১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৩১:১০ অপরাহ্ন


গণধর্ষণের মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী লাতু মিয়া গ্রেফতার
আবু হেনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২২
গণধর্ষণের মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী লাতু মিয়া গ্রেফতার গণধর্ষণের মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী লাতু মিয়া গ্রেফতার


ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ২০০৩ সালে মাকে বেঁধে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১৮ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি লাতু মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার  অলি নবী ওরফে লাতু মিয়া ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন নাজিরপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া), সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক।

তিনি জানান, সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারা যায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকা হতে ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ২০০৩ সালে মাকে বেঁধে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামী অলি নবী ওরফে লাতু মিয়া অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও জানান, গ্রেফতার লাতু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার সময়ে সোনাগাজী এলাকায় মোঃ ফারুক এর নেতৃত্বে সে, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেমসহ আরও অনেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রাম্য সালিশ বিচারে হস্তক্ষেপ, নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে অর্থ উপার্জন, ভূমি দখল, জলমহাল দখল, খাস জমি দখল, এলাকায় গ্রুপিং সৃষ্টি করে ফায়দা নেয়া, বিবদমান বিষয়ে উসকানী দেয়া, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির জন্য সশস্ত্র মহড়া দেয়া, অসহায় নারীদের উত্যক্ত করাসহ তারা নানা অপকর্ম করে বেড়াত। উক্ত ঘটনার ভিকটিমের পিতা শিশুকালে মারা যাওয়ার পর ভিকটিমের বিধবা মাতা অতি কষ্টে দিন যাপন করছিলেন। তারা বিভিন্ন সময়ে ভিকটিম ও তার মাকে কুপ্রস্তাব দিত। কিন্তু উক্ত কুপ্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে তারা চারজন মিলে উক্ত ঘটনা ঘটায়। ঘটনার পরদিন উক্ত ঘটনা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন জেল খাটার পর জামিনে বের হয়ে সে, জাহাঙ্গীর ও কাশেম পলাতক জীবন শুরু করে। কিন্তু উক্ত সময়ে উক্ত মামলার আসামী ফারুক নিয়মিত বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা দিত। জামিনে বের হওয়ার পর মামলা তুলে নেয়ার জন্য তারা ভিকটিম ও ভিকটিমের মাকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে।

আসামী লাতু মিয়ার জীবন বৃত্তান্তঃ গ্রেফতারকৃত লাতু মিয়ার কোন দৃশ্যমান পেশা নেই। সে নিরক্ষর। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। তার নামে ফেনী ফুলগাজী থানায় একটি ডাকাতি ও গণধর্ষণ মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে।

লাতু মিয়ার পলাতক জীবনঃ ২০০৩ সালে গণধর্ষণের ঘটনার পর তার পলাতক জীবন শুরু হয়। উক্ত ঘটনার পর সে চট্টগ্রামে গিয়ে রিক্সা চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। কিন্তু কোন কায়িক পরিশ্রম তার ভালো লাগত না। তারপর সে চুরি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে। একটি ডাকাতির ঘটনায় সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে। জামিনে বের হয়ে সে গোপনে তার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় অতিথি হিসেবে জীবন যাপন করত। সে মাঝে মাঝে তার নিজ বাড়িতে এসে গোপনে তার স্ত্রী সন্তানের সাথে দেখা করত এবং তাদের নিকট হতে অর্থ নিয়ে যেত। তারপর সে কিছুদিন সিলেটে মাজার এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। একপর্যায়ে সে ঢাকায় এসে হকার হিসেবে ফুটপাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রয় করত। উক্ত পেশায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়ার আশংকা থেকে সে দারোয়ানের চাকুরী নেয়। পলাতক সময়ে সে নিজেকে অলি নবী হিসেবে পরিচয় দিত। মামলার রায়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ হওয়ার পর সে ঢাকায় একটি মাজারে আত্মগোপন করে।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ীতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে বিধবা মা ও ১৩ বছরের মেয়েকে জোর করে টেনে হিঁছড়ে বাইরে নিয়ে এসে মাকে বেঁধে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে মায়ের সামনেই মেয়েকে লাতু মিয়া, ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেম মিলে গণধর্ষণ করে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে পরদিন সোনাগাজী থানায় মামলা নং-০৪ তারিখ-১৩/০৫/২০০৩ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধনী ২০০৩ এর ৯ (৩) ধারায় আসামী মোঃ ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মোঃ লাতু মিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ১৩ আগস্ট ২০০৩ বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে দীর্ঘ ১৯ বছর পর ১৪ জুলাই ২০২২ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালত জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মোঃ লাতু মিয়াসহ অভিযুক্ত তিন আসামীর বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামীকে ০২ লাখ টাকা অর্থদন্ড করেন এবং মোঃ ফারুকের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হওয়ায় খালাস প্রদান করেন।

গ্রেফতারকৃত আসামী লাতু মিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।