১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৪০:৫৬ অপরাহ্ন


গুমের তালিকায় গোঁজামিল, মন্তব্যে রাজি নয় ওয়ার্কিং গ্রুপ ডব্লিউজিইআইডি
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১০-২০২২
গুমের তালিকায় গোঁজামিল, মন্তব্যে রাজি নয় ওয়ার্কিং গ্রুপ ডব্লিউজিইআইডি গুমের তালিকায় গোঁজামিল, মন্তব্যে রাজি নয় ওয়ার্কিং গ্রুপ ডব্লিউজিইআইডি


গুমের তালিকায় গোঁজামিলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় জাতিসংঘের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (ডব্লিউজিইআইডি)। ই-মেইলের মাধ্যমে সংস্থাটি সময় সংবাদকে জানিয়েছে, গোপনীয়তার নীতির কারণে এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। যদিও জাতিসংঘের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে তালিকার পক্ষে সাফাই গেয়েছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)। বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মনে করেন, মানবাধিকারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এএইচআরসি।

জাতিসংঘের দেয়া গুমের তালিকায় বিদেশি নাগরিকের নাম আসাসহ নানা অসামঞ্জস্যের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সময় সংবাদ মেইল করে বাংলাদেশে অবস্থিত সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়ক গিন লুইসকে। বিষয়টি তাদের এখতিয়ারের বাইরে জানিয়ে জাতিসংঘের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

এবার গিন লুইসের পরামর্শে সময় সংবাদ ই-মেইল করে ডব্লিউজিইআইডিকে। মেইলের জবাবে তারা জানিয়েছে, গোপনীয়তা নীতির কারণে তালিকা নিয়ে তারা কোন মন্তব্য করবে না।

জাতিসংঘের গুম বিষয়ক কমিটি গোঁজামিলের তালিকা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ঠিকই সাফাই গেয়ে এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

সংস্থাটির দাবি, জোরপূর্বক গুমের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশে। গত ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়ানো বিতর্কিত এবং নিবন্ধন বাতিল হওয়া মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে এএইচআরসি।

বাংলাদেশে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, এই 'মানবাধিকার' যে একটা লেবাস পরেছে, পেছনে তাদের সত্যিকারের চেহারাটা কী সেটা প্রকাশ পেয়েছে। মানবাধিকারকে তারা একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। যেটা কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

জাতিসংঘকে সতর্ক করতেই তালিকার বৈসাদৃশ্য তুলে ধরা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ, এমনটা মনে করে আন্তর্জাতিক বিশ্ব।

দেশের কয়েকটি এনজিওর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গতবছর গুমের একটি তালিকা সরকারকে দেয় জাতিসংঘ। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গুম হয়েছে ৭৬ জন। সবশেষ সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ঢাকা সফরেও এ নিয়ে আলোচনা হয়।

সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ৭৬ জনের মধ্যে ১০ জনের খোঁজ মিলেছে; বাকিরা পলাতক বা নিখোঁজ রয়েছে। সংখ্যা বাড়িয়ে গোঁজামিলের তালিকা জাতিসংঘকে দিয়েছে এ দেশীয় কয়েকটি এনজিও। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।

জাতিসংঘের তালিকা পর্যালোচনা করে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তালিকায় থাকা একজন ভারতের নিষিদ্ধ সংগঠন উলফা নেতা সানায়া-ইমা-রাজকুমার ওরফে মেঘেন। জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় এ নাগরিককে ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাদা পোশাকে ঢাকা থেকে তুলে নেয় পুলিশ। অথচ ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তাকে গ্রেফতার করা হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। ভারতীয় আদালতের দেয়া ১০ বছর কারাভোগের পর ২০১৯ সালের শেষের দিকে দেশটির গৌহাটি কারাগার থেকে মুক্ত হন মেঘেন। অথচ তার ঘটনায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশে গুম হওয়া ভারতীয় আরেক নাগরিকের নাম রয়েছে জাতিসংঘের তালিকায়। তিনিও সশস্ত্র সংগঠন উলফা নেতা। বলা হয়, কেইথেল্লাক-পাম-নবচন্দ্র নামে এ ব্যক্তিকে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাদা পোশাকে তুলে নেয় বাংলাদেশের পুলিশ। অথচ ভারতীয় গণমাধ্যম বিএসএফের বরাত দিয়ে জানায়, ভারতে প্রবেশের সময় সিলেটের মেঘালয় সীমান্তবর্তী শহর ডাউকি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এবার ফিরে আসা যাক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা হাসিনুর রহমানের গুম নিয়ে। জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হন হাসিনুর। দেড় বছর নিখোঁজ থাকার পর আড়াই বছর আগে বাড়ি ফেরেন তিনি। এখন ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় তিনি। অথচ সেও আছেন জাতিসংঘের গুমের তালিকায়।