে শুনে থাকেন যে চকলেট মেজাজ ভালো রাখে। ঠিক তেমনই কার্বোহাইড্রেটও মেজাজ ভালো রাখতে পরিচিত।
খাবারে কিছু নির্দিষ্ট উপাদান থাকলে তা আপনাকে উচ্ছ্বসিত রাখতে পারে বলে জানান ভারতের জাসলোক হাসপাতাল এবং রিসার্চ সেন্টারের প্রধান ডায়েটিশিয়ান ডেলনাজ চান্দুওয়াদিয়া। তিনি বলেন, অনেক গবেষণায় খাদ্য এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে। তিনি কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন যা মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বাদাম
ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং চর্বি সমৃদ্ধ খাবার হলো বাদাম। এছাড়াও বাদামে থাকে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে তা বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বেল পেপার
বেল পেপার ভিটামিন এ-তে ভরপুর, ভিটামিন বি৬ এর একটি উৎস। এটি স্বাভাবিক মস্তিষ্কের বিকাশ এবং কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য পুষ্টি এবং শরীরকে সেরোটোনিন এবং নোরপাইনফ্রাইন (মেজাজকে প্রভাবিত করে) হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। আপনার প্রতিদিনের সালাদে রঙিন বেল পেপার রাখুন। রান্নার বদলে কাঁচা খেলে বেশি উপকার পাবেন।
পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি
পালং শাক, মেথিতে বি ভিটামিন ফোলেট থাকে। ফোলেটের অভাব সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং নোরাড্রেনালিন (মেজাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার) এর বিপাককে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই মেজাজ ভালো রাখতে সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি খান নিয়মিত।
ফার্মেন্টেড ফুড
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এ ধরনের খাবার। বাটারমিল্ক, আচার, দই জাতীয় খাবার প্রোবায়োটিকের সমৃদ্ধ উৎস। এগুলো আমাদের মেজাজকে ভালো রাখে।
ক্যাফেইন
ক্যাফেইন গ্রহণ করলে তা ডোপামিন নিঃসরণের মাধ্যমে আমাদের কর্মক্ষমতা এবং মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে। কফি খেলে যদি খিটখিটে, অনিদ্রা ইত্যাদি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে তা এড়িয়ে চলুন। এক্ষেত্রে ক্যাফেইনমুক্ত পানীয় যেমন গ্রিন টি বা রং চা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
কোকো বা ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে আছে উচ্চমাত্রায় ট্রিপটোফান যা আমাদের মস্তিষ্ক সেরোটোনিন তৈরি করতে ব্যবহার করে, এটি একটি নিউরোট্রান্সমিটার। সেরোটোনিন একটি মূল হরমোন যা আমাদের মেজাজ স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। তাই মেজাজ ধরে রাখতে চাইলে চকলেট খেতে পারেন। তাতে যেন অন্তত সত্তর শতাংশ ডার্ক চকলেট থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
গ্রিন টি
ক্যাটেচিন এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর গ্রিন টি। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে সতর্কতাও বাড়ায়। এটি আপনাকে শান্ত রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত গ্রিন টি পান করার অভ্যাস করুন।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার
এ ধরনের খাবারের একাধিক উপকারিতা রয়েছে। এটি একটি অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, ওজন কমাতে অবদান রাখে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, জয়েন্টগুলো ভালো রাখে। এটি হতাশা মোকাবেলায় সহায়তা করে। আমরা স্যামন মাছ, চিয়া বীজ, বাদাম ইত্যাদির মতো খাবারে ওমেগা ৩ খুঁজে পেতে পারি, এমনটাই বলেন ডেলনাজ চান্দুওয়াদিয়া।